ঘুরে আসুন নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপগুলোর উত্তরে গোল্ডেন বে

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপগুলোর উত্তরে নব্য দর্শনীয় স্থান আবেল তাসমান। এই জাতীয় উদ্যানের দর্শনার্থী প্রতিবছরই ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে কায়াকিংয়ের জন্যেও আবেল তাসমান অঞ্চলে চলে আসেন। এই সুরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা স্বচ্ছ নীল রঙের পানি এবং এর তীরে গড়ে ওঠা সুন্দর সুন্দর কাঠের কটেজগুলোর জন্য পরিচিত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আবেল তাসমান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি উপকূলীয় অঞ্চল ভ্রমণের জন্য বর্তমান বেশ ব্যস্ততম এলাকা আবেল তাসমান।

এর উত্তর উত্তরাঞ্চলীয় পাথুরে হেড ল্যান্ডের বাইরে গোল্ডেন-বে দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ১৬৪২ সালে এখানে প্রথমে ইউরোপীয়রা এসেছিলেন, যারা পরবর্তীতে আবেল তাসমান এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এই ঘটনার সময় স্থানীয় ও ইউরোপীয় সংস্কৃতি দাঙ্গার জন্যে রেষারেষির সৃষ্টি হলে এই দাঙ্গার মধ্যে চারজন ডাচ নাবিকের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার জন্য আবার আবেল তাসমান মার্ডারার বে নামেও পরিচিত ছিল।

কিন্তু উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গোল্ড রাশের পর এটিকে গোল্ডেন বে নামে সকলে চিনেছেন এবং ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডে গোল্ডেন বে নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশের সাথে এই উপসাগরটি একটি প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল যুক্ত রিসর্ট হিসেবে গড়ে উঠেছে।

সকল ধরনের সামুদ্রিক এ্যাক্টিভিটির পাশাপাশি শুরু হয়েছে ক্যাম্পিংয়ের উৎসব। নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত পরিবেশের কারণে এখানে লোক সমাগম হচ্ছে বেশ ভালো পরিমাণ। তাই গোল্ডেন বে নিউজিল্যান্ডের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হিসেবে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

সড়কপথে গোল্ডেন বে
স্ক্যানার নামে একটি মাত্র সড়ক পথ গোল্ডেন বেকে অন্যান্য রাজ্যের সাথে একত্রিত করেছে। বাইরে এবং ভেতর থেকে স্টেট হাইওয়ের সাথে যুক্ত সাইটটিতে আলাদা আলাদা ট্রেইল দিয়ে হাইকিং করেও এই গোল্ডেন বেতে পৌঁছানো যায়। যদিও নেসসনের থেকে ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমে এই জায়গাটির অবস্থান তারপরও নগর বা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বটি কমও নয়। তাই এখানে গিয়ে শহুরে জীবন যাপন থেকে সহজেই বন্যতার মাঝে ফিরে যাওয়া যায়। উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক জীবন।

গোল্ডেন বেতে রয়েছে ৭৯১ মিটার উঁচু একটি পাহাড়। যেটিতে যাবার জন্য প্রত্যেকটি ট্রেইল মার্ক করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলে খুব সহজেই আপনি এর চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন না। সামিটের কিছু আগে সম্পূর্ণ অচেনা প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা আপনাকে পাড়ি দিতে হবে হেঁটে হেঁটে। যে জায়গাটি কানাডিয়ান অফ দ্য রিংস নামে পরিচিত। এই রাস্তাটি ঘোরানো প্যাঁচানো হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেছে বলে অধিকাংশ দর্শনার্থীরা পথ ভুল করে অন্যদিকে চলে যান। তাই গোল্ডেন বের এই পাহাড়ে পৌঁছাতে হলে আপনাকে সঠিক ট্রেইলেই এগোতে হবে।

গোল্ডেন বেতে যাবার পর এই ট্রেইলে হাঁটার সময় মনে রাখবেন পূর্ব দিকের রাস্তাগুলো বহারা শহরে গিয়েছে এবং উত্তর দিকের রাস্তাগুলো আবেল তাসমান জাতীয় উদ্যানের দিকে পৌঁছেছে। পৌঁছানোর পর বাড়তি রাস্তাগুলো চলে গিয়েছে তাকাকা এবং কলিংউড নামে শান্ত দুটি শহরে। যেটা পরবর্তীতে আপনি ট্রাভেল ডেস্টিনেশান হিসেবে ধরলেও লস করবেন না, কারণ শান্ত শহরগুলোতে দুই একদিন শান্ত জীবন যাপন করতেই যান অনেকে।

গোল্ডেন বে যাবার পর যে কাজগুলো করতে পারেন

এর আশেপাশে বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় আছে। আপনার যদি বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে একজোট হয়ে ঘুরতে ভালো লাগে বা তাদের প্রত্যাহিক জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হতে ভালো লাগে তবে এই আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর সাথে কয়েকটা দিন থেকে যেতে পারেন। এর কারণে হয়তো আপনার কয়েকদিন সময় লস হয়ে যেতে পারে তবুও বেশী সময় থাকলে চেষ্টা করুন। এগুলো ছাড়া গোল্ডেন বেতে প্রচুর এ্যাক্টিভিটি আছে। যেমন আবেল তাসমানের সমতল পাথরের বেশ কিছু ট্রেকিং।

উপসাগরীয় অঞ্চলে একটা থেকে অন্যটা পর্যন্ত পাথুরে পথে প্রায় ৫ থেকে ৬ দিনের ট্রেকিং ট্রেইল পর্যন্ত আছে। ইচ্ছা করলে এই ট্রেইলগুলোতে নেমে যেতে পারেন। পথের মধ্যে কোনো ঝর্ণার ধারে হয়তো ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। বেশ কিছু বড় বড় পাথুরে ঝর্ণার দেখা মিলবে এর দক্ষিণ উপকূলের পাহাড়গুলোতে। এছাড়া টাটা উপকূল থেকে কায়াক করে পুপংগা সমুদ্রতটে চলে যেতে পারেন অথবা ওয়াইনুই ফলস থেকে হাঁটতে-হাঁটতে বিভিন্ন আর্ট গ্যালারি এবং স্থানীয় শিল্পীদের স্টুডিওতে ঘুরে আসতে পারেন।

বসন্তের দিনগুলোতে এই মহা সমুদ্র অঞ্চলে আপনি পৃথিবীর সব থেকে পরিষ্কার জলের ঢেউ দেখতে পাবেন। এখানকার স্থানীয় বারগুলোতে প্রায়শই নিউজিল্যান্ডের ফোক মিউজিক সম্পর্কিত ছোট ছোট উৎসব হয়ে থাকে। এই লাইভ উৎসবগুলোতে রাত্রিকালীন সময় খুব ভালোভাবে পার করতে পারবেন। সব মিলিয়ে বেশ কয়েকদিনের আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য এই

আপনি শ্যাগ, টার্নস্টোন, পাইড অস্টস্টারকাস্টার, গডওয়েট, ক্যাস্পিয়ান টার্ন, হোয়াইট ফ্রন্টেড টার্ন, অষ্ট্রেলাসিয়ান গ্যানেটস এবং ব্যান্ডেড ডটট্রেল এবং সেইসাথে সূর্যের মধ্যে বসন্তের সীল দেখতে পাবেন। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় কিছু মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে এই গোল্ডেন বে নিউজিল্যান্ডের সবথেকে নিরিবিলি এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি ইকো-ট্যুরিজম স্পট। তাই পরিবার বা বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ডের এই গোল্ডেন বে হতে পারে অন্যান্য সব গিজগিজে টুরিস্ট স্পটের অন্যতম বিকল্প।

Share:

Leave a Comment