ভিন্নপথে বিক্রমপুর ও আড়িয়াল বিল ভ্রমণ

ঢাকার খুব কাছেই বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ এক ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। আড়িয়াল বিল নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ ক্রেজ দেখা গেলেও বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ জেলার আনাচে কানাচে যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক প্রাচীন জনপদের চিহ্ন তা অনেকেরই অজানা। সংরক্ষণ, সংস্কার ও প্রচার না থাকার ঐতিহ্যবাহী এই জেলার অনেক কিছুই ভ্রমণ পিপাসুদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে৷ হাজার বছরের পুরনো মনিষী অতীশ দীপংকরের জন্মভিটা যেমনি রয়েছে তেমনি রয়েছে মুঘল আমলের নিদর্শন লালবাগ কেল্লায় মতোই তবে আকারে ছোট ইদ্রাকপুর কেল্লা। আছে বিশাল রামপাল দীঘি, ধলেশ্বরী নদী, ইছামতি নদী, পদ্মা-মেঘনায় মিলনস্থল, অসংখ্য খাল, আর আড়িয়াল বিল তো এখনই ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সুপরিচিত। মুন্সিগঞ্জ শহর ও এর আশেপাশের ছায়া ঘেরা রাস্তাগুলা রিক্সা/অটোয় ঘুরে বেড়ালে আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে৷

বিখ্যাত ও খ্যাতিমান মানুষের জন্মের জন্যেও বিখ্যাত বিক্রমপুর। বাংলাদেশের একমাত্র ইংলিশ চ্যানেল জয়ী ব্রজেন দাসের জন্মস্থান যেমন বিক্রমপুর তেমনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্রের পৈত্রিক ভিটাও মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। প্রথাবিরোধী লেখম হুমায়ূন আজাদ ছাড়াও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্মভিটাও মুন্সিগঞ্জ জেলায়। মানিক বন্দোপধ্যায়ের উপন্যাস হয়তো পড়েছেন অনেকেই কিন্তু জানেন না মানিকের জন্মস্থান প্রাচীন বিক্রমপুর নগরীতেই৷ হালের জনপ্রিয় শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ মুন্সিগঞ্জের ছেলে, তারা বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদ মুন্সিগঞ্জ জেলার পদবি প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা৷ আপনার আমার প্রিয় অপ্রিয় সংগীত শিল্পী তাহসান ও নায়ক অন্তত জলিলের বাড়িও কিন্তু মুন্সিগঞ্জ। ও হ্যা, “নাম বললে চাকুরী থাকবে না” খ্যাত জনাব আব্দুল হাই মুন্সিগঞ্জ-৪ আসনের বেশ কবারের নির্বাচিত এমপি কিন্তু। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের পদ্মহেম ধাম গ্রামে প্রতি বছর শীতে হয়ে থাকে দেশের দ্বিতীয় বৃহওম লালন গানের উৎসব। ক্যাম্প করে রাত কাটানোর জন্যে পদ্মহেম ধাম এক আদর্শ জায়গা।

কিভাবে যাবেনঃ
মুন্সিগঞ্জ জেলা ঢাকা থেকে যাওয়া যায় বিভিন্ন ভাবে। আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রেমী হন তবে এক ট্যুরে বাস, এসি বাস, লঞ্চ, ট্রলার এমনকি ট্রেন জার্নিও করে নিতে পারেন। ভিন্ন সেই পথে কিভাবে আড়িয়াল বিল যাবেন সেই বর্ননাই দিচ্ছি এখানে।

যেভাবে আনন্দে যাবেনঃ
প্রথমে চলে যান গুলিস্তানের বাইতুল মোকারক মসজিদের গেইটের পাশে স্টেডিয়াম দুই নাম্বার গেইটে। এখান থেকে নারায়নগঞ্জের দুইটি এসি বাস চলাচল করে প্রতিদিন সকাল ৭ থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত। এসি বাসে করে চলে যান নারায়নগঞ্জ শহরে, ভাড়া নিবে ৫৫ টাকা। বাস দুটি শীতল ও বিআটিসি, এছাড়া ননএসি বন্ধন ও উৎসব আছে ভাড়া ৩৬ টাকা। মিরপুর থেকে ছাড়ে হিমাচল। গুলিস্তান থেকে নারায়নগঞ্জ সময় লাগবে ৪০-৫০ মিনিট। এরপর রিক্সায় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাট ২০/২৫ টাকা ভাড়া। অথবা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সিটি ট্রেনেও যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জ। ট্রেন আপনাকে একবারে লঞ্চঘাটের সামনে নামাই দিবে। ভাড়া মাত্র ২০ টাকা। সময় ওই ৫০/৫৫ মিনিট। ট্রেনের সিডিউল গুগল করলেই পাবেন। এরপর নারায়নগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের লঞ্চে করে শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, ধলেশ্বরী এই তিন নদীর রূপ দেখতে দেখতে চলে যান মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট। লঞ্চ আছে ১৫/২০ মিনিট পর পরই সারাদিন। সময় লাগবে ৩৫/৪০ মিনিট। সকাল ৮ টায় রওনা দিলে আপনি দশটার মধ্যে মুন্সিগঞ্জ শহরে৷ লঞ্চঘাটে মহিউদ্দিন হোটেলে পরোটা, গরু/সবজি দিয়ে নাস্তা করে একটা অটো ভাড়া করে নিন ৩/৪ ঘন্টার জন্যে।

অটোওয়ালাকে বলবেন ইদ্রাকপুর কেল্লা, রামপাল দীঘি, অতীশ দীপংকরের বাড়ি, বাবা আদমের মসজিদ, গায়েবী ব্রীজ, সোনারং জোড়া মঠ এসব দেখিয়ে আপনাকে নামিয়ে দিবে শ্রীনগর বাজারে। অটো ভাড়া নিবে সর্বোচ্চ ৮০০/১০০০ টাকা, এক অটোতে ৬ জন আরামে বসা যায়। সময় লাগবে ৩/৪ ঘন্টা, কারন সবগুলা জায়গা খুব কাছাকাছিই। গুগল ম্যাপ বেশ হেল্প করবে এখানে। শ্রীনগর বাজারে নেমে ভরপেট তাজা মাছ দিয়ে লাঞ্চ করে একটা ট্রলার ভাড়া করে নিন ঘন্টা চুক্তিতে। ৩/৪ ঘন্টা আড়িয়াল বিল ভ্রমনের জন্যে আদর্শ, চেষ্টা করুন ইঞ্জিন ছাড়া নৌকায় ঘুরে বেড়াতে আর গোধূলী সময়টা মূল বিলে কাটাতে, সন্ধ্যের পর চলে আসুন আবার শ্রীনগর বাজারে। নৌকা ভাড়া নিবে ১৫০০-২০০০ টাকা। বসতে পারবেন ১৮-২৫ জন। এরপর শ্রীনগর বাজার থেকে ১০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় চলে আসুন ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে। ঢাকাগামী যে কোন বাসে উঠে পদ্মা সেতুর চার লেনের রাস্তা দেখতে দেখতে চলে আসুন গুলিস্তান সময় লাগবে ১-১ঃ৩০ ঘন্টা আর ভাড়া ৫৫-৭০ টাকা। তো শুক্রবার সকাল ৮ টায় রওনা দিলে আপনার উইকেন্ডের সেরা ১২/১৪ ঘন্টা কাটিয়ে আবার রাত ৮/৯ টায় আপনি ঢাকায় থাকতে পারছেন।

সর্বনিম্ন খরচঃ
ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ট্রেন – ২০ টাকা
নারায়নগঞ্জ- মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ – ২৫ টাকা
নাস্তা- ৫০ টাকা
অটো ভাড়া- ২০০ টাকা
লাঞ্চ- ১৫০ টাকা
ট্রলার – ২০০ টাকা
শ্রীনগর টু গুলিস্তান- ১০০ টাকা

সর্বমোট ৭৫০ টাকা প্রায়

মুন্সিগঞ্জের অনেক ছাত্রছাত্রীই ঢাকায় পড়াশোনা করে, নিজের জেলাকে তার চাইলে এই রুটে তার বন্ধুদের কাছে উপস্থাপন করতে পারে বেশ সুন্দরভাবে। বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা শহরই বেশ গুছানো, লক্ষ্য রাখবেন আপনার দ্বারা যেন এর পরিবেশের ক্ষতি না হয়৷

Source: Sadifuzzaman Diganta <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment