নীল জলের লালাখাল সাথে ৩৭ বাঘ এর খাদিমনগর যেভাবে যাবেন

রাতের ট্রেনে ৪ বন্ধু ২৬০ টাকা ভাড়ায় ঢাকা টু সিলেট যাই সকাল ৫ টায়। নেমে প্রতিজন ২০ টাকা ভাড়ায় সিনজি যোগে চলে যাই পাচ ভাই রেস্তরায়। ৫৫ টাকায় ভর পেট খিচুরি খেয়ে বাস ভাড়া ৪০ টাকা সারিঘাট হয়ে অটোযোগে ১৫ টাকায় লালাখাল পৌছাই সকাল ৯ টায়।
ঘন্টা প্রতি ৩০০ টাকা ট্রলার ভাড়া করে বের হয়ে যাই লালাখাল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ( ওরা অনেক ভারা চায় বারগেটিং করতে হবে, চাইলে ২০০ তেও করতে পারবেন। আমদের একজন ভুলে ২ ঘন্টা ৬০০ বলে ফেলায় আর কিছু করার ছিলনা। ট্রলার গুলোতে ১০ জন বসতে পারবেন )
লালাখাল এর পানিতে গোসল করতে পারবেন। কিন্তু ওদের দেখানো যায়গায় নামবেন। কারন লালাখালে অনেক চোরাবালি আছে।
লালাখাল ঘুরাঘুরি করে ১২ টার একটু পরে বের হয়ে যাই খাদিমনগর ফরেস্ট অফিস এর উদ্দেশ্যে। সারিঘাট থেকে জনপ্রতি ৩০ টাকা বাস ভাড়ায় আসতে হবে শাহপরান।

শাহপরান থেকে ২০০(৪ জন) টাকা ভাড়ায় সিএনজি তে ১ ঘন্টার পথ খাদিমনগর ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত। পাহাড় কাটা মাটির পথ ধরে যেতে যেতেই মাঝপথে সিএনজি নষ্ট হয়ে গেলো। প্রায় আধা ঘন্টা ট্রাই করেও সিএনজি ঠিক করা গেলোনা। রাস্তা ধরে হেটে গেলে তখনো ৭ মাইল। স্থানীয়রা এই পথকে বাগান পথ বলে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এদিকে রাস্তায় একটাও মানুষের নাম গন্ধ নেই। একটু আগেও জঙলে কাজ করা কিছু মানুষ যাচ্ছিলো সামনে দিয়ে। নেটওয়ার্ক নেই, কোথায় যাবো কি করব ভাবতে ভাবতেই ২ জন কে পেলাম। উনারা আমাদের জঙলের পথ দেখিয়ে বলে এদিক দিয়ে গেলে তারাতারি হবে। আর কোন পথ না দেখে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ এর সাইনবোর্ড টপকেই জঙল দিয়ে হাটা শুরু করলাম। অন্ধকার নেমে আসছে। কিন্তু এই ঘন জঙলে যেন আরো তারাতারি অন্ধকার নেমে এসেছে। অচেনা সব পাখির ডাক আর শুখনো পাতার উপর হাটার শব্দে ভালই লাগছিল হাটতে।কিন্তু প্রায় ১ ঘন্টা হাটার পরো মানুষের দেখা না পেয়ে চিন্তায় পরে যাই। প্রায়ই ভাবছিলাম ১৬৭৭ একর এর জঙলে পথ হারালামনাতো? এদিকে মাঝে মাঝেই জঙল এর ভিতর কিছু একটা দৌড় দিচ্ছে। কিছু না ভেবেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে হেটেই চলেছি। মাঝ পথে ভাঙা সাকু দেখলেও যেন শান্তি পাচ্ছিলাম। এইতো লোকালয়ে এসে পরেছি মনে হয়। হঠাৎ ই মাথার উপর বাশ গাছ গুলোতে বানর এর লাফালাফি দেখে একটু থেমে গেলাম। আমাদের থেমে যাওয়াটা যেন তারা বুঝতে পেরেছে। তারাও চুপ করে বসে আছে। সেখানেই কিছুখন বসে আবার হাটা শুরু করলাম। তার ২০ মিনিট পরই খুজে পাই ফরেস্ট অফিস। সে এক অসাধারন মুহুর্ত।
কিন্তু তখনো জানতামনা কি শুনতে চলেছি আমরা।

জঙলের গল্প শুনতে ভালোই লাগছিল স্থানীয় থেকে। ৮৩ প্রাজাতির প্রাণী আর ২১৭ প্রজাতির গাছ আছে এ ফরেস্টে। ভালোই লাগছিল যতক্ষন না পর্যন্ত শুনলাম চার পাঁচ মাস আগে গাছ চুরি করা রোধ করতে জঙলে ৩৭ টি বাঘ ছাড়া হয়েছে।
এরপর থেকে রাত টা তাবুতে একটু ভয়েই ছিলাম।

টেন্ট ফরেস্ট অফিসেই ভাড়া দেয়। প্রতি টেন্ট ৫০০ করে ২ জন থাকা যায়। বর্ষায় ৩০০।
রাতের আর দুপুরের খাবার খাদিমনগর এই খেয়েছি।
দুপুর/রাত খাবার প্রতি ১২০ টাকা করে( ভাত,ভুনা ডাল,ভর্তা,মুরগি)
আমাদের ট্রেকিং টা না চাইতে হলেও আপনি চাইলে জঙলে ট্রেকিং করতে পারবেন। গাইড ঘন্টা প্রতি ১০০ করে।
থাকা খাবার জন্য আগে থেকেই বুক দিতে পারেন। (কাদের ভাই 01737853713) আছে সবকিছুর দায়িত্বে।

জঙ্গলে রাত টা খুব সুন্দর কেটেছে। আমরা ৪ বন্ধু আর সাথে ছিল বানর, পেঁচা, শেয়াল, আর অগনিত ঝি ঝি পোকার ডাক।

source:  Rbh Shornab‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment