ইন্ডিয়া ট্যুর এর খুঁটিনাটি

জীবনের প্রথম গেলাম ইন্ডিয়া। এটাই আমার প্রথম দেশের বাহিরে যাওয়া তাও আবার একা একা। সর্বমোট ১০ দিন ছিলাম ইন্ডিয়া তার মধ্যে ঘুরেছি হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ,মদ্ধ প্রদেশ,দিল্লী এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল।

@@যাই হোক এখন আসি কখন ,কোথায় এবং কিভাবে ঘুরলাম তা বর্ণনা করা যাক@@

প্ল্যান করেছিলাম এক মাস আগেই। প্ল্যান মতোই ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য এপ্লাই করি এবং কোন ঝামেলা ছাড়া প্রথম বারেই পেয়ে যাই। যেহেতু একা ছিলাম তাই একটু ভয় তো থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিশেষে ভয় কে জয় করেছি।

যাত্রা বর্ণনা ঃ
——————-
ঢাকা টু কোলকাতা ট্রেনে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ২৫০০ টাকা। ঢাকা কেন্টনমেন্ট থেকে ওঠতে হয়েছে। ৩০ দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। রিটার্ন টিকিট করা ভালো নইলে আসার সময় টিকিট পাওয়া যায়না।
কোলকাতায় নেমে সেখান থেকে টেক্সি নিয়ে সোজা নিউ মার্কেট এরিয়া ( মারকুইস স্ট্রিট) এ নেমে টাকা /ডলার চেঞ্জ করেছি একটা হোটেল নিয়েছিলাম ১২০০ রুপী দিয়ে(বিমান লজ) সেখানে একদিন থেকে পরের দিন টেক্সি করে সোজা কোলকাতা এয়ারপোর্ট। টেক্সি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা নিয়েছে। কোলকাতা থেকে প্লেনে করে সোজা দিল্লী। প্লেনের টিকিট করেছিলাম ঢাকা থেকে ৫৫০০ টাকা তে ওয়ানওয়ে টিকিট। দিল্লী নেমে সেখান থেকে উবার করে পাহারগঞ্জ । ভাড়া এসেছিল ৫২৩ রুপী। সেখানে একদিন হোটেল এ থেকে ( রাজ মহল ইন) পরের দিন রুম চেক আউট দিয়ে সোজা চলে যাই উবার করে মজনুকা টিলা ভাড়া আসে ২০০ টাকার মতো।হোটেল ভাড়া ছিল ১০০০ রুপী। অস্থির একটা হোটেল আমার কাছে ভালো লেগেছে। যাই হোক মজনুকা টিলা পৌঁছে সেখান থেকে হেটে গেলাম তানিস্ক হলিডেস ট্রাভেলস । চাইলে অটো করে যাওয়া জায় ভাড়া পার হেড ১০ রুপী।এ ঐখান থেকে মানালির জন্য সন্ধ্যা ৭.৩০ টার
বাসের একটা টিকিট নিলাম। টিকিটের দাম ৯০০-১০০০ রুপী একটু মুলামুলী করলে এর কমেও আসা যায়,কারণ আমি গিয়েছিলাম ৭৫০ রুপী দিয়ে কিন্তু আসার সময় তা পারা একটু কস্টের। দিল্লীতে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে ৭ টার সময় হাজির হলাম বাসের সামনে। লাগেজে ব্যাগ রাখতে ২০ রুপী করে নিবে প্রতিটা ব্যাগের জন্য। বাস ছাড়লো ঠিক একজেক্ট সময়ে। যাত্রা পথে দুইবার বিরতি পরবে প্রথম বার হয়তো হারিয়ানা দ্বিতীয় বার চান্ডীগর আমার একজেন্ট মনে নেই । বাস ছাড়ার ঠিক ১৪ ঘণ্টা পর বাসের সবাইকে মানালি নামিয়ে দেয়। নেমে আমি থান্ডারড হয়ে গেছিলাম। এতো ঠাণ্ডা আগে কখনো পাই নাই। সেখান থেকে একটা টেক্সি নিয়ে চলে গেলাম মাল রোড ভাড়া ৫০ রুপী আবার চাইলে হেটেও যাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে উঠলাম হোটেলে( হোটেল মানালি কমর্ফোট) আগেই বুক করা ছিল। ভাড়া ৬০০ রুপী ডবোল বেড। এক্সটা হিটার নিলে ৩০০ রুপী বেশী পে করতে হবে পার ডে। হোটেল থেকেই জানালা খুল্লেই দেখতে পাবেন বিশাল বরফের পাহার পাশেই একটি বাঙালি খাবারের হোটেল পাবেন ( শ্রী শান্তি নিকেতন)।সেই হোটেল এর অমলেট টা আমার কাছে ভালো লেগেছিল। এর পর থাকার হোটেল এর সাথে ১০০০ রুপী কন্টাক্ট করে টেক্সি করে বেড়িয়ে পরলাম স্নো পয়েন্ট এর উদ্দেশ্য করে তখন রাথাং পাস বন্ধ ছিল। যাবার পথে বরফে থাকার জন্য ড্রেস ভাড়া পাওয়া যায় ২৫০-৩০০ রুপীর ভিতরে। সেগুলে ভাড়ায় পরে চলেগেলাম বরফে অনেক ক্ষণ থাকলাম বরফের মাঝে হাল্কা স্নোফল হচ্ছিল সেখানে । সেখানে থেকে অনেক ক্ষণ সময় দিয়ে পুরোটা ঘুরে চলে গেলাম ওল্ড মানালি যাবার পথে ড্রেস গুলো ব্যাক করলাম। ওল্নাড মানালি গিয়ে টেক্সি ছেড়ে দিলাম। তখন ভাবলাম টেক্সি না নিয়ে হেটে আসলে আমাদের ১০০০ রুপী বেচে যেতো সামান্য এতটুকু রাস্তা তাই নাকি ১০০০ রুপী? অল্ড মানালির ব্রিজের নিচে নেমে ছবি তুলে সিরি বেয়ে চলে গেলাম পাহারের উপর হেটে হেটে চলে গেলাম হাদিম্বা টেম্পল সেখান থেকে আসে পাসের স্পট গুলো দেখলাম। পরের দিন কিছু সপিং করলাম আর আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করলাম। সেখানে কাশ্মেরী ভালো শাল পাওয়া যায় যদি একটু সময় দিয়ে কেনা যায় আর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর শো-পিছ। দু দিন থেকে আবার দিল্লীর উদ্দেশ্য করে রউনা দিলাম টিকিট কাটলাম আগের বাসেই এটার কাউন্টার মানালির একেবারে মেন রাস্তায় মোড়ে গিয়ে ঠিক হাতের ডান পাশেই। ৪.৩০ এর বাস। আসার সময় আর তেমন কমাতে পারিনি ৮৫০ রুপীতে আসতে হয়েছে। বাস ছাড়লো ঠিক ৪.৩০ এ। বাস আমাদের কাশ্মিরী গেট নামিয়ে দিল ভোর ৬ টায়। সেখান থেকে আবার পাহারগঞ্জ। হোটেলে (হারে কৃস্ন) উঠলাম। বাজে একটা হোটেল।ঐখানে যে রুম ছারভেন্ট সে বলে -“হাম হিন্দুস্তানিকো ভাই মান্তেহে ওর বাকি ছাভিকো কাস্টমার মান্তাহে”। হোটেল ভাড়া ৭০০ রুপী কিন্তু আগে জানলে ৩০০ দিয়েও থাকতাম না। অনলাইন এ একরকম আর সামনা সামনি এক রকম। এর পর সেখানে হোটেল থেকে দিল্লী ঘোরার জন্য টেক্সি বুক করলাম ১৪০০ রুপী সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত। আগে জানলে নিজেরাই টেক্সি করে নিতাম। তাহলে আরো রুপী বাচাতে পারতাম। টেক্সি করে বেড়িয়ে পরলাম প্রথমে দিল্লী গেট আবার অনেকে বলে ইন্ডিয়ান গেট এর পর দিল্লী জামে মসজিদ সেখান থেকে জুম্মার নামাজ পরলাম
এতো মানুষ একসাথে নামাজ মনে হয় প্রথম পরলাম। এর পর চলে গেলাম দিল্লী লাল কেল্লা,এর পর লোটাস টেম্পল এবং সব শেষএ নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাঝার। সেখান থেকে সোজা হোটেল এর পর রাতের খাবার খেয়ে আগ্রার জন্য হোটেলে থেকে বাস বুক করলাম এক একজনের সিট এর দাম পরলো ৭০০ রুপী। আগে জানলে বাসে না গিয়ে শেয়ার করে গারি দিয়ে যেতাম খরচ পরতো ১২০০ রুপী তাই প্রতারিত হতাম না। রাতে ঘুমিয়ে সকাল ৬ টার দিকে একজন হুন্ডা দিয়ে নিয়ে গেলো বাসের সামনে সেখানে বাসে উঠে প্রথমে নিয়ে গেলো আগ্রা লাল কেল্লা যেটা কিনা সম্রাট আকবর বানিয়েছিলেন তার শাসন আমলে । সেখান থেকে চলে গেলাম আগ্রা তাজমহল তাজমহল সেখান থেকে তাজমহল যাবার পথে অনেক দোকানে থামিয়েছিল যাদের সাথে ট্র্যাভেল কোম্পানি গুলোর চুক্তি থাকে কাস্টমার এনে দেবার জন্য। যাই হোক আমাদের শাহজাহান এর তাজমহ্ল ঘোরার সময় খুব কম পেলাম। সব জায়গার টিকিট যেমন আগ্রা আকবরের লাল কেল্লা এবং তাজমহল এর প্রবেশ টিকিট নিজেরাই কাটা ভালো বাস ওয়ালাদের কাছে দিলে তারা রুপী বেশী নেয় আর ভয় দেখায় এই হবে সেই হবে । অনেক চিটারি করে।যাই হোক তাদের নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছেড়ে দেয় দিল্লী উদ্দেশ্য করে। বাস আমাদের আবার সেখান থেকে দিল্লী নামিয়ে দিয়ে যায়। পরের দিন ফ্লাইট কোলকাতার। দিল্লী থেকে টিকিট কেটেছিলাম। দিল্লী টু কোলকাতা প্রাইজ পরেছিল ৭৮০০ রুপী। সকালে অটো নিয়ে চলে গেলাম দিল্লী এয়ারপোর্ট। ভাড়া এসেছিল ৪০০ রুপী। কোলকাতায় পৌছে সেখান থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে ভাড়া করলাম মারকুইস্ট স্ট্রিট । সেখানে অনেক খোজা খোজি করার পর একটা হোটেল( রাজ গেস্ট হাউজ) পেলাম .। হোটেল টা আসলেই অনেক সুন্দর কিন্তু বাহির থেকে তা মনে হয় না। সুন্দর ৩ তলা থেকে। রুম ভাড়া ১৪০০ রুপী। কোলকাতার হোটেল ভাড়া অনেক বেশী এবং খাওয়া দাওয়ার খরচো। পরের দিন সেখান থেকে চলে গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল । টেক্সি ভাড়া ১০০ রুপী। গিয়ে টিকিট কাউন্টারে শুধু বলেছি দাদা দুটো টিকিট দিন সে আমার কাছ থেকে ২০ রুপী রেখে বাকী ৮০ রুপী ফেরত দিল ।টিকিট নিয়ে পাশের তাকিয়ে দেখলাম ২০ রুপী শুধু ইন্ডীয়ান দের জন্য আর নন ইন্ডীয়ান ২০০ রুপী। যাই হোক টিকিট নিয়ে সুন্দর মতো ঢুকে যাই ভিতরে । কিছুক্ষণ ঘুরা ঘুরি করে ছবি চুলে বিপরীত গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাই। বেচে গেলো ১৮০ রুপী হা হা হা। আবার ১০০ রুপী দিয়ে চলে আসলাম নিউ মার্কেট সাখান থেকে কিছু কেনা কাটা করলাম এর পর বাসার জন্য কিছু কেনার জন্য একটা টেক্সি নিয়ে চলে গেলাম কলেজ স্ট্রীট সেখান সব বড় বড় কাপড়ের শো-রুম। সব ফিক্সড দোকান । কেও আপনাকে ঠকাতে পারবে না । মোহীনি মোহন, আদী ঢাকেশ্বরী আরোও অনেক । সেখান থেকে কেনা কাটা করে আবার চলে আসি হোটেল এ । দু দিন কোলকাতা থেকে পরের দিন শ্যামলী ডাইরেক্ট বাসে ঢাকার রউনা দিলাম ভাড়া পরেছিল ১৪০০ রুপী। আসার সময় ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশী কাস্টমস কে কিছু দিতে হয়েছিল। এটাকে আমি চাঁদাবাজি ছাড়া অন্য কিছু বলবো না । ইউনিফরম পরে কিভাবে টাকার জন্য হাত পাতছে ইন্ডীয়া আর বাংলাদেশের পুলিশ ।টাকা না দিলে হয়রানী করছে।যাই হোক সব ঝামেলা শেষে এই পারে আবার ঠিক সেই বাসেই উঠে বসলাম। ফেরী পেতে আমাদের তেমন কোন সমস্যা হয় নাই। কিন্তু ফেরী পার হয়ে ড্রাইভার চোখে আর কিছু দেখে নি । চারিদিক কুয়াশায় ঢেকে গেছে হেড লাইট দিয়েও তেমন কোন কাজ করছে না । আল্লাহ আল্লাহ করে হর্ন বাজাতে বাজাতে বাজাতে এগুতে থাকে আর এই ফাকে আমিও কখন ঘুমিয়ে যাই বুঝতে পারি নি । চোখ খুলে দেখি অনেকেই নামছে আর বাস থামিয়ে রেখেছে আমি মনে করলাম হয়তো এসে পরেছে পরে জানতে পারি এটি কল্যাণপুর । সেখান থেকে বেশী সময় লাগে নি কমলাপুর আসতে। ঠিক রাত ৩ টার দিকে বাস আমাকে কোমলাপুর নামালো। সেখান থেকে আল্লাহর অশেষ রহমতে একটি রিকশা পেয়ে গেলাম । রিকশা ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম বাসার সামনে। বাসায় উঠতে উঠতে ৪ টার কাছা কাছি।

এর সাথেই শেষ হলো আমার ইন্ডিয়া মিশন তাও আবার একা বুকে অনেক সাহস নিয়ে।

Post Copied From:ftakhairul Alam Tomal‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment