কেরালা ট্যুর

কয়েকজন ভাইয়া আর আপুর অনুরধে আমার কেরালা ট্যুর এর কিছু ছবি শেয়ার করলাম।
১। আমাদের ট্যুর এর সকম ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কলকাতা এর নবকুমার দাদা। উনি আমার সকল ট্যুর অপারেট করে থাকেন। আমরা কলকাতা থেকে চেন্নাই এক্সপ্রেসে করে চেন্নাই যাই আর এটা প্রায় ২৮ ঘণ্টার রেল ভ্রমন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জয়ললীতা হাসপাতালে ছিলেন আর তাই সেখানকার অবস্থা নিয়ে চিত্নায় ছিলাম। আমরা চেন্নাই এর মাউন্ট রোডের একটা ৩* এ ছিলাম। এই রোডের খুব কাছেই বিখ্যাত মেরিনা বিচ। অনেক সুন্দর একটা বীচ। চেন্নাই শহরটা অনেক সুন্দর, গোছানো আর পরিপাটি। সেখান থেকে আমরা এক্সপ্রেস অয়ে হয়ে পন্ডিচেরিতে চলে গিয়েছিলাম আর সেখানে ঢোকার পথে এন্ট্রি করতে হয়। আমাদের ড্রাইভার নিজেই সব করেছিলেন। এতো সুন্দর, সোজা রাস্তা খুব কমই দেখেছি। পন্ডিচেরীতে আমরা ওরো বিচ, অরবিন্দ আশ্রম, রক বিচ, মহাত্মা রোডের মেইন চার্চ ইত্যাদি দেখেছিলাম। পুরা শহরেই অনেক ফরাসি নাগরিক দেখতে পাবেন আর শহরটা এতো সুন্দর যে দেখে মনে হবে আপনি ফ্রান্স এ চলে এসেছেন।

২। পন্ডিচেরী থেকে আমরা ট্রেনে করে কেরালা এর রাজধানী ত্রিভান্দামে গিয়েছি। পথে অসাধারন ভিউ আপনি দেখতে পাবেন। যা দেখছিলাম তাই যেন ভাল লাগছিলো। ত্রিভান্দাম স্টেশনে আমাদের জন্য গাড়ি রেডি করাই ছিল। সমস্যা হচ্ছে এখানকার কেউ হিন্দি বা ইংরেজী ব্যবহার করে না, তামিল আর মালায়লাম ভাষায় কথা বলেন। তাই তাদের সাথে কমিউনিকেট করা একটু জটিল। ড্রাইভার আমদের সোজা কোভালাম বিচ এরিয়া তে নিয়ে যায় যেটা নিয়ে আমি আরেকটি জায়গায় লিখেছি। এখানে যতো সময় কাটানো যায় ততই ভাল লাগে। সেখান থেকে আমরা গাড়িতে করেই কন্যাকুমারীতে যাই। মাঝে দেখে নেই শতাব্দী পুরাতন সুচিন্দ্রাম মন্দির। বিশাল এই মন্দিরে সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে হয় আর প্রবেশের সময় ছেলেদের খালি গায় আর জুতা খুলে প্রবেশ করতে হয়। ছবি তুলতে পারমিশন নিতে হয়।

৩। কন্যাকুমারী… তামিলনাডু রাজ্যের অন্তর্গত ভারতের একেবারে শেষ সীমানা। ভোর বেলা সূর্জ উঠা দেখার জন্য রুম থেকে বের হয়েই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার তিন দিকে বিশাল সাগর আর নতুন দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। কি যে একটা অনুভুতি ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। পরে আমরা কন্যাকুমারী এর বিবেকানন্দ রক দেখতে যাই। একটা ফেরি টাইপ জাহাজে করে যেতে হয় সমুদ্র দিয়ে, পানি অনেক উত্তাল। ভয় পাবার কিছু নেই। বিবেকানন্দ রকে গেলে আপনার মনে হবে যে কই এলাম। সেই সুন্দর অনভুতির কথা লিখে বুঝাতে পারবো না। সেখান থেকে আমরা গেলাম ত্রিবেনি তে যেখানে তিন সাগরের পানি এক হয়- আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর পরস্পর মিলিত হয়েছে, সেখানেই দেবী কুমারীর মন্দির অবস্থিত আর আপনি ভারতের শেষ সীমানার রকের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারবেন। এখান সাগরে খুব একটা নামতে দেয়ে না পুলিশ কারন অনেক উত্তাল থাকে পানি। এই শহরের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলি হল দেবী কুমারীর মন্দির, বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, প্রাচীন তামিল কবি তিরুবল্লুবরের ১৩৩ ফিট উঁচু মূর্তি এবং গান্ধীমণ্ডপম্‌ (ভারত মহাসাগরের জলে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভষ্ম বিসর্জনের আগে এখানে তা রাখা হয়েছিল)।

৪। পরের গন্তব্য ছিল মাদুরাই। এটা মন্দিরের শহর। অনেক পুরাতন আর বড় বড় মন্দির আছে এখানে। মীনাক্ষি মন্দির এখানকার প্রধান দেখার জায়গা। অনেক সিকিউরিটি থাকে এই মন্দিরে, প্রবেশের পড়ে ছবি তুলতে ৫০ রুপি টিকেট কাটতে হবে। আর্কিটেকচারাল বিউটি অনেক সুন্দর। ৩-৪ ঘণ্টা লাগবে পুরা মন্দিরটি ভাল্ভাবে ঘুরে দেখার জন্য। এছাড়াও আছে কোদাল আজগার মন্দির, থিরুমালাইনায়াক্কার মন্দির, গান্ধী মেমরিয়াল ইত্যাদি। চিকিতসার জন্য এখানকার এপোলো হাস্পাতাল বিখ্যাত।

৫। পুনরায় আমরা কেরালা রাজ্যে প্রবেশ করি মুন্নার দিয়ে। এতদিন অনেক গরমের মাঝে ছিলাম কিন্তু মুন্নার এ যাওয়ার সাথেই বেশ শীত। জ্যাকেট গায়ে থাকা। মুন্নার যাবার পথটা অনেক এক্সাইটিং। পথে পথে দাঁড়াবেন আর ছবি তুলবেন। পুরাটাই পাহাড়ি পথ। এই এলাকায় খ্রিস্টান সম্প্রদায় এর মানুষ বেশী, গরুর মাংস অনেক ভাল রান্না করে। অনেক গুলো চার্চ ভিজিট করেছি। ইরাভিকুলম জাতীয় উদ্যানমুন্নার ও তার আশেপাশে অবস্থিত আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইরাভিকুলম জাতীয় উদ্যান। মুন্নার থেকে আনুমানিক 15 কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই উদ্যানটি মূলত অবলুপ্তপ্রায় পাণীদের জন্য বিখ্যাত, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নীলগিরির বুনো ছাগ। আনুমানিক 97 বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যান নানান ধরনের দুর্লভ প্রজাপতি, জীবজন্তু ও পাখিদের বসবাসস্থল। মুন্নার শহর থেকে 13 কিলোমিটার দূরত্বে স্থিত আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল মাত্তুপেত্তি। সমুদ্র সমতল থেকে আনুমানিক 1700 মিটার উচ্চতায় স্থিত মাত্তুপেত্তি শহরটি সংরক্ষণ স্থাপত্যমূলক জলাধার ও সুন্দর ঝিলের জন্য বিখ্যাত, যেখানে আপনি নৌবিহার করতে পারেন এবং এখানকার পারিপার্শ্বিক অঞ্চল ও ভূদৃশ্যের ভরপুর আনন্দ নিতে পারেন। আর চা বাগান। পথের পাশে সারি সারি চা বাগান। টাটা টি এস্টেট মাইলের পরে মাইল। পথে দাড়িয়ে ২ রুপি দিয়ে খাটি চা খেয়ে দেখতে পারেন। এখানে পাওয়া যায় ঘরের বানানো চকলেট। কেজি হিসেবে কিনতে পারবেন সেই চকলেট, দাম ০৩০০-৫০০ রুপি/ কেজি…

চলবে- আলেপ্পি, কোচি, মহাবালিপুরাম …

Context copied from:Rashed Rahman
Share:

Leave a Comment