চলুন যাই লোভাছড়ায়

কেউ কেউ বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জনে ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্ত। আরেক দল মানুষ নাগরিক ব্যস্ততার একঘেয়েমি দূর করতে বেরিয়ে পড়েন দেশের কোনো পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশে। আর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া এমন একটি স্থান।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীবনসংগ্রামের করুণ চিত্র দেখে আসতে পারেন উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী উপজেলার পশ্চাৎপদ এই অঞ্চলে।

যা দেখবেন:

ওপারে ভারতের খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে এসেছে পাথর আর বালুময় একটি ছোট নদী। নাম লোভাছড়া। প্রতিবছর বর্ষার ঢলে এই ছড়াটি নিয়ে আসে হাজার হাজার টন পাথর আর বালু। তলদেশ থেকে শুরু করে একেবারে আনাচে-কানাচে পাথর আর পাথর। শুকনো মৌসুমের শুরুতেই সেখানে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। তোলা হয় টনকে টন পাথর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে অভাবী কিন্তু সাহসী শ্রমিকের দল। নেমে পড়েন পাথর তোলার কাজে। কখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বোমা মেশিন আর কখনো কখনো সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তুলতে শুরু করেন তাঁরা।

মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজটি করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বড় বড় গর্তের পাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে লাশ হতে হয় হতভাগ্য শ্রমিকদের। কিন্তু তবু কর্মযজ্ঞ থামে না। মহাজনের দেওয়া মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের লোভে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কাজ। গর্তের গভীরে নেমে কেউ তোলেন পাথর, আর কেউ সেটি পরিবহনের কাজ করেন। তাঁদের নাওয়া-খাওয়া, বিশ্রাম বা ঘুমানো—সবই কোয়ারিতে। বালুর ওপর ছোট ছোট খুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানেই থাকা-খাওয়া।

ছড়ার তলদেশ থেকে পাথর তোলা আইনত দণ্ডনীয়। অথচ নৌকা দিয়ে প্রচুর শ্রমিক পাথর তোলেন। এক ধরনের মেশিন চালিয়ে পানি সরানো হয়, তারপর মাছ ধরার মতো করে বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে পাথর তোলেন। এ ছাড়া মেঘালয় পাহাড়ের সৌন্দর্য দর্শনের পাশাপাশি ঘুরতে পারেন লোভাছড়া চা বাগান। নদীর ওপর ছোট ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে ওপারে গেলে গেলে হজরত শাহজালালের (রহ.) অন্যতম সহচর হজরত মীরাপিং শাহর মাজার, স্থানীয়ভাবে যা মোকামটিলা হিসাবে বিখ্যাত। গোটা এলাকায় চরম দরিদ্র মানুষের বাস, দেখলেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়।

আর বর্ষায় রীতিমতো মোহনীয় পরিবেশ। লোভাছড়া লেক, চা-বাগানের সবুজ ও বন বিভাগের বনায়ন মিলে অপরূপ রূপ মুগ্ধ করে পর্যটকদের। তা ছাড়া চা বাগানে তখন বনমোরগ, হরিণ, খরগোশ ও দেখা যায়। যেকোনো টিলায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড়ের সৌন্দর্যও।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় পৌঁছে যাবেন দক্ষিণ সুরমার কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে। এ ছাড়া বাসে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। কদমতলী থেকে বন্দরবাজার সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ যাওয়া যাবে একশ টাকার মধ্যে।

সেখান থেকে রিজার্ভ সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে কানাইঘাট উপজেলা সদরে যেতে খরচ পড়বে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা। যাওয়া যায় সিরিয়ালের অটোরিকশায়। খরচ জনপ্রতি ১০০ টাকা। তা ছাড়া ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে নগরীর সুবহানীঘাট বাসস্ট্যান্ডে গেলে কানাইঘাটগামী বাস পাচ্ছেন।

খরচ জনপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে লোভাছড়ার দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। কাঁচা রাস্তায় যেতে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে গেলে খরচ পড়বে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা। রিজার্ভ ছাড়া জনপ্রতি খরচ পড়বে ১০০ টাকা। যাওয়া যায় জলপথে, নৌকায়। জনপ্রতি খরচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা। আর রিজার্ভ নৌকা নিলে খরচ পড়বে ৯০০ থেকে হাজার টাকা।

যেখানে থাকবেন:

সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, মিরাবাজার দরগাহ গেট, আম্বরখানা এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলে থাকতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিলেটে বেশ কিছু অভিজাত আবাসিক হোটেলও আছে।

Share:

Leave a Comment