দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভ্রমন যাত্রা
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অামাদের দীর্ঘ এক মাসের পরিকল্পনা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।অনেক বার সাগর বা পাহাড়ে যাওয়া হইছে তাই এবার অামাদের ইচ্ছা ছিল সমতল ভূমি ভ্রমণ করা। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম রাজশাহী বিভাগ ঘুরতে যাব সাথে খুলনা বিভাগের দুইটা জেলা।
দশদিনে মেহেরপুর> কুষ্টিয়া> পাবনা> নাটোর> রাজশাহী> নওগাঁ> বগুড়া ভ্রমণের আদ্যোপ্রান্ত নিন্মরুপঃ
আমরা তিনবন্ধু রওনা হই চট্রগ্রাম থেকে।
২২-০২-২০১৯ তারিখ রাত দশটার বাসে চট্রগ্রাম হতে ঢাকা পৌছি ভোর ৪টায়। বাস থেকে নেমে নাস্তা করে চলে যাই বন্ধুর বাসায়, ক্লান্ত শরীরে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিজেকে সতেজ করে নিই কারণ সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ যাত্রার গ্লানি।
দুপুরের চলে যাই একুশে বইমেলায়। ওখানে কয়েকে ঘন্টা ঘুরে সন্ধায় রুমে এসে বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দিতে দিতে রাতের খাবার সেরে নিই।
রাত ৮ টায় উবারে করে চলে যাই ঢাকার কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড। শ্যামলীর ৯টার মেহেরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে নিলাম ভাড়া=৪৫০ (জনপ্রতি)।
মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা নদী পারাপার হয়ে দুইভাবেই যাওয়া যায়।যারা ফেরী পারাপার হয়ে যাবেন তারা বাস পাবেন গাবতলী থেকে।
২য় দিন-
ভোর ৫টায় পৌঁছে গেলাম মেহেরপুর।বাস কাউন্টারে কিছুক্ষন বসে সকাল হওয়ার পর সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।তারপর অটো করে চলে গেলাম মুজিবনগর ভাড়া জনপ্রতি ৪০।
মুজিবনগর (পূর্বনাম: বৈদ্যনাথতলা)
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ছিল এখানে। এখানেই তৎকালীন বৈদ্যনাথতলা বর্তমান মুজিবনগরের আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল সরকারের মন্ত্রী পরিষদ শপথ নিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাজধানীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।মুজিবনগর হতে ভ্যান করে চলে যাই হৃদয়পুর বর্ডার। ঐখানে দেখার মত কিছু নাই। মুজিবনগর থেকে বাহির হয়ে অটোরিকশা করে চলে যাই অামঝুপি নীলকুঠি। ভাড়া ৫০।
বৃটিশ আমলে নীল চাষের উদ্দেশে ইংরেজরা ৭৪ একর জমির ওপর কালের স্বাক্ষী মেহেরপুরের ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি গড়ে তোলে।
নীল চাষ অত্যধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে এখানে নীল চাষ শুরু হয়। ১৮১৮ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মেহেরপুরর বেশ কয়েকটি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। তন্মধ্যে আমঝুপি, গাংনীর ভাটপাড়া, বামন্দি নীলকুঠি অন্যতম।অামঝুপি নীলকুঠির পাশেই রয়েছে অপরূপ কাজলা নদী। কথিত আছে রবাট ক্লাইভ প্রায়ই সময় কাটানোর জন্য আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন ।১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ইংরেজরা চলে যাবার সময় পূর্ব পাকিস্থানের (বাংলাদেশ) সরকারের কাছে কাছে হস্তান্তর করে যায়।
নীলকুঠি ঘুরে অটো করে চলে যাই মেহেরপুর সদর। ভাড়া ২০। বাজারে নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে কুষ্টিয়াগামী উঠে যাই। ভাড়া ৯০।
২ঘন্টার মত লাগে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া আসতে।
মজমপুর নেমে অটো করে চলে যাই ছেউড়িয়াতে। এখানেই লালনের আখড়া।সন্ধা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে
অটো করে চলে অাসি চৌড়হাস মোড়, ভাড়া ১৫।এবার অামাদের গন্তব্য কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
৩০ টাকা দিয়ে বাসের টিকিট কেটে ৪০ মিনিটে পৌঁছে যাই বিশ্ববিদ্যালয়।
তারপর ফ্রেশ হয়ে পুরো ক্যাম্পাটা ঘুরে দেখি।ক্যাম্পাটা আমাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে সবকিছু সাজানো গোছানো। রাতের খাবার খেয়ে তারপর শান্তির ঘুম।
৩য় দিনঃ
সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা করে ক্যাম্পাসে অারো কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে বাসে করে চলে অাসি চৌড়হাস মোড়। এবার যাব শিলাইদহ কুঠিবাড়ী। শিলাইদহ যেতে হলে চৌড়হাস মোড় থেকে প্রথমে সিএনজি করে যেতে হবে অালাউদ্দীন মোড়, ভাড়া ১৫।
ঐখান নেমে অাবার সিএনজি করে যেতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, ভাড়া২০।
কুঠিবাড়ী ঘুরা শেষ হলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ভ্যান পাবেন তিন জায়গা পদ্মার পাড়, রবিঠাকুরের কাচারি ঘর,পাঁচতলা কাঠের বাড়ি। ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।
যেখান থেকে ভ্যানে উঠবেন তিন জায়গা ঘুরিয়ে অাবার সেই যায়গায় নামিয়ে দিবে।
কুঠিবাড়ী থেকে অালাউদ্দীন মোড় চলে অাসুন।এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেন।
তারপর ভ্যান করে চলে যান বিশ্বের অন্যতম ট্রাজেডি গ্রন্থ ‘বিষাদসিন্ধুর’ রচয়িতা মীর মশাররফের জন্মভিটা ও স্মৃতি জাদুঘর, ভাড়া ১৫।এখানে ঘুরা শেষে ভ্যানে করে চলে যান কুষ্টিয়া শহরে, ভাড়া ১০।
শহর থেকে রেনউক বাধ চলে যান এটা কুষ্টিয়া শহরের খুব কাছে হেটে যাওয়া যায় অটোতে ৫ টাকা।
অাসার সময় কুষ্টিয়া পৌরসভা ঘুরে আসুন।
তারপর হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে যান রাতের কুষ্টিয়া শহর দেখার জন্য।
অামরা সরকারি কলেজ,পার্ক,রেলস্টেশন,মেডিকেল অাশপাশে ঘুরছিলাম।
অাজ অার ঘুরাঘুরি না করে রাতের খাবার খেয়ে নিই। এরপর শান্তির ঘুম।
একদিনও হোটেলে ছিলাম না তাই হোটেল ভাড়া সম্পর্কে বলতে পারলাম না।
তবে ৫০০-১০০০ টাকায় ডাবল বেডের রুম পেয়ে যাবেন।
খরচ একটু কমবেশি হতে পারে,খাবার প্রতি বেলা ৭০-৮০ টাকায় খেতে পারবেন।
লেখারকিছু তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
source: Jisan Ahmed <Travelers of Bangladesh (ToB)