কল্যানপুর, পাবনা যেভাবে যাবেন ও খরচ
কল্যানপুর পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ৫০ বছরের আগে জেগে ওঠা চরের একটি গ্রাম। যেই গ্রামে কিছুটা হলেও আপনি পূর্বের বাংলাদেশ এর একটা আচ পাবেন। মানুষের জীবনযাত্রা আচরণ সবকিছুই।
প্রথমেই এ গ্রামে যেতে ঢাকার উত্তরা থেকে সকাল ৭ টায় জনপ্রতি ২৫ টাকা ভাড়ায় যাই নবিনগর। নবিনগর বাস স্টান্ড থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় যাই আরিচাঘাট। সময় লাগবে ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা। মনে রাখবেন ১২ টার মধ্যেই আড়িচাঘাট পৌছাতে হবে। কারন ঘাট থেকে কল্যানপুর এর উদ্দেশ্যে একটি নৌকাই ছেড়ে যায় ১২ টায়। আরিচাঘাট থেকে কল্যানপুর নদী পথে সময় লাগবে ২ ঘন্টা। গুনতে হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে। আমরা প্রায় ২.৩০ টার মধ্যেই কল্যানপুর পৌছে যাই। সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে আর নদীর মাঝের দৃশ্য দেখতে দেখতে যে কখন পৌছে যাই খেয়াল করিনি।
কল্যানপুর নামতেই প্রথমে যা নজর কারবে তা হলো ঘোড়ার গাড়ি। এই চরে যান বলতে আছে শুধু ঘোড়ার গাড়ি আর নৌকা। চরে নেমেই দেখা হয় ঢাকা থেকেই কথা বলে যাওয়া সাইফুল ভাইয়ের সাথে। ভাই আমাদের তার বাসায় নিয়ে যায়। তার আপ্যায়ন করা খাবার খেয়ে যাই বাজারের দিকে। বাজারে ঢুকতেই মানুষ আমাদের ঘিরে ধরে। কারন এর আগে এই চরে কোন টুরিষ্ট আসেনি। গ্রামের প্রধানও আমাদের সাথে কথা বলে যায় এবং আপ্যায়ন করে। আমাদের হাল্কা গ্রামে ঘুরানোর পর চলে যাই বাজার করতে। কারন চরে কোন ভাত খাবার হোটেল নেই।
বাজার করেই সাইফুল ভাইয়ের জোরাজোরি তে ঠিক হয় উনার বাসায় রান্না হবে। বাজার থেকে একদল চলে যাই রান্নার কাটাকাটির জন্য আর একদল চলে আসি ক্যাম্প সাইড ঠিক করে তাবু পিচ করতে। সব শেষ করে শেষ বিকালে সবাই মিলে নদীতে গোসল করে রান্না না পারা দল থেকে যাই ক্যাম্প সাইডে আর বাকিরা চলে যায় রান্না করতে। প্রায় রাত ৯ টায় সবাই খেতে চলে যাই। টর্চ এর হাল্কা আলোয় উঠানে বসে রাতের খাবার খাই। কারন ওই গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ এর ছোয়া পরেনি। অনুভূতি ছিল অসাধারন। তারপর শুরু হয় রাতের আড্ডা গান।
গ্রামবাসি আমাদের খুব ভালো ভাবেই আপ্যায়ন করেছিল। কিছুক্ষন পর পরই কেও না কেও এসে দেখে যাচ্ছিলো। এছাড়াও ঝড় আসতে পারে এই ভয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ছিলো আমাদের জন্য খোলা। রাতে নিয়ন আলোয় নদীতে মাছ ধরাও যে আপনার মন কারবে তা বলে দিতে পারি। ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ২.৩০ টা বেজে যায়। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙে প্রচুর ঠান্ডায়। ৩ টা থেকেই ঠান্ডা অনুভব করতে পারছিলাম। ভোরে তাবু থেকে বের হয়েই দেখি চারদিক কুয়াশায় ভরা। এপ্রিলে এই দৃশ্য যে কাওকেই অবাক করবে। একটু হাটাহাটি করেই ক্যাম্প সাইডে এসে সব গুছিয়ে নেই। কারন কল্যানপুর থেকে আরিচাঘাট এর নৌকা ছাড়ে ৯.৩০ টায়। আমরাও বিদায় দিয়ে দেই চর টাকে। বাকি অনুভূতি গিয়েই না হয় বুঝলেন।
আমাদের ঢাকা টু ঢাকা জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৬৪৪ করে।
খরচ:
উত্তরা – নবীনগর- ২৫+২৫= ৫০
নবীনগর- আরিচাঘাট- ৫০+৫০= ১০০
আরিচাঘাট – কল্যানপুর- ৫০+৫০=১০০
খাবার খরচ আপনার উপর।
সতর্কতা:
*চরে বিদ্যুৎ নেই তাই অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক এবং লাইট নিয়ে যাবেন।
*চরের প্রধান এর সাথে কথা বলে নিবেন।
* নদী থেকে নিরাপদ দূরত্তে তাবু পিচ করবেন।
* খুব বেশি হইচই করবেন না।
*অপরিচিত চর তাই পারলে চরের কাওকে সাথে থাকার জন্য রাজি করবেন।
* টয়লেটের জন্য চর এর মানুষের সাহায্য নিন। আগেই বলে রাখি সবার টয়লেটই কাচা।
* খুবই সুন্দর আর পরিষ্কার এই চর। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। আমরা একটা পলিথিনো ফেলে আসিনি। সব নিয়ে এসেছি।
Source: Rbh Shornab <Travelers of Bangladesh (ToB)