মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট

গৎবাঁধা জীবনের একঘেয়ে রুটিন থেকে বের হয়ে কিছুটা প্রাণের স্পন্দন পেতে শহরের বাহিরে কোথাও ঘুরে আসলে মন্দ হয়না। তবে সময়ের অভাবে অনেকেই কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটি যেতে পারেন না। সময়-সুযোগ, অর্থ সবকিছু মিলিয়ে আর যাওয়া হয়ে উঠে না। আর তাই তাদের জন্য সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকার আশেপাশে কোথাও ঘুরে আসাই শ্রেয়। ছুটির দিনে অথবা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন অথবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরেই মৈনট ঘাট থেকে।

মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত মৈনট ঘাট শহরবাসীদের জন্য কম খরচে কাছে কোথাও থেকে ঘুরে আসার জন্য দারুণ এক জায়গা। রাজধানী থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন মৈনট ঘাট থেকে।

মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট

মৈনট ঘাট ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের দোহার উপজেলার একটি জায়গা। যার এপাড়ে দোহার আর ওপাড়ে ফরিদপুর অবস্থিত। এ ঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর আর সামনে বিস্তীর্ণ পদ্মা। এখানকার মূল আকর্ষণ পদ্মা নদীর উত্তাল ঢেউ আর নৌকা ভ্রমণ। যা এই জায়গাকে করে তুলেছে জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ-স্থান। পদ্মার অপরূপ জলরাশি মুগ্ধ করে এখানে আগতদের। দিগন্ত-জোড়া জলরাশি আর নদীর বুকে জেলেদের সারি সারি নৌকা দেখে মনে হবে আপনি বুঝি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছেন। আর তাইতো এর নাম হয়েছে মিনি কক্সবাজার।

বিস্তীর্ণ জলরাশির উথাল-পাতাল ঢেউ আর নির্মল আকাশের সৌন্দর্য এখানে সৃষ্টি করে চমৎকার এক দৃশ্য। এই পদ্মা নদীর চর যেনো সমুদ্রের কোনো বেলাভূমি। এখানে পদ্মার বুকে স্পিড-বোট অথবা ট্রলার নিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াতে পারবেন। প্রচুর রংবেরংয়ের পালের নৌকার সমাহার দেখা যায় মৈনট ঘাটে। পদ্মার নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দুতিন ঘণ্টার জন্য ইঞ্জিন নৌকা অথবা স্পিড বোট নিয়ে মৈনট ঘাটের কোলাহল ছেড়ে নদীর বুকে ঘুরতে দারুণ লাগবে। আট জনের চড়ার উপযোগী একটি স্পিড বোটের ভাড়া ত্রিশ মিনিটের জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়াও ছোট বড় নানান আকারের ইঞ্জিন নৌকাও আছে। আড়াইশ থেকে ৮শ’ টাকা ঘণ্টায় এসব নৌকাগুলো ভাড়ায় পাওয়া যায়। ২০/২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে পারে এসব নৌকায়।
এখানে গোধূলি-বেলার সোনালী রূপ অতুলনীয়। সূর্য ডুবার বিদায় বেলায় প্রকৃতি অসাধারণ রূপ ধারণ করে এখানে। পদ্মার পাড়ে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করা আপনার জন্য চমৎকার এক অভিজ্ঞতায় পরিণত হবে।

মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট

মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে পদ্মার মাছও কেনার সুযোগ রয়েছে। নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা হওয়া জেলে নৌকা থেকেও মাছ কিনতে পারেন। এছাড়া এখানেই নিতে পারবেন পদ্মার তাজা ইলিশের স্বাদ। বেশ কিছু খাবার হোটেল গড়ে উঠেছে এখানে। ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভর্তা, ইলিশের বেশ কয়েক রকম আইটেম পাওয়া যায় এই হোটেলগুলোতে। ইলিশ ছাড়া নদীর অন্যান্য মাছ, খাসি-মুরগির মাংসের তরকারি, ডাল সবই পাওয়া যাবে। এগুলোর দরদামও হাতের নাগালেই।

মৈনট ঘাট দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। এসময় নদী কানায় কানায় ভরে উঠে। চারদিকের অথৈ জলরাশি, নদীতে পাল তোলা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো আর তার উথাল-পাতাল ঢেউ এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে।

মৈনট ঘাট গেলে সাথে দেখে আসবেন নবাবগঞ্জের কলাকোপার ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ, প্রাচীন প্রাসাদ, এন হাউজ, জগবন্ধু সাহা হাউজ এবং খেলারাম দাতার বাড়ি। এছাড়া নবাবগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন জজ বাড়ি ও উকিলবাড়ি দেখতেও ভুলবেন না।

“মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট”
কিভাবে যাবেন:

রাজধানী ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে যাওয়ার সব থেকে সহজ ও সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে বাস যোগে। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় যমুনা পরিবহনে বাস। প্রায় বিশ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। সারাদিন ঘুরার পর ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকায় চলে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মনে রাখবেন মৈনট ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাসটি ছেড়ে দেয় সন্ধ্যা ৬টায়। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে একই রুট ধরে অর্থাৎ বাসের রুটটি অনুসরণ করেই যেতে হবে।

প্রয়োজনীয় কিছু ভ্রমণ টিপ-স:

• সাঁতার না জানা থাকলে গোসল করার সময় নদীর বেশি গভীরে যাবেন না। ইতিপূর্বে এখানে ডুবে যাবার ঘটনা ঘটেছে।
• অপচনশীল দ্রব্য যেমন-পানির প্লাস্টিক বোতল, খাবার প্যাকেট, পলিথিন ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
• নৌ-ভ্রমণের সময় অবশ্যই লাইফ সেভিং জ্যাকেট পরিধান করবেন।

Share:

Leave a Comment