পাকইয়ং ইয়াকতেন যেভাবে যাবেন ও খরচাবলি
দমবন্ধ করা ভিড়, হইচই ইত্যাদি থেকে দূরে গিয়ে নির্জন, নির্মল পরিবেশে বসে হিমালয়ের অপার শোভা উপভোগ করা যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে চলে আসুন এই জায়গায়। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী রাস্তা ধরে গিয়ে রানিপুল থেকে (এখান থেকে গ্যাংটক মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে) ডানহাতি রাস্তায় ঘুরে যান। কিছুটা এগোতেই পৌঁছে যাবেন সারামসা উদ্যানে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো বিরাট এক উদ্যান, দেখবার মতো। সারামসা উদ্যান দেখে সিকিমের একমাত্র বিমানবন্দরের (পাকইয়ং-এ নবনির্মিত এই বিমানবন্দর এই বছরই শুরু হয়ে যাবে বিমান চলাচল, তখন পাকইয়ং-এর গুরুত্বও বেড়ে যাবে বহুগুণ) কাছ দিয়ে পৌঁছে যান পাকইয়ং। রানিপুল থেকে দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার এবং এনজেপি থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার।
ঝান্ডিদাঁড়ায় আপনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলবে কাঞ্চনজঙ্ঘা
৪৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাকইয়ং এক অপার শান্তির জায়গা। প্রাণভরে শ্বাস নিন। হোমস্টে-তে রাত্রিবাস। অন্তত দুটো দিনের অবকাশ রাখতেই হবে ঠিক ভাবে দেখার জন্য। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই ইয়াকতেন গ্রাম। এখানেও আছে বেশ কিছু হোমস্টে। ইয়াকতন থেকে পায়ে হাঁটা(আড়াই কিলোমিটার) চড়াই পথ ধরে ঘুরে আসুন ঝান্ডিদাঁড়া (উচ্চতা ৬৭০০ ফুট) থেকে ৪০-৪৫ মিনিটের মোটামুটি আরামদায়ক হাঁটার (ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে) শেষে ঝান্ডিদাঁড়া পৌঁছে পুলকিত হয়ে উঠবে মন। পাহাড়ের শীর্ষে ছোট্ট এক পাথুরে অবস্থানে দাড়িয়ে চারধারে ৩৬০ ডিগ্রী ব্যাপী দৃশ্য উন্মুক্ত হয়ে যাবা চোখের সামনে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, রাথং, কুম্ভকর্ণ সহ-অন্যান্য তুযারশৃঙ্গরাজির নয়নাভিরাম দৃশ্য তো আছেই, সঙ্গে আছে নাথুলা অঞ্চলের তুষারশৃঙ্গ, রোচেলা টপ (যেটি অতিক্রম করে ভুটান যাওয়া যায়), টেমিটি গার্ডেন, কালিম্পং পাহাড় ইত্যাদি জায়গার চোখজুড়ানো ছবিও। ছেড়ে আসতে মন চাইবে না। সূর্যোদয়ের সময় এক অসাধারন দৃশ্যের অবতারণা হয় এখানে।
ইয়েকতেন থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে বোজেটার গ্রামটিও ঘুরে নিন এই যাত্রায়। পাইন আর পিপলি গাছে ছাওয়া ‘ওয়েসিস অব পিস পার্ক’ বা (শান্তিবন উদ্যান) মনকে সত্যিই শান্তি দেবে। পাশেই আছে এক বহু প্রাচীন গুহা ও চমৎকার এক ভিউ-পয়েন্ট। এখানে থেকে তুষারশৃঙ্গের দৃশ্য যেমন চমৎকার দেখায়, তেমনি ভালোলাগে উল্টো দিকের পাহাড়ে লেপটে থাকা পুরো গ্যাংটক শহর ও রুমটেক গুম্ফার মিনিয়েচার ছবি।
উৎসাহী পর্যটকেরা পাকইয়ং বাজারের কাছে দেখে নিতে পারেন সেরেনডিপিটি মিউজিয়ামটি। ২০০ বছরের প্রাচীন এক কাঠের বাড়িতে সযত্নে রক্ষিত আছে প্রাচীন মুদ্রা, দুস্প্রাপ্য চিঠি ও ছবি, অস্ত্রশস্ত্র, লন্ঠন, মূর্তি, ক্যামেরা, স্ট্যাম্প ইত্যাদি। এগুলির বেশিরভাগই সিকিম রাজাদের সময়কালের জিনিস।
পাহাড়ি ভালবাসা
যাত্রাপথ:
নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন ১২০ কিলোমিটার দূরে পাকইয়ং-এ। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। দূরত্ব কিছুটা কমাতে চাইলে রংপো থেকে গ্যাংটকের মূল রাস্তা ছেড়ে ডানহাতের রাস্তায় ঢুকে রোরাথাং হয়ে পৌঁছতে পারেন পাকইয়ং, তবে এক্ষেত্রে সারামসা উদ্যান কিন্তু সেই পথে পড়বে না। আর কম খরচে আসতে চাইলে গ্যাংটকগামী বাস (ভাড়া ৯০ টাকা) বা শেয়ার জিপে রানিপুল পৌঁছে (ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা) সেখান থেকে শেয়ার (ভাড়া ৬০ টাকা) গাড়িতে পৌঁছতে পারেন পাকইয়ং। গ্যাংটক থেকেও আসা যেতে পারে ২৮ কিলোমিটার দূরবর্তী পাকইয়ং-এ।
রাত্রিবাস:
ইয়াকতেন-এ বেশ কিছু হোমস্টে আছে থাকার জন্য। তবে একটু ভালো মানের, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জায়গায় থাকতে চাইলে পাকইয়ং-এর ‘অ্যালপাইন রিট্রট’-এ রাত্রিবাস করা যেতে পারে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা (মাথাপিছু, খাওয়া-থাকা সমেত)। হোমস্টেগুলিতে খাওয়া-থাকা নিয়ে মাথাপিছু ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। যাতায়েত ও থাকার জন্য যোগাযোগ:
প্রহ্লাদ প্রধান(পাকইয়ং):৮৩৪৮৮-১৩৮৪৫, ৮১১৬১-০৭০৭১