SIKKIM: The Lost Kingdom

1800 kms, 7 Days
Dhaka – Changrabandha-Siliguri-Gangtok-Jorethang-Pelling-Geyzing-Jorethang-Gangtok-Lachung-Snow point-Gangtok-Tsmgo lake-Kalimpong-Changrabandha-Dhaka
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – –

সিকিম – ব্রিটিশদের পরাধীনতা থেকে ১৯৪৭ এ স্বাধীন রাজ্য হয়েও ১৯৭৫ এ আবার ভারতের অর্ন্তগত হয়। পাহাড়ি নদী দিয়ে পুর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ এই চারটি ডিস্ট্রিকে বিভক্ত সিকিম একদিকে এমন প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান, তেমনি গ্রিন এনার্জি ও পরিচ্ছন্ন থাকার দিক দিয়েও শিক্ষা নেয়ার মতন একটি জায়গা। লোকাল মানুষ যেমন ভাল, তেমনি বিনয়ী। আর এমন জায়গায়ই অনেকদিন ধরে যাবার ইচ্ছা ছিল, তাই ঘুরে এলাম এই ১৬ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের সিকিম রাজ্যে। দলে ছিলাম আমরা ৫ জন।

১৫ তারিখ রাতে এস আর পরিবহনের বাসে করে সকালে চাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন। চরম মাত্রায় করাপ্টেড একটা বর্ডার। বাংলাদেশি সাইড বিশেষ করে, এপাশে ২৫০ দিয়েও যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে, ওপাশে ১০০ দিয়েই খুব ভাল ব্যবহার আর সার্ভিস পাওয়া গেছে।
অটো – ট্রেন – শেয়ার্ড জিপে করে রংপো পৌঁছাতেই রাত ৮ টা। সেখান থেকে ইনার লাইন পারমিট নিয়ে গ্যাংটক পৌছাই রাত ১০:৩০ এ। এত রাতে খাবার যেহেতু সব বন্ধ তাই একটু বেশি দামেই এক জায়গা থেকে খাবার খাওয়া গেল।

আমরা শুরুতে ২ জন গিয়েছি আর বাকি ৩ জন ২ দিন পরে গিয়েছে। তাই আমরা ২ জন পরদিন সকালে শেয়ার্ড জিপ করে প্রথমে সাউথ সিকিম এর জোরথং যাই। খুব সুন্দর গোছানো শহর। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি স্বচ্ছ নদী। মল রোডটাও বেশ। ঘুরে ফিরে, স্ট্রিট ফুড খেয়ে উঠে পড়ি পেলিং এর শেয়ার্ড জিপে। পেলিং এর রাস্তাটা একটু খারাপ আগেরটার তুলনায়। বিকেলের পৌঁছে উঠে পড়ি লোয়ার পেলিং এর হোটেলে। এর মালিক খুব ফ্লুয়েন্ট ইরেজি বলেন, আর এখানেই কেবল পুরো পেলিং এ সন্ধ্যার পর একটু আধটু প্রাণ থাকে, বাকি সব জায়গা ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগে গেলিপ্যাড থেকে ঘুরে এলাম। আর রাতে বেশ অনেক জায়গার মানুষের সাথে আড্ডা হল।

সকালে উঠে হেঁটে চলে গেলাম পেলিং এর বৌদ্ধ মনাস্ট্রিতে। বিশাল বড় জায়গা, আর অপরূপ কারুকাজ। পাশেই একটা গ্লাস ওয়াক আছে, কাছের ব্রিজ বলা যায়। তো আশপাশ ঘুরে ফিরে হোটেলে ফিরে এসে আবার জিপে চেপে বসলাম। সরাসরি গ্যাংটকের গাড়ী না পাওয়ায় পেলিং – গেইজিং – জোড়থাং – গ্যাংটক যেতে হল। তবে এই রাস্তায় একেক অংশ দিনের কোন কোন ঘণ্টা কন্সট্রাকশন এর জন্য বন্ধ থাকে। তাই খোজ নিয়ে রওনা হওয়া উচিত।

রাতে গ্যাংটকে আমাদের বাকি তিনজন এসে পৌঁছায়। একদিকে ঠাণ্ডা অন্যদিকে বৃষ্টি, যাচ্ছেতাই অবস্থা। উঠে পড়লাম হোটেল Bayul এ। MG Marg এর একদম সাথে। একটা দুই রুমের ব্যবস্থা হল, এক্সট্রা ম্যাট্রেস সহ, ১৬০০ রূপিতে। রিসিপশনের রাহুল ছেলেটার ব্যবহার বেশ ভাল।

পরদিন আমরা নর্থ সিকিমের পারমিট পেলাম না। তাই, প্লান থেকে লাচেন বাদ দিতে হল, এমনিতেও বরফের কারণে ওই সাইডে রাস্তা বন্ধ। আর ছাঙ্গু লেকের পারমিশন গত ৭ দিনে মাত্র একদিন পেয়েছে মানুষজন। তাই এদিন গ্যাংটক সাইড সিয়িং করেই কাটালাম। রোপওয়ে, ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন সেন্টার, প্লান্ট কনজারভেটরি, লাসা ফলস, হনুমান টক, বানঝাঁকরি ফলস। ঝর্না ফুল আর লোকাল ফুড ভালই দিন শেষে সন্ধ্যায় গেলাম Kelly’s Cafe। খুবই ভাল জায়গা এবং খাবারের মান, দাম, প্রেজেন্টেশন সব দিক দিয়েই বেশ ভাল। যারা যাবেন ট্রায়িং করবেন।

পরদিন নর্থ সিকিম এর পারমিট হল। আমরা প্যাকেজ নিলাম লাচুং-ইয়ামথাং ১৬০০০ রূপিতে। আমাদের গাইড অর্জুন আর ড্রাইভার প্রশান্ত দুইজনের মিউজিক টেস্ট আর বয়স দুইদিকেই আমাদের সাথে মিলেছিল বেশ। মাঞ্ঝে মাঝে সুন্দর জায়গায় থামলাম। তবে মাঙ্গান নামের ছোট্ট শহর আর চুংথং তিস্তা বাধ সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। আর একটু পর পর দূরের পাহাড়গুলোর পিক উকি দিচ্ছিল। পথে এত এত ছোট বড় ঝর্না পড়ল যে ঝর্না জিনিসটার গুরুত্বই কমে গেল

লাচুং এর নামকরণ মাঝে দিয়ে বয়ে চলা লাচুং নদীর নামানুযায়ী। এইটা আসলে একটা ভ্যালি। আমাদের জায়গা হল Frozen Valley হোটেলে। চারপাশেই উঁচু উঁচু পাহাড়। আমরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত নদীর ধারেই থাকলাম। তবে ঠাণ্ডা যে এখানে অনেক বেশি সেটা ভালভাবেই টের পেলাম। রাতে তাপমাত্রা মাইনাসে নামল।

সকালে ৬ টার দিকে রওনা দিলাম ইয়ামথাং এর রাস্তায়, আগে থেকেই জানতাম ১০ মাইলের পর রাস্তা বরফের জন্য বন্ধ। কিন্তু সেখানেও পরিবেশ দেখার মতন। বরফ, চারিদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়। আর আমরা সবার আগে যাওয়ায় জায়গাটেও খালি পেলাম। অনেকক্ষণ সেখানে ছিলাম, আর ততক্ষণে অনেক মানুষ চলে এসেছে। তাই ফেরত গেলাম আর হোটেলে ব্রেকফাস্ট করে চেকআউট করলাম। এবার ফেরার জার্নি, তবে এইবার চুংথাং এর তিস্তা বাধ এর নিচে গেলাম। একটা ঝুলন্ত ব্রিজ আছে, সেটায় গিয়ে বেশ ভাল লাগল। যারা যাবেন তারা এখানে সময় পেলে যাবেন।

বিকেল সন্ধ্যায় টুকটাক কেনাকাটা করে, রাতে চলে গেলাম OSM রেস্টুরেন্টে। বেশ ভাল জায়গা দামি এবং বাজেট দুইরকম আইটেমই আছে, আমরা পেট ভরে খাওয়া দাওয়া করে হোটেলে ফিরে এলাম।

সকালে প্রায় ১০ টার দিকে মিলল ছাঙ্গু লেক এর পারমিট। আবহাওয়াও বেশ ভাল, আর মানুষও প্রচুর। তাই জ্যাম ঠেলে অনেক দেরি হল। ছাঙ্গু পর্যন্ত গাড়ীতে যেতে পারিনি। ৮ কিমি আগেই এক জায়গার পর আর গাড়ী গেলনা। পুরো রাস্তা বরফ আর চারিদিকে সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়। আমরা দুইজন হেঁটে প্রায় ৬ কিমি উঠে গেলাম, কিন্তু দেরি হয়ে যাওয়ায় বাকিরা গাড়ী নিয়ে চলে এল আমাদের নিতে, তাই ছাঙ্গুর ২ কিমি আগে থেকেই ফিরে যেতে হল। আমরা এদিন গ্যাংটকের ভেতর না ঢুকে সোজা চলে গেলাম কালিম্পং এ। সিকিম থেকে রেব হবার সময় পাস্পোর্টে এক্সিট ডেট নিয়ে নিলাম রংপো থেকে।

কালিম্পং পৌছাই রাত ৮ টায়। উঠে পড়ি OYO এর Gompus হোটেল এ। দুই রুম ৩০০০ রুপি। বেশ ভাল মানের হোটেল। সকালে চলে গেলাম ডেলো পার্ক, তবে মেঘ এর জন্য কিছু দেখা যায়নি। আর পরিচ্ছন্ন সিকিম ঘুরে আসার পর ওয়েস্ট বেঙ্গলের এই ছোট্ট ঘিঞ্জি শহর খুব একটা ভাল না লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই যারা যেতে চান তারা সিকিম ভ্রমণের আগেই যাবেন দার্জিলিং, কালিম্পং।

রিজার্ভ জিপ নিয়ে কালিম্পং থেকে চ্যাংড়াবান্ধা চলে আসি ৪০০০ রূপিতে। তারপর ১০০ রুপি + ২০০ টাকা দিয়ে বর্ডার পার হয়ে এস আর এর ৬ টার এসি বাস। কিন্তু বাস মাঝে ছোট এক্সিডেন্ট করায় প্রায় দুই ঘণ্টা লেট এবং পরে নরমাল বাসে ট্রান্সফার করা হয় যাত্রীদের। বুঝলাম এই রুটে ভাল বাস নেই টিটাগং সিলেট এর মতন। ড্রাইভিং ও খুব একটা ভাল না।

গল্পগুলোর ডীটেইলস পাওয়া যাবে আমার প্রোফাইলে –
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – –
খরচঃ মোট খরচ হয়েছে জনপ্রতি ১৭০০০/= (আমরা দুইজন আগে গিয়েছি বলে), তবে এমনিতে ১৫০০০/= এর মধ্যেই সব কভার হয়েছে।
লাচুং প্যাকেজ ১৬৫০০ রুপি (রাতের আর সকালের খাবার সহ)
ছাঙ্গু প্যাকেজ ৪৮০০ রুপি
গ্যাংটক সাইটসিয়িং ৩০০০ রুপি
Hotel Bayul দিনপ্রতি ১৬০০ রুপি
পেলিং mochilero ostello ৯০০ রুপি
কালিম্পং OYO Gompus ৩০০০ রুপি দুই রুম
জিপ কালিম্পং – চ্যাংড়াবান্ধা ৪০০০ রুপি
শেরার্ড জিপ এর ভাড়া ১৫০ – ৩০০ রুপি
আর খাবার এর খরচ নিজেদের উপর
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – ———
কিছু সাজেশন
১/ আবহাওয়া দেখে ট্রিপ প্লান করবেন, পাহাড়ে আবহাওয়া খুব বেশি পরিবর্তন হয়।
২/ মার্চ এপ্রিল পিক সিজন, সবচেয়ে সুন্দর এবং ভাল সবকিছু দেখা যায় এই সময়ে। তবে পিক সিজন হওয়ায় খরচ এবং জায়গা খুঁজে পাওয়া টাফ। ভিড়ও বেশি হবে।
৩/ সম্ভব হলে তাড়াহুড়ো না করে হাতে সময় নিয়ে সিকিম ঘুরতে বলব। যেমন – নামচি, রাভাংলা হয়ে পেলিং গিয়ে, আসার সময় জোরথাং হয়ে গ্যাংটক আসতে পারেন। তিনদিন সময় রাখা ভাল সাউথ এবং ওয়েস্ট সিকিম এর জন্য।
৪/ নর্থ সিকিম গেলে ২ রাত ৩ দিনের লাচেন লাচুং প্যাকেজ হচ্ছে বেস্ট। লাচেন থেকে চোপটা ভ্যালি এবং কালা পাথর যেতে পারেন। আবার লাচুং থেকে ইয়াম্থাং-জিরো পয়েন্ট এবং কাটাও যেতে পারেন। এতে কিছু এক্সট্রা খরচ পড়বে।
৫/ নিজে নিজেই একটু খোঁজখবর নিয়ে যাবেন যাতে এজেন্সিগুলো ফাঁকিবাজি না করতে পারে, সবকিছু হোটেল আর এজেন্সি এর উপর ছেড়ে দিলে লস আপনারই।

সিকিম খুব পরিচ্ছন্ন জায়গা, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা অপরাধের পর্যায়ে পরে। আর বাইরে ধূমপান করলে ৫০০০ রুপি জরিমানা। আর ট্রাফিক আইনও কড়া। আশাকরি আমরা যারাই যাব সবাই এইগুলো মাথায় রাখবো।

source: Al-amin Nowshad‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment