ঝর্ণার দুধসাগরে মুগ্ধতার অপরূপ সমারহ

পাহাড়ি এবড়ো-থেবড়ো রেলট্র্যাকের ১২ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে আপনি যখন দেখা পাবেন এই উদ্ভিন্নযৌবনার তখন আপনার অভিব্যক্তিটা হবে ঠিক এরকমই।
বলছিলাম উচ্চতার দিক থেকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ ঝর্ণা দুধসাগরের কথা। বাঙ্গালীদের কাছে ভারতের উত্তর দিকটা যত জনপ্রিয় দক্ষিণ ততটা নয়। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চলও ভরপুর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে। অনেকটা স্রোতের বিপরীতে গিয়েই গত বছরের ঠিক এমন সময়টাতে আমরা রওনা হয়েছিলাম দক্ষিণ ভারতের দিকে। কেরালায় ৫ দিন আর দক্ষিণ গোয়ায় ১ দিন ঘোরাঘুরি শেষে আমাদের সম্পূর্ণ একটি দিন বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র এই দুধসাগরের জন্য। চিরসবুজ বনের মাঝ দিয়ে যাওয়া দুধসাগর ঝর্ণায় যাওয়ার এই ১০ কিঃমিঃ ট্রেককে গণ্য করা হয় “Lifetime Achievement” হিসেবে। ট্রেক ছাড়াও এই পথ পাড়ি দেয়ার জন্য রয়েছে জীপ সাফারির ব্যবস্থা। জীপ সাফারিতে শারীরিক শান্তি মিললেও মনের শান্তিটা ঠিক মেলে কিনা তা আমার জানা নেই। তাই ট্রেক/ হাইকের মনস্থির করেই আমরা রওনা হই। আমাদের পুরো ট্রেক অভিজ্ঞতা, ট্রেকের সৌন্দর্যের অংশবিশেষ আর খরচের হিসাব দেখে নিতে পারেন

এখান থেকেঃ
বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) এই পথটি সম্পূর্ণরুপে বন্ধ থাকে। তথ্যে অপর্যাপ্ততা থাকায় এই খবরটা আমরা পাই Kulem অর্থাৎ ট্রেকের দ্বারপ্রান্তে এসে। তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পাওয়া গেল বিকল্প রাস্তার খোঁজ। বনের পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে ট্র্যাকটি চলে গেছে ঝর্ণার উপর দিয়ে। আক্ষেপ একটাই ২ কিঃমিঃ ঘুরপথের এই রাস্তা আমাদের নিয়ে যাবে ঝর্ণার উপরের স্টেপে।
শুরুতে রেলট্র্যাকের পাশে পায়ে হাঁটা পথ থাকলেও কিছুদূর গিয়েই সেই পথের শেষ। বাধ্য হয়েই তাই উঠে আসতে হোল রেলট্র্যাকে। রেলওয়ে ট্র্যাকের এবড়ো-থেবড়ো পাথরে হাঁটার থেকেও চালেঞ্জিং বিষয় হল বিষ্ঠা এড়িয়ে চলা। একটু অসাবধান হলেই ধরা !!!!

রেলের এই ট্র্যাকটি প্রায় বনের ট্র্যাকের সমান্তরালেই এগিয়েছে। তবে প্রথম ৫ কিঃমিঃ পথে এই দুটোর মাঝে বাধা হয়ে থাকে নদী। নদীটা পাড় হবার পরপরই নেমে যাওয়া যায় বনের পথে। এবং সেখানে নামা মাত্রই আমরা উপলব্ধি করলাম কেন এটাকে বলা হয় “Lifetime Achievement” হিসেবে। চারপাশের সবুজ বন, ঝি ঝি পোকার অবিশ্রান্ত ডাক, নাম না জানা পাখির কলকাকলি আর পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী। নাগরিক কোলাহলের বাইরে গিয়ে আত্মাকে একটু প্রশান্ত করতে আর কিইবা চাই ??

বিগত বছরগুলোতে বর্ষাকালে এই ঝর্ণার লোয়ারস্টিমে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কিছু পর্যটক। এরপর থেকেই শুধুমাত্র বর্ষাকালের জন্য এই ট্রেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং তা পালনও করা হয় বেশ কঠোরভাবে। তাই বনের পথে ১.৫ কিঃমিঃ যাওয়ার পরই বনরক্ষীদের অনুরোধে (দাবড়ানিতে) উঠে আসতে হয়ে সেই রেলট্র্যাকে। তবে এই রেলওয়ে ট্র্যাকে অ্যাডভেঞ্চার যোগ করেছে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যাওয়া টানেলগুলো। প্রায় নিশ্ছিদ্র অন্ধকার টানেলগুলো পাড় হবার সময় কাজ করে অদ্ভুত অনুভুতি। প্রায় ঘণ্টাতিনেক হেঁটে আর ৪-৫টা টানেল পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা পৌঁছলাম এই অপরূপ সৌন্দর্যের সামনে।
যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে কোলকাতা হয়ে গোয়া পৌঁছাতে ট্রেন-বাস-বিমান সব ব্যবস্থাই আছে। দক্ষিণ গোয়া থেকে লোকাল ট্রেন কিংবা বাসে করে যেতে হবে কুলেম ষ্টেশন। ষ্টেশনের এই রেলট্র্যাক ধরে এগোলেই পৌঁছে যাবেন দুধসাগরে। তবে বনের পথে ট্রেক করতে চাইলে ষ্টেশন থেকে বামপাশের রাস্তা ধরে সামনে যেতে হবে।

বিঃদ্রঃ দেশে কিংবা বিদেশ যেখানেই ঘুরে বেড়াই না কেন আমাদের কারণে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরই।

Source:  Safayet Hossain‎ <Travelers Of Bangladesh (TOB)

Share:

Leave a Comment