১টি ট্রিপ,১৫ দিন,৪টি দেশ ভ্রমণ
প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি কথা গোছালো ভাবে লিখতে পারি না।
তাই যতটুকু পারি,চেস্টা করছি শেয়ার করার।
অনেক দিন ধরেই প্ল্যান করছিলাম সিংগাপুর, মালেশিয়া যাওয়ার জন্য। একদম ব্যাকপ্যাকিং স্টাইলে,খুব কম খরচে এবং প্রধান উদ্দেশ্য পাসপোর্ট এ স্টাম্প নেয়া। বলে রাখা ভালো আমার এর আগে বিদেশ বলতে শুধু মাত্র ইন্ডিয়া আর নেপাল যাওয়া পর্যন্তই এর বেশী কখনো সাহস করতে পারি নি।
তো ভিসা করতে দিলাম একটি এজেন্সীর কাছে,ডকুমেন্ট যা চাইলো সবই দিলাম।
এরপরই এয়ার ফেয়ার নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম কিভাবে কমে পাওয়া যায় টিকেট।অনেক খোজাখুজির পর কোন ভাবেই কমে পাচ্ছিলাম না।পরে কিছুটা ঘাটাঘাটি,সময় এইদিক ও দিক করে দেখি অনেক কম এ এয়ার ফেয়ার হয়ে যায়। তবে আমি যদি কলকাতা হয়ে যাই, তাহলে যে টাকা বাচবে তাতে আমার ইন্ডিয়া সফরও হয়ে যায়।আর এমনিতেও কিছু দিন পর আমার সারনাথ ও কুশিনগর যাওয়ার ( বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য তীর্থস্থান)। বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে তাই এইটুকুও এড করে নিলাম।
ভারত পার্ট :
প্রথমে ঢাকা থেকে সফর শুরু করে গেলাম কলকাতায়। সেখানে লোকাল স্পট ( পার্ক এবং মাদাম তুসো জাদুঘর) দুটি ঘুরে পরের দিন গেলাম বারানসীর সারনাথে। সেখানে লোকাল স্পট বিভিন্ন ঘুরে তার পরের দিন চলে যাই কুশীনগর। বলে রাখা ভালো স্পট গুলো ছিলো গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবিজিরত জায়গাসমূহ এবং দুইটি জায়গাই খুবই গরমের।
সেখান থেকে এর পরদিন বারানসী ঘুরে চলে আসি কলকাতায়। সেই রাতেই কলকাতা থেকে চেপে বসি সিংগাপুরের উদ্দেশ্যে।
সিংগাপুর পার্ট :
সিংগাপুর দেশটুকু ছোট হলে কি হবে, সম্পূর্নরুপে সাজানো গোছানো। ওদের এয়ারপোর্টই বলা যায় একটি ট্যুরিস্ট স্পট!যদি ঠিকমতো এয়ার্পোট ঘুরেন,শপিং মল গুলোয় ঢু মারেন তাহলেই বলা যায় ১ দিন চলে যাবে। ডিজিটালাইজড পুরোপুরি। ইমিগ্রেশন এ তেমন একটা ঝামেলা হয় নি। কিছু বেসিক প্রশ্ন করে সিল দিয়ে স্বাগতম জানালেন তাদের দেশে।এয়ারপোর্টেই একটি ইন্টারনেট সিম নিয়ে নিলাম ৩২ সিংগাপোরিয়ান ডলারে যেটা আমাকে মালেশিয়া,সিংগাপুর,ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে কানেক্টেড রাখবে ১৫দিনের জন্য।
দুপুরের মধ্যে ডিকশন রোডের একটি হোটেল এ পোছে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হোটেল এ চেক ইন করে বের হয়ে পড়ি আসপাশে খাবার এবং কম খরচে বাকিদিনের জন্য হোটেল খুজতে। বের হতেই মোটামুটি বুঝতে পারলাম ইন্ডিয়া,পাকিস্তানি,বাংলাদেশী ভরা একটি এলাকায় উঠেছি। একটু হাটাহাটি করতেই ইন্ডিয়ান মালিকানাধীন একটি হোস্টেল পেয়ে গেলাম খুবই কম দামে।
পরের দুই দিন এর জন্য বুক করে মতিঝিলের সুনামধন্য হীরাঝিলের সিংগাপুর শাখায় খাবার সেরে নিলাম।
খেয়ে চলে গেলাম ” Garden by the bay ” নামক স্পটে।সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও উদ্ভিদের সমাহার যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। সেখানে ঘোরাফেরা করে রাতে ফিরলাম রুমে। পরের দিনের প্ল্যান করলাম রিসোর্ট সানটোসা ঘোরার। সেখানে ইউনিভার্সাল স্টুডিও ও সি ওয়ার্ল্ডে ঘুরতেই দিন শেষ হয়ে গেলো।
পরের দিন জুরান বার্ড পার্ক এ পাখিদের সমাহার দেখার পর গেলাম মার্লিন বে তে। সন্ধ্যার মনোমুগ্ধকর লাইটের খেলায় এই দিন সমাপ্ত হয়।
রুমে গিয়েই গুছগাছ করে পরের দিন ইন্ডোনেশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
ইন্ডোনেশিয়া পার্ট :
ইন্ডোনেশিয়ার বিন্টান নামের একটি আইল্যান্ড আছে যেটা কিনা সিংগাপুরের একদমই কাছে! ফেরীতে মাত্র ১ ঘন্টা লাগে। তাই প্ল্যানে একটা রাত থেকে পাসপোর্ট এ স্টাম্প নেয়াই ছিও মূলত উদ্দেশ্য। তবে দ্বীপটি এত্ত বেশী সুন্দর হবে ভাবি নি।বিন্টান এ ৩ টি ফেরীঘাট রয়েছে তার মধ্যে ১টি শুধুমাত্র রিসোর্টে আসা ট্যুরিস্টদের জন্য বানানো।প্রতিটি রিসোর্টেরই কমপ্লিমেন্টারি ফেরী ঘাট থেকে আপ – ডাউন এর ব্যাবস্থা আছে।এমনকি দ্বীপটির একপাশে শুধুমাত্র রিসোর্ট রয়েছে,পুরো এলাকাটি মূল শহর থেকে আলাদা করে গড়া ও সিকিউরিটির ব্যাবস্থা করা।
আমি ছিলাম নির্ভানা গার্ডেন রিসোর্ট হোটেল এ। রির্সোটের মধ্যেই ৪ ক্যাটাগরিতে থাকার ব্যাবস্থা।
বাজেট অনুযায়ী যেখানে ইচ্ছা থাকতে পারেন।
যাওয়ার আগেই হিচ হাকিং এর ভিডিও দেখতে দেখতে ইচ্ছা ছিলো করার কিন্তু সাহস হচ্ছিলো না তাই মনে মনে ঠিক করেছিলাম হোটেল থেকে লোকাল স্পট ঘোরার জন্য অবশ্যই হিচ হাকিং এর চেস্টা করবো। ফেরীতেই এক ফিলিপাইনি কাপলের সাথে কথা হচ্ছিলো,আমার ইচ্ছার কথাও বললাম। ভাগ্যক্রমে একি হোটেলে থাকা হচ্ছিলো উনারা আমার কথা শুনে আগেই বলে বস্লেন নতুন করে খোজার দরকার নাই ওনাদের সাথেই ঘুরতে পারবো ফ্রি তে।
হোটেলে গিয়ে আর্লি চেক – ইন করে ফ্রেশ হয়ে শহরে ঘুরতে পারি।
শহরের বিভিন্ন স্পট ঘুরে,লোকাল ফুড টেস্ট করে রাতে চলে আসি। পরের দিন সকালে বীচ সাইড এবং রির্সোট ঘুরে দুপুরের ফেরি নিয়ে চলে আসি সিংগাপুরে। সেদিন আর কোথাও না থেকে কিছু শপিং করে চলে যাই সরাসরি এয়ারপোর্টে।
যেহেতু সকাল সকাল ফ্লাইট ছিলো লাংকাওয়ের উদ্দেশ্যে। বলে রাখা ভালো,১০০ ডলারের উপরে হলে অবশ্যই ভ্যাট রিফান্ড এর জন্য স্টোরে বলবেন।প্রায় ৬.৫/৭% ( ভুলে গিয়েছি) ভ্যাট্রিফান্ড পাবেন এয়ারপোর্টে।
মালেশিয়া পার্ট :
সিংগাপুর থেকে চলে আসি লাংকাওয়েতে। যেটি মালেশিয়ার অনেকগুলো দ্বীপের মধ্যে একটি।মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো দ্বীপটিই ডিউটি ফ্রি। তাই যদি শপিং এর ইচ্ছে থাকে,তাহলে এখান থেকেই করে নেয়া শ্রেয়।
যাইহোক,প্রথম দিনটি আমি রেস্ট হিসেবে রেখেছিলাম,নেমে বুঝলাম সিদ্ধান্তটি ভালোই ছিও কারন বৃষ্টি ছিলো প্রচন্ড।
রাতে বীচ ওয়াক আর স্ট্রীট ফুডের উপর দিয়েই কাটাটাম।
২য় দিন গেলাম ম্যাংগ্রোভ ফরেস্ট ও স্কাই ব্রিজে।স্কাই ব্রিজটি ছিলো আমার বাকেট লিস্টে আগে থেকেই!
সেখান থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যায় গেলাম ঈগল পার্কে।
পরের দিন গেলাম হোপিং আইল্যান্ডে এবং ফিরে সন্ধ্যায় শপিং করে গুছিয়ে পরের দিন কুয়ালামাপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে।
কুয়ালাম্পুর :
সত্যি কথা বলতে আমার কুয়ালালামপুর চ্যাপ্টারটি ছিলো পুরোওউরি লস প্রজেক্ট। সময়ে অসময়ে বৃষ্টি একদম ধরা খাইয়ে দিয়েছে।
সাধারনত আমি সকাল সকাল ফ্লাইট নিয়েছিলাম যাতে করে সারাটা দিন পাই নতুন জায়গায়। কিন্তু এখানে এসে বিধিবাম। পেলাম না আর্লি চেকইন বুকিত বিন্টান এর ফুরামা হোটেলে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো
তাই বের হয়েই আগে খুজলাম কমের মধ্যে রুম।একটু হাটাহাটি করতেই পেলাম দেশী ভাইদের দেখা।
দেশী হোটেলে ভরপেট খেয়ে জানলাম দেশী হোটেল আছে। সেখানেই বাকি দুদিনের রুম ঠিক করে টাইম স্কয়ার ঘুরলাম।
পরের দিন জুতে গেলাম, কিন্তু গিয়ে দেখলাম এটি আসলে বার্ড জু।যেহেতু আমি সিংগাপুরের বার্ড পার্কে গিয়েছি তাই আর না গিয়ে পাশের অর্কিড গার্ডেনে ঘুরলাম। পরে গেলাম মন্দিরে। আবারো বিধিবাম,স্কাই টাওয়ারে যেতে যেতে বৃষ্টি। গিয়ে দেখলাম স্কাই ভিউ দেখা যাবে না ঝড়ের জন্য্য,অগত্যা অবজারভেশন ভিউতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
পথে টুইন টাওয়ারও দেখে আসলাম।
পরের দিন পুরোটা কাটালাম genting highland এ।
তারপরের দিন সকালে শপিং করে বিকালের ফ্লাইটে দেশে এসে সফর এর সমাপ্তি ঘটে।
যেভাবে যাবেন :
আমি গিয়েছিলাম সম্পূর্ন ফ্লাইটে।শুধুমাত্র সিংগাপুর – ইন্দোনেশিয়া – সিংগাপুর ছিলো ফেরী তে।
রুটটি ছিলো –
ঢাকা -কলকাতা – বারানসী – কলকাতা – ব্যাংকক হয়ে চাংগী ( সিংগাপুর) – বিন্টান ( ইন্দোনেশিয়া) – চাংগী – লাংকাওয়ে (মালেশিয়া) – কুয়ালালামপুর – ঢাকা।
ঢাকা – কলকাতা ছিলো ইউ এস বাংলা।
কলকাতা – বারানসী – কলকাতা ছিলো ইন্ডিগো।
কলকাতা- ব্যাংকক – চাংগী – থাই এয়ার ওয়েজ।
চাংগী – লাংকাওয়ে – এয়ার এশিয়া।
লাংকাওয়ে – কুয়ালামপুর – ঢাকা – মালিন্দো।
উল্লেখ্য যে, চাংগী – লাংকাওয়ে যদি সস্তায় ফ্লাইট চান,তবে আপনি কোন চেক ইন লাগেজ পাবেন না।
যেখানেই যাবেন, অবশ্যই পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন রাখবেন স্পটটি।
বাজেট : সব মিলিয়ে আমার পড়েছে ৮৫,৫০০ এর মতো।
তার মধ্যে শপিং ও ভিসা প্রসেসিং অন্তর্ভুক্ত নয়।
বি দ্র :
১.আমার রুটটি যদি আপনিও নিতে চান,তবে অবশ্যই সিংগাপুরে ডাবল এন্ট্রি ভিসা নিবেন।
বাসের র্যাপিড পাস নিয়ে নিবেন তাহলে অনেক টাকা সেভ হবে। আর যদি ক্যাব নিতেই হয় তবে গ্রাভ নিবেন। ওখানে উবার নেই।
২.যারা স্মোকার,সিংগাপুরে চাইলেই আপনি সিগারেট নিতে পারবেন না। ১ প্যাকেট নিতে পারেন তবে সেটিও ইন্ট্যাক হওয়া যাবে না।যেখানে সেখানে করতে পারবেন না করতে হবে ফাকা খোলা জায়গায়।
৩.ভারতে উবার ও ওলাতে চড়েছি, বাকি দেশে গ্রাভ নিয়েছিলাম তবে সিংগাপুরে বাসেই উঠবেন একা হলে নাহলে চড়া মূল্য দিতে হয়।
৪.লাংকাওয়ে ডিউটি ফ্রি হওয়ায়,চকলেট,জুতা ও পারফিউমের দাম অনেক অনেক কম।
এত কম আমি কুয়ালালামপুর বা এয়ারপোর্টেও পাই নি।
৫.সিম যখন নিবেন তখন অবশ্যই লোকাল কল দেয়া যায় এমনই নিবেন শুধু মাত্র ইন্টারনেট সিম না।আমার মতো কয়েকটি দেশ হলে জিজ্ঞেস করে নিবেন সেসব দেশে চলবে কিনা।
৬.মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাপারে ইন্ডিয়ার কথা কিছু বলছি না সবাই কম বেশী জানেন।
তবে সিংগাপুরে ক্যাব থেকে শুরু করে সব খানেই কার্ড নেয় তাই চেস্টা করবেন কার্ডে পে করতে, আর কিছু ডলার ভাংগাতে পারেন। এয়ারপোর্টে কিছু কম পাবেন, আমি মোস্তফা মার্টে ভালো রেট পেয়েছিলাম।
Source: Rejoy Chakma <Travelers of Bangladesh (ToB)