বেইজিং গ্লাস ব্রীজ ভ্রমণ
ক্লাশ আর পরীক্ষার ব্যস্ততায় বেইজিং এর সময়টা পার হচ্ছিল, কোথাও যাওয়ার তেমন সুযোগ পাচ্ছিলাম না। অবশেষে পরীক্ষা শেষ। এখন অফুরন্ত অবসর, দেশে ফেরার আগে শুধু ঘোরাঘুরি। আমার স্ত্রী, সন্তানরা এখানে আসায় আমরা সহ আরও ২/৩ টি বাংলাদেশী পরিবার পালাক্রমে এখন ঘুরছি। সামার প্যালেস, বেইজিং জু, তিয়ানজিন এর পর আমাদের প্লান ছিল Tianjin Yunshan Glass Bride এ ঘুরতে যাওয়া। বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এই গরমে পাহাড়ে উঠা নিয়ে আমরা একটু ভয়ে ছিলাম! খুব সকালে ঘুম হতে উঠে দেখি ঝির>িঝিরি বৃষ্টি। বাহ, এখানেও বর্ষা চলে এলো নাকি! সাবওয়েতে করে আমরা বিভিন্ন গন্তব্য হতে দংশিমেন এ জড়ো হলাম। আমাদের যেতে হবে বেইজিং হতে একটু দূরে পেংয়্যু শহরে, ওখান হতে সেই কাঁচের ব্রীজে। আমরা ৮৫২ নম্বর বাসে উঠে বসলাম। পরিপাটি রাস্তায় কোন বিরতি ছাড়াই ২ ঘন্টায় পেংয়্যু এ এসে পৌঁছালাম। পেংয়্যু গোছানো শহর।
এখান হতে ২৫ নম্বর বাসে উঠলাম। ছোট বাস, যাত্রী প্রায় সব আমরাই, ২/১ জন চায়নিজ। পাহাড়ী সর্পিল রাস্তা, দুপাশে আপেল আর পিচ ফলের বাগান। এদিকেও বৃষ্টি হয়েছে, বাতাস ভেজা। স্পটে পৌঁছে প্রতিজন ৭০ আরএমবি করে টিকিট নিলাম। বৃষ্টির হাত হতে বাঁচতে পলিথিন কিনে জড়িয়ে নিলাম নিজেদের। প্রথম স্টেজ পর্যন্ত কাঠের সিড়ি করা, সহজে উঠা যায়। তারপর পাহাড় কেটে সিড়ি করা মাঝ স্টেজ পর্যন্ত। এখানে একটা নান্দনিক টেম্পল আছে। আমরা একটু জিরিয়ে নিলাম, সঙ্গে আনা খাবার খেলাম। এরপর শুরু আসল পাহাড়ে উঠা। বেশ খাড়া, তবে সুন্দর সিড়ি ও হাতল থাকায় ভরসা। আমাদের চাইতে বাচ্চাদের প্রাণশক্তি অনেক বেশী, বড়রা হাঁপিয়ে উঠলেও ওরা অক্লান্ত ছিল সবসময়।
অবশেষে আমরা উঠলাম চূড়ায়। এখানেই ওয়াচ টাওয়ার এবং কাঁচের ব্রীজ। এখানে আবার টিকিট কাটতে হলো। আমরা প্রথমে ওয়াচ টাওয়ার এ উঠলাম। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়, বার বার মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে। স্বচ্ছ কাঁচের উপর আমরা। নিচের দিকে তাকালে আত্মারাম খাঁচা হতে পালাতে চায়। বাচ্চারা দেখলাম একটুও ঘাবরায়নি। আস্তে আস্তে ভয়টা সহনীয় হয়ে আসছিল। আমরা অনেক অনেক ছবি তুললাম। এরপর ব্রীজ এ গেলাম। বাতাসে ব্রীজ দুলতে থাকলে ভয়ও ক্রমহারে বাড়তে থাকে। তবে তা ছাপিয়ে কাজ করে থ্রিল, এডভেঞ্চার।
নিচে ও উপরে অসীম শূন্যতা, মাঝে মাঝে মেঘ আপনাকে ঢেকে দিচ্ছে, আপনি শূন্যে ভাসছেন- এমন একটা অনুভূতি! অনেকে ভয়ে হাঁটতেই পারে না। যাদের হৃদরোগ ও হাইট ফোবিয়া আছে তাদের জন্য ব্রীজে উঠা বারণ আছে। অনেক অনেক মজা করলাম। এবার নামার পালা। উঠার মত নামার সময়ও আমাদের সতর্ক থাকতে হয়েছে কেননা পথ ছিল বৃষ্টি ভেজা। নামার পথে সেই টেম্পল এর সিড়িতে বসে আমরা সঙ্গে আনা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। আবার একই পথে ফেরা। জুরি রাহিন সারা পথ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে। রুমে ফিরে আমরাও ঘুমের রাজ্যে।
রুটঃ ঢাকা-বেইজিং, পেংয়ু, গ্লাস ব্রীজ।
থাকাঃ যারা বেইজিং আসবেন, তারা হোটেল হতেই একদিন এর ট্যুরে এখানে ঘুরে আসতে পারবেন। আর গ্লাসব্রীজ এর নিচেও বেশ অনেকগুলো থাকার হোটেল ও রিসোর্ট আছে। খেতে পারবেন রেস্টুরেন্ট এ। অনলাইনেও বুক করতে পারবেন।
সতর্কতাঃ উঁচু পাহাড়- উঠা ও নামা কিছুটা কষ্টকর, তবে সুন্দরতম স্থান। ময়লা আর্বজনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিন এ ফেলে স্থানটি আরও সুন্দর রাখুন।
Source: Z R Zia <Travelers of Bangladesh (ToB)