কক্সবাজার- টেকনাফ ভ্রমন-৩

কক্সবাজার যারা বেড়াতে যাবেন, তাদের কাজে আসতে পারে ভেবে শেয়ার করলাম।

১। পিক টাইমে কক্সবাজার বেড়াতে যাবার প্ল্যান না করাই ভালো। হোটেলের ভাড়া সহ যে কোন স্বাভাবিক খরচ আপনার কয়েকগুন বেশি হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আপনি কোথাও ঘুরে শান্তি পাবেন না।

২। অফ পিক টাইমে কক্সবাজারে বেড়াতে গেলে আপনি ১২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায় অনেক ভালো হোটেল পাবেন। আপনাদের যদি প্ল্যান থেকে যে, দিনের অধিকাংশ সময় আপনারা বীচে আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে কাটাবেন, তাহলে হোটেলে বেশি খরচ না করাই ভালো। আর যদি একদম রিলাক্স করার জন্য যান, তাহলে হোটেলটা ভালো নিতে পারেন। এটা অবশ্যই যার যার বাজেটের উপর নির্ভর করবে। যদি কারো বাজেট পার নাইট ৫/৬ হাজার হয়, তাহলে আমি রেকমেন্ড করব হোটেল স্যায়মান এ থাকার জন্য। এই হোটেলে থাকলে একটাই সমস্যা হবে, আপনার আর অন্য কোথাও থাকতে ইচ্ছে করবে না। আমার মতে এই মুহুর্তে কক্সবাজারের সেরা হোটেল হচ্ছে এটি।

৩। অফ পিকে কক্সবাজার থেকে ইনানী বীচে ৭০০/৮০০ টাকায় আপনি অটোতে যেতে পারবেন। আর পিক টাইমে গেলে ১২০০ – ১৫০০ টাকার কমে যাবে না। আমি ৮০০ টাকায় গিয়েছি। আমরা খুব ভাগ্যবান যে চমৎকার একজন মানুষকে আমাদের টমটম গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে পেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে চোখে হাত দিয়ে দেখিয়েছেন মানুষকে পয়সা দিয়ে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। গরীব মানুষের হৃদয় অনেক বড় হয়। আমাদের প্রতি তার আন্তরিকতা সৎ পরামর্শ এবং আতিথিয়েতা সেটাই প্রমান করে। কক্সবাজারে আমরা যে ৫ দিন ছিলাম, তিনি আমাদের সাথেই ছিলেন কখনও গাইড হয়ে, কখনও ফটোগ্রাফার হয়ে, কখনও চালক হয়ে। কেউ যদি চান, তার নাম্বারটা আমি দিয়ে দিতে পারি।

৪। মেরিন ড্রাইভ রোডের মাঝামাঝি পেঁচার দ্বীপের আগে একটা রিজোর্ট করেছে নাম সাম্পান। যদি জোয়ার থাকে তাহলে সেখান থেকে সুর্যাস্ত দেখাটা দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতা হতে পারে। বলা বাহুল্য সেখানে বসতে আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। চাইলে আপনি অর্ডার করতে পারেন। যাওয়া যাওয়া সব মিলিয়ে আপনার ৫০০/৬০০ টাকার মত খরচ হতে পারে। টুরিষ্ট পুলিশ আছে। অন্তত সন্ধ্যা ৮ টা নাগাদ নিরাপত্তার তেমন কোন সমস্যা নেই বলেই আমার মনে হয়েছে।

৫। কক্সবাজারে যদি আপনি নতুন হন, আর টমটমের ভাড়া সম্পর্কে না জানেন, তাহলে আপনাকে তারা একেবারে জবাই করে দিবে। যেমন কলাতলী রোডের ওশান প্যারাডাইস হোটেল থেকে বিখ্যাত পৌষি রেষ্টুরেন্টের ভাড়া ৪০/৫০ টাকা। আপনাকে একটু নতুন মনে হওয়া মাত্রই সেই ভাড়া চাওয়া হবে ৯০ – ১২০ টাকা পর্যন্ত। সুতরাং যেখানেই যান না কেন, ভাড়া আগেই ঠিক করে যাবেন। তবে আশার কথা অধিকাংশ টমটম ড্রাইভারই ভালো।

৬। খাওয়া দাওয়া যেখানেই করেন না কেন, আমি অনুরোধ করব, যে কোন একদিন সকালে পৌষি রেষ্টুরেন্টে নাস্তা করতে। তাদের খিচুড়িটা মনে রাখার মত। তবে যা আপনাকে খেতেই হবে তা হলো পরটা বা নান দিয়ে আলু গোসতের ঝোল। অমৃত মনে না হলে, পোস্টে রিপোর্ট করতে পারেন। কলাতলী রোডে যে কোন হোটেলে খাওয়ার চাইতে, একটু কষ্ট করে এসে যদি এই হোটেলে খান, তাহলে অন্তত আপনি দাম দিয়ে ভালো জিনিস খাবেন, আপনাকে স্বাদ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

৭। শুটকি যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য অনুরোধ, কলাতলী রোড বা বার্মিজ মার্কেট থেকে শুটকি কিনবেন না। শুটকি কিনতে একটু কষ্ট করে পুরাত শুটকি মার্কেট বা বড় বাজারের শুটকি মার্কেটে চলে যান। সেখানে আপনি অনেক দোকান পাবেন। আপনি প্রথমেই সব দোকানে একটু ঢুঁ মারবেন, বিভিন্ন দামের শুটকি দেখেন। আপনার চেষ্টা থাকবে ১০ টাকা বেশি দিয়ে হলেও কীটনাশক ও লবন মুক্ত শুটকি মাছ কেনার জন্য। আমি অবশ্য একটা নাম সাজেস্ট করতে পারি। তিনি হলেন বশির সওদাগর। তার কাছ থেকে কক্সবাজারের বড় বড় হোটেল এবং স্থানীয়রা শুঁটকি কিনে থাকেন। তার কাছে লইট্ট্যা শুটকির ৩ পদ দেখেছি, সর্ব নিম্ন ৩৮০, মাঝারিটা ৪৫০ টাকা আর সবচেয়ে ভালোটা ৫৫০ টাকা। ঢাকাতে এই ৩৮০ টাকার শুঁটকি ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ছুরি শুঁটকি পাবেন ৯০০ টাকা কেজি। রুপ চান্দা পাবেন ১৫০০ টাকা কেজি। রুপ চান্দা দুইটা আছে। একটা কালো আর একটা সাদা। কালোটার দাম কিছুটা কম আর সাদাটার দাম কিছুটা বেশি। সবাই যদিও সাদাটাই খুঁজে, আমি কালোটাই কিনেছি। এটার স্বাদ আমার ভালো লেগেছিলো।

৮। বার্মিজ মার্কেটে রাতে বেড়াতে গেলে সাবধান। এখানে পকেটমার ও নানান ধরনের আজেবাজে লোক ঘুরাফেরা করে। এই সব কাজ দিনের বেলা সেরে ফেললেই ভালো। মনে রাখবেন ঘুরতে গিয়ে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘুমানো কোন কাজের কথা না।

Share:

1 Comment

  • মনজু">মনজু

    সুন্দর সাজেশান। গোসলের ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার ব্যাপারটা সাবধানতা করে দিলে ভাল হত। 🙂

    Reply

Leave a Comment