অফ সিজনে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

রোলার কোস্টারে চড়ে ভ্রমণে যেতে চান তবে অফ সিজনে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ হতে পারে আপনার বেষ্ট অপশন। অফ সিজনে সেন্টমার্টিনে যেমন থাকে না কোন টুরিস্ট এর কোলাহল,,তাই বৃষ্টিস্নাত রাতে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে মনে হতেই পারে আপনি দাড়চিনি দ্বীপের রাজা!! আর এই তিন দিন এর রাজা হবার লোভ সামলাতে না পেরে জুন এর শেষের দিকে ঘুরে এলাম সেন্টমার্টিন থেকে।

সেন্টমার্টিনে অফ সিজন আর সিজন এর মধ্যে খুব বেশি অমিল খুঁজে পাবেন না,,সিজনে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আরামদায়ক,, তবে অফ সিজনে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ভ্রমণ কষ্টকর ও অনিরাপদ। তবে অফ সিজনে আপনি কোলাহল মুক্ত দ্বীপ, নির্জন সৈকত এবং সিজন অপেক্ষা সবকিছুর দাম তুলনামূলক অনেক কম পাবেন। তাই যারা বাজেট ট্যাুর দিতে চান তাদের জন্য অফ সিজন বেস্ট আইডিয়া। অফ সিজনে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত যাতায়াত এর এক মাত্র উপায় হচ্ছে ট্রলার, ট্রলার ভাড়া ২৩০ টাকা, সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো, যা অনিরাপদ, তাই ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই আবহাওয়া দেখে নিবেন কারন ভ্রমণের থেকে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। টেকনাফ থেকে ট্রলার ছাড়ে জোয়ার এর উপর নির্ভর করে,,আমরা যখন যাই তখন জোয়ার আসতে আসতে প্রায় তিনটা বেজে গিয়েছিল,,আর পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় অন্ধকার ছুই ছুই।
( ট্রলার লাইন ম্যান :- 01730668862 )

সিজন অপেক্ষা অনেক কমে থাকার জন্য রিসোর্ট পেয়ে যাবেন, তবে অফ সিজনে সব রিসোর্ট খোলা থাকে না। যারা একটু বেশি নির্জন ও নিস্তব্ধতা পছন্দ করেন তাদের জন্য বেস্ট বীচ ভিউ রিসোর্ট গুলো। আমরা বাজার থেকে মোটামুটি দূরত্বের “নিসর্গ কুটির” রিসোর্ট এর (কোরাল) এ উঠেছিলাম। দুই বেড অনেক বড় রুম, ভাড়া ৬০০/- টাকা মাত্র। যা সিজনে মোটামুটি প্রায় তিন হাজার টাকায় ভাড়া হয়। রিসোর্ট এর লোকদের সাথে কথা বলে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার ঠিক করে নেওয়াই ভালো,,এতে খাবার খরচ অনেক কম পরবে। যা বাহিরে খেতে গেলে অনেক বেশি পরবে। আমরা টুনা মাছ ভর্তা, ডাল, রুপচাঁদা ফ্রাই, আর কোরাল মাছ দিয়ে লাঞ্চ এবং ডিনার করি। জনপ্রতি প্রতিবেলা ১২০/- টাকা যা বাহিরের খবার এর দাম অপেক্ষা অনেক কম।
( রিসোর্ট নিসর্গ কুটির :- 01316376917 )

সেন্টমার্টিন এর মূল দ্বীপ থেকে ছেড়া দ্বীপ যেতে চাইলে আপনি হেটে কিংবা সাইকেল প্যাডেল করতে করতে ও চলে যেতে পারেন, যাওয়ার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিয়ে যাবেন, সাইকেল ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৪০ টাকা নিয়েছিল।

সেন্টমার্টিন গেলে অবশ্যই কয়েক দিন সময় হাতে নিয়ে যাবেন,,কারন সেন্টমার্টিন গেলে দুই এক দিন না থাকলে রাতের সেন্টমার্টিন উপভোগ করতে পারবেন না। রাতের সেন্টমার্টিন সত্যি মনোমুগ্ধকর। সেন্টমার্টিন গেলে অবশ্যই ডাব এর টেষ্ট নিতে ভূল করবেন না, না হলে আপনার মনে হতেই পারে অসম্পূর্ণ ট্যুর। বাজারে জেটির কাছেই ২০/২৫ টাকায় পেয়ে যাবেন বড় মিষ্টি ডাব। তবে আমাদের মতো ভাগ্যে ভালো থাকলে আর গ্রুপ মেম্বার কেউ গাছে উঠতে জানলে গাছ থেকে ডাব পেরে খাওয়ার অভিজ্ঞতা ও পেয়ে যেতে পারেন।

বি:দ্র: << >> প্রথমেই আপনার মাথায় রাখা উচিত আপনি ট্রলারে যাচ্ছেন যা অনিরাপদ, তাই আপনার মনোবল শক্ত হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে অফ সিজন আপনার জন্য নয়;
>> সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে যেনে বের হন;
>> সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে আপনার জন্মনিবন্ধন, পরিচয় পত্র অথবা পার্সপোর্ট এর ফটোকপি সাথে রাখুন, চেকিং এর সময় প্রয়োজন হতে পারে;
>> সাথে টুপি কিংবা ছাতা অবশ্যই রাখবেন, ট্রলারে প্রচন্ড রোদে এর প্রয়োজন ঠিক তখনই বুঝতে পারবেন;
>> যারা সী – সিকনেসে ভুগেন তারা অবশ্যই ভরাপেটে ট্রলার ভ্রমণ পরিহার করুন;
>> ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাথে অবশ্যই পানির বোতল সাথে নিয়ে যাবেন;
>> অফ সিজনে সেন্টমার্টিন তুলনামূলক নির্জন থাকে, তাই রুম থেকে বের হবার সময় দড়জার সাথে সাথে জানালা গুলো বন্ধ করতে ভূল করবেন না;
>> সেন্টমার্টিন এর স্থানীয়রা খুব বন্ধু সুলভ তাই তাদের সাথে ও বন্ধু সুলভ আচরণ করুন;
>> সেন্টমার্টিনে মিষ্টিপানির পরিমান খুব কম, তাই আপনার সন্তনকে ব্যাগ ভর্তি পনি নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পাঠাতে না চাইলে, মিষ্টিপানির অপব্যবহার পরিহার করুন;
>> আপনার ব্যবহৃত এবং আপনার চোঁখের সামনে যদি কোন ময়লা আবর্জনা থাকে তবে তা তুলে এনে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা করুন ; (সেন্টমার্টিন এ আবর্জনা ফেলার জন্য পেঙ্গুইন আকৃতির ডাস্টবিন রয়েছে)।

Source: Sajib Das‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment