উড়িষ্যা ভ্রমণে যেভাবে যাবেন ও খরচ
আমাদের উড়িষ্যা ভ্রমণের সবশেষ গন্তব্য ছিলো কটক। কটক ভুবনেশ্বর কিংবা পুরীর মতন তেমন পপুলার কোন ট্র্যাভেল ডেস্টিনেশন না কিন্তু উড়িষ্যার প্রাচীন রাজধানী কটকের নাম এত বেশি বার শুনেছি যে যাবার লোভ সামলাতে পারি নি। পুরী থেকে ১৮০০ রুপিতে ট্যাক্সি ভাড়া করে কটকের পথে রওনা দেই সকাল থাকতেই। পুরী থেকে কটক ৮২ কিমি। দুই ঘন্টার মত সময়েই পৌঁছে যাই।
কটকে আগে থেকে হোটেল বুক করা ছিলো না। গাড়ির ড্রাইভারই হোটেল অশোক নামে একটা হোটেলে নিয়ে যায়। তিনজনের জন্য ব্রেকফাস্টসহ এসি রুম ১৮০০ রুপিতে ঠিক করি। রুম বেশ বড় এবং ভালো ছিলো।
ব্রেকফাস্ট করে সকাল এগারোটার দিকে কটক ঘুরতে বের হই। একটা ট্যাক্সি হোটেল থেকেই ভাড়া করি। ১৫০০ টাকায় সারাদিন কটকের সব প্লেস ঘুরিয়ে আনবে। আগেও বলেছি, কটকে সেরকম কিছু দেখার নেই, তারপরেও নতুন একটা শহর এক্সপ্লোর করতে কারই না ভালো লাগে!
প্রথম গন্তব্য ছিলো ধবলেশ্বর। মহানদী নামক নদীর তীর ঘেঁষে ধবলেশ্বরের পথে ট্যাক্সি ছুটে চললো। শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে অবস্থিত এই মন্দির একটি দ্বীপের ভেতর অবস্থিত। ঝুলন্ত একটি সেতু পার করে ধবলেশ্বর মন্দিরে যেতে হয়। যাবার রাস্তার ভিউ সত্যিই অসাধারণ ছিলো। একদম নদীর মাঝখান দিয়ে বিশাল এক সেতু পার হয়ে যাওয়া। তার দুইপাশে পাহাড়। ধবলেশ্বর শিবমন্দির ঘুরতে ঘুরতে দুপুর পার হয়ে গেলো। তারপরে কটক শহরে ফিরে আসা।
শহরে আসার পথে ডিয়ার পার্ক, জোবরা ব্যারেজ ও উড়িষ্যা স্টেট ম্যারিটাইম মিউজিয়াম দেখার পালা। ডিয়ার পার্ক তেমন আকর্ষণীয় না, তবে বাকি দুটো জায়গা বেশ সুন্দর।
এরপরে শহরের প্রাণকেন্দ্র বারাবতী ফোর্ট এলাকায় যাওয়া। সবচেয়ে বড় ধোকা বোধহয় এই জায়গাটাতেই খেয়েছি। ফোর্টের সুন্দর গেট পার হয়ে যতই ভেতরে যাচ্ছি, কিন্তু ফোর্ট আর দেখা যায় না! একের পর এক মানুষের বাড়ি, কটক ক্লাব, রাস্তাঘাট সবই আছে কিন্তু ফোর্ট আর নাই! পরে জানলাম, কালের গর্ভে সবই হারিয়ে গিয়েছে। খুবই হতাশ হয়ে গেটের সামনে ছবি তুলেই ফেরত আসি।
ফোর্টের পাশেই ছিলো কটক স্টেডিয়াম। বেশ কিছু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ম্যাচও হয়েছে এই স্টেডিয়ামে। তারপর ঢাকায় যেমন ঢাকেশ্বরী, ঠিক তেমনি কটকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কটকচন্ডী মন্দির ঘুরতে গেলাম। মন্দির থেকে শেষ গন্তব্য নেতাজী পার্ক। নেতাজী সুভাষচন্দ্রবসুর জন্মস্থান এই কটকেই। বর্তমানে বাড়িটিকে একটি মিউজিয়ামে রূপ দেয়া হয়েছে। কটকের সবচেয়ে বিখ্যাত বোধহয় এই স্থানটিই। নেতাজীর স্মৃতিসংবলিত এই বাড়ি তথা মিউজিয়াম ঘুরতে ঘুরতে বিকেল পেরিয়ে গেলো।
সবশেষে শপিং আর খাওয়া। মিলেনিয়াম সিটি এবং সিলভার সিটি খ্যাত কটক ব্যবসায়িক দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ। তাই শপিং মল আর বড় বড় ব্র্যান্ডের দোকানের অভাব নেই। আর কটকের বিখ্যাত আরেকটি জিনিস আছে। সেটি হলো সিল্ক, কটকের বিখ্যাত কটকী সিল্ক।
রাতে কটকের রাস্তাঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, পুরো শহর একবার চক্কর দিয়ে আসি। আমাদের হোটেলের ঠিক পাশেই সুন্দর কিছু বুকশপ ছিলো, পিজ্জাহাট ও ডমিনোসের আউটলেট ছিলো। রাতে সেখানথেকেই খাওয়া-দাওয়া করি।
শেষ দিনঃ
পরবর্তী দিন সকালে ভুবনেশ্বরে ফেরা। কটক থেকে ভুবনেশ্বরের দূরত্ব মাত্র ২৮ কিমি। সরাসরি এয়ারপোর্টে গিয়ে ১২:৫৫ মিনিটে এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে কোলকাতা চলে আসি এবং সেই সাথে উড়িষ্যা ট্যুরেরও সমাপ্তি ঘটে।
টিপস-
১. উড়িষ্যাতে মন্দির বা প্রাচীন স্থাপত্য বেশি হলেও উড়িষ্যায় বন-জঙ্গল, জলপ্রপাতেরও অভাব নেই। সাতকোশিয়া ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি কিংবা ভারতের দ্বিতীয় কাশ্মির খ্যাত দাড়িংবাড়ি উড়িষ্যাতেই অবস্থিত। সময় সুযোগ হলে আমি নিজেও সেসব জায়গায় যাবার ইচ্ছা রাখি।
২. উড়িষ্যার হস্তশিল্প অসম্ভব সুন্দর। স্যান্ড আর্ট, স্টোনআর্ট, অ্যাপ্লিক, পটচিত্র সবরকমের আর্ট-ক্রাফটসের জিনিস উড়িষ্যায় পাবেন।
৩. উড়িষ্যার ভেজ কুইজিন খুবই টেস্টি। উড়িষ্যা ভ্রমণে আপনাদের বিশেষ পাওয়া হবে উড়িষ্যার খাবার।
৪. ১০০০০ রুপি বাজেটেই কোলকাতা থেকে ট্রেনে সুন্দরমতন ৫দিন ভুবনেশ্বর, পুরী এবং কটক ঘুরে আসতে পারবেন।
Source: Sushanto Saha <Travelers of Bangladesh (ToB)