বাশঁখালী সমুদ্র সৈকত ও চা-বাগান,চট্টগ্রাম ভ্রমন বৃত্তান্ত

গতমাসে ২৯ তারিখ সকালে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে পাঁচবন্ধু মিলে বাশঁখালীগামী ছেড়ে যাওয়া সকাল ৭.১৫ টায় প্রথম বাসে গুনাগরি টিকেট কেটে উঠে পড়ি যদিও আমরা গুনাগরি আগে চাঁনপুরে নেমে পড়ব। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা। সাঙ্গু নদীর পার হয়ে বাশঁখালীর শুরুতে চাঁনপুরে সকাল ৮.৩০ মিনিটে পৌছে যাই। চাঁনপুর থেকে রিজার্ভ CNG তে ১৫০ টাকায় চা-বাগান। বিশাল জায়গা জুড়ে স্তরে স্তরে সাজানো উঁচু-নিচু পাহাড়ী টিলা এবং পাহাড়ঘেরা সমতলে এই চা-বাগান। পাহাড়ী টিলা গুলো দূর থেকে দেখলে অনেকটা ‘সবুজ টুপি’ মত দেখাচ্ছে । আর চা-বাগানটা দেখতে যেন সবুজ গালিচা। অনুমতি নিয়ে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করণ করার দৃশ্যটিও দেখার সূযোগ হয়।

তারপর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা দিয়ে এগুতেই পাহাড়ের টিলার উপর সমতুল ভূমিতে চা-বাগানের এত সৌন্দর্য চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই চা-বাগান বাংলাদেশের অন্যসব চা-বাগান থেকে ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে আর তা হল বন্যহাতি। দূর থেকে চা-বাগানে বাইরে হাতির আনাগোনা লক্ষ্য করলাম। শুধু হাতি নয় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হাতির পালের সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে।চা শ্রমিকরা মতে, প্রায় প্রতিদিন বিকালে-সন্ধ্যায়-রাতে হাতির দল হানা দেয় এই বাগান ও আশে পাশের এলাকাতে। কিন্তু বিশেষ কিছু স্থানে প্রায়ই হাতির আনাগোনা থাকে। আর হুট করে ভাগ্যগুনে যদি হাতির পালের দেখা হয়ে যাই সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

চা-বাগানে ঘন্টা তিন-এক ঘুরার পর চা-বাগানের গেইট থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় CNG নিয়ে চলে আসলাম পুনরায় চাঁনপুর বাজারে। যদিও ৩০ টাকা করে লোকাল সিএনজি ভাড়ায় যাওয়া-আসা যাই। চাঁনপুর থেকে CNG করে ২৫ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় গুনাগরি চলে আসি, ওখানে ক্যাফে রেড চিলিতে দুপুরে খাবারটা সেরে নিয় জনপ্রতি ১১৫ টাকা।
পরবর্তী গন্তব্য সমুদ্র সৈকত, এখানে বেশ কয়েকটা পয়েন্ট আছে। আমাদের কাথারিয়া, খানখানাবাদ ও কদমরসূল এই তিনটা পয়েন্ট দেখার প্ল্যান।
গুনাগরি থেকে ১০ টাকা CNG ভাড়ায় বৈলছড়ি বাজার। বৈলছড়িতে নেমে ঢুকে পড়লাম ঐতিহ্যবাহী উজির বাড়ি ( খান বাহাদুর বাড়ি)। এই বাড়ি নিমার্তা খান বাহাদুর বদি আহমদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার ব্রিটিশ শাসনামলে বঙ্গ পরিষদের সদস্য ছিলেন।

খান বাহাদুর বাড়ি থেকে বের হয়ে রির্জাভ CNG তে ১৮০ টাকা ভাড়ায় চলে যাই কাথারিয়া পয়েন্টে। যদিও ৩৫ টাকায় লোকাল CNG যোগে যাওয়া যাই।তীড়ে ভিড়তে চোখে পড়ে বিশাল বিশাল দুইটি মাছের ঘের। মাছের ঘেরে মাঝখানে সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে অল্প খানি এগোতে যা কিছু দেখলাম, কল্পনাও করতে পারি নাই এত সুন্দর হবে। একদিকে সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধ ঝাউগাছ অন্যদিকে ঘন প্যারাবন আর মাঝখানে সৈকত জুড়ে সবুজ প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে সরু নালা। নালা দক্ষিন প্রাপ্তে প্যারাবনে পাশ দিয়ে হেঁটে দেখে মিলে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের ন্যায় কেওড়া ও শ্বাসমূল। তারপর নালা উত্তর প্রান্তে বিশাল সবুজ প্রান্তর ও ঝাউবন ঘুরে। ঘন্টা খানিক কাটানোর পর পুনরায় পিছনে অল্প হেটে স্থানীয় ছোট একটা (চনুতি বাজার) বাজারে চলে আসি। এই বাজার থেকে CNG রিজার্ভ ২০০ টাকা ভাড়ায় খানখানাবাদ পয়েন্ট। ভেঙে ভেঙে লোকাল CNG যোগে যাওয়া যাই। চনুতি বাজার থেকে বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার ১৫ টাকা ভাড়া, বশির উল্লাহ থেকে মোশাররফ আলী হাটে ভাড়া ১০ টাকা। মোশাররফ আলী থেকে খানখানাবাদ পয়েন্টে ভাড়া ১৫ টাকা। খানখানাবাদ পয়েন্টে সুসজ্জিত বেড়িবাঁধ, সমুদ্রের উত্তাল গর্জন ও বিশাল বিশাল টেউ আচঁড়ে পড়লে বেড়িবাঁধে। আর সাগর ভেসে ভেড়াচ্ছে মাছ ধরার ছোট বড় অসংখ্য ট্রলার/নৌকা আর কিছু কিছু ট্রলার ও নৌকা থেকে সামুদ্রিক মাছ ও ইলিশ নিয়ে ছোট ছোট ট্রাক চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতেছে। খানখানাবাদ পয়েন্ট থেকে ২০-২৫ মিনিট উত্তর দিকে হেঁটে এগোলে কদমরসূল পয়েন্ট। এই পয়েন্টের একদিকে সাঙ্গু নদীর মোহনা। এই পয়েন্ট নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই, বিশেষকরে ঝাউগাছ দেখে আমাদের মুগ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ বেলাভুমি জুড়ে লাল কাঁকড়া আর সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
বাশঁখালী সমুদ্র সৈকতে #প্রেমাশিয়া_কদমরসূল_খানখানাবাদ_বাহারছড়া_রত্নপুর_কাথারিয়া_সরল_গন্ডামারা সহ সাত-আটটি পয়েন্ট সেজে আছে আপন আপন রূপ মাধুর্যে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা সমুদ্র সৈকত দেখার সূযোগ হয়ে হয়েছে। বাশঁখালী সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজার সাথে তুলনা করতে পারি, আর কুয়াকাটা তো অনেক পিছিয়ে থাকবে। প্রচার-প্রচারণা অভাবে এটা সবার চক্ষু অগোচেরে রয়ে গেছে।

সন্ধ্যার পর খানখানাবাদ থেকে CNG যোগে গুনাগরি চলে আসি ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। গুনাগরি থেকে ৬০ টাকায় টিকেট কেটে বাসে বহদ্দারহাট বাস টামিনালে।

➤ ঢাকা ও অন্যান্য জায়গা থেকে যারা আসবেন তারা রাতের খাবারে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী খাবার মেজবানের স্বাদ নিতে পারেন। এজন্য আপনাকে বহদ্দারহাট বাস টামিনাল থেকে ১নং মিনি বাসে করে ৬ টাকা ভাড়ায় চকবাজার আসতে হবে। রিজার্ভ CNG ও নিতে পারেন ভাড়া ৬০-৮০ টাকা। চকবাজারে পিপলস হাসপাতালের পাশে মেজ্জান হইয়লে আয়ুইন রেস্টুরেন্টে জনপ্রতি ২৫০ টাকা মেজবানের প্যাকেজ পাওয়া যাই। তারপর চকবাজার থেকে জিইসি মোড়ে গরীরউল্লাহ শাহ মাজার গেইট সামনে চলে আসবেন। ওখান থেকে দেশের সবকয়টা বাসের কাউন্টার আছে প্রতি মিনিট দশ-এক পরপর বাস ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাই। ভাড়া জনপ্রতি ৪৮০ টাকায় (নন-এসি)।

খরচঃ
[ঢাকা থেকে যারা আসবেন]
টোটাল খরচ পড়বে ১৬০০-১৮০০ টাকা
তাছাড়া ট্রেনে করে আসলে খরচ আরও কিছুটা কম পড়বে।
আর যারা বাজেট ট্রাভেলার সাড়ে ১০ টার মেইল ট্রেন ধরে আসলে টোটাল ১ হাজারের কম খরচ দিয়েও হয়ে যাবে।
Source: ÃráfàtTravelers of Bangladesh (ToB)

 

Share:

Leave a Comment