শাহপরির দ্বীপ ভ্রমণে যেভাবে যাবেন ও খরচাবলি

জীবনের সবচেয়ে এডভেঞ্চেরাস জার্নির মধ্যে অন্যতম এই জার্নি। কক্সবাজারের বাসিন্দা আজ প্রায় পনের বছর কিন্তু এই জায়গাটায় যাওয়ার সময় কেন হল না সেটা নিয়ে মনটা একটু খারাপই হল। কাউকে না পেয়ে একাই গিয়েছিলাম। শুরুতেই বলে রাখি, এখানে একরাত থাকতে পারলে ট্যুরটার ষোলআনা পূর্ণ হবে। এবং আমি সেটাই করেছিলাম। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি ওখানে কোন বন্ধু থাকে। ট্যুরে যাওয়ার পর আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন।

ওইদিকটায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল অনেক আগেই। কিন্তু যাওয়া হয়নি। যে বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম সে বন্ধুর একটা ছবি দেখি মেসেঞ্জার এর মাই ডে তে ঈদের দিন চারেক আগে। সেখানে কমেন্ট করে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ছবিটা কোথাকার? সে উত্তরে বলে এলাকার ছবি। সেখানেই বলে আমাদের বন্ধুদের সবাইকে দাওয়াত আরো বলে তোরা তো আসিস না। আমি বললাম এইবার সুযোগ হলে আসব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ্‌র রহমতে কথার ব্যত্যয় ঘটেনি। বন্ধুদের কাউকে না পেয়ে একাই গিয়েছিলাম।
গিয়েছিলাম এই মাসের ১৯ তারিখ, আর ফিরেছি ২০ তারিখে।

এই ট্যুরে এমন কিছু পেলাম যা ভাবনার বাইরে। সেইন্ট মার্টিন গিয়েছি এই নিয়ে তিনবার। বেশ মজাও করেছি প্রতিবারই। কিন্তু এইবারের সলো ট্যুরটা এমন একটা ফিলংস দিবে ভাবতেই পারিনি। ছবিগুলো দেখবেন আর বলবেন ট্যুরটা কেমন ছিল। যদি আমি ফটোগ্রাফি অ আ ক খ জানি। নিজের সাধ্যে যা পেরেছি তাই। ছবির চুম্বকাংশ শেয়ার করব।

কিভাবে যাবেন সে রাস্তা বলে দেই এবার। রাস্তা দুইটা। আপনার যেটা ইচ্ছা সেটাই যেতে পারেন কিংবা আসতে পারেন।

রোড নাম্বার ওয়ান: কক্সবাজার সদর টার্মিনালে আসবেন যদি সদর থেকে রওয়ানা দেন। ভাড়া লাগবে ১০ টাকা। টমটম হোক আর সিএনজি। সেখান থেকে “পালকি” গাড়িতে রওয়ানা দিবেন টেকনাফের উদ্দ্যেশ্যে। ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা। আর আপনি যদি বেশি ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে চান “সরাসরি” সার্ভিস ট্রাই করতে পারেন। ভাড়া নিবে ১২০ মনে হয় এবং যাবে লোকাল সিস্টেমে। এরপর যাবেন শাহপরীর দ্বীপ সিএনজি স্টেশনে রিকশা অথবা টমটমে। ২০ টাকা ভাড়া নিবে জনপ্রতি, দুইজন থাকলে। একজন হলে একাই ৩০ টাকা নিতে পারে। দরদাম করে উঠবেন। এরপর সিএনজি সরাসরি আপনাকে নিয়ে যাবে হাড়িয়াখালি। ভাড়া ৫০ টাকা যেটা রেট ভাড়া কিন্তু একটু বেশিই। সেখান থেকে স্পীড বোট কিংবা নৌকায় করে আপনি শাহপরির দ্বীপে আসতে পারবেন। স্পিড বোটে ৬০ টাকা ভাড়া আর নৌকায় ২০-৩০ টাকা নিবে। নৌকায় যাইনি বিধায় বলতে পারছিনা। সেখান থেকে “মারওয়া” যাবেন তমটমে অথবা সিএনজি তে। ১০০ টাকা নিতে পারে রিজার্ভ গেলে। আর একা গেলে ২৫-৩০টাকা নিতে পারে। আমি বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম অবশ্য। সেখানে একটাই হোটেল আছে। ভাড়া তুলনামূলক কম। দরদাম করে নিবেন আরকি। ঠিক একই ভাবে ফিরে আসবেন অখান থেকে টেকনাফে।

ভাড়া টোটাল: ১০+১৫০+২০/৩০+৫০+৬০+২০/৩০= ৩১০/৩৩০
স্পিড বোটের হিসেবে ভাড়া ধরা হয়েছে। বোটদ গেলে ৩৫ টাকা কম খরচ হতে পারে।

রোড নাম্বার টু: সবই রোডপ্ল্যান ওয়ান এর মত। শুধুমাত্র টেকনাফে যে আসার সময় বাসে আসলেন এবার যাবেন সিএনজিতে। টেকনাফ থেকে ছাড়ে। ভাড়া ২৫০ টাকা নিবে। সিএনজিতে আসা মিস করবেন না ভাই-আপুরা। কারণ টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হয়েই আসবে সিএনজি। এর চাইতে দারুন আর কি হতে পারে যখন রাস্তার বামপাশে থাকে কক্সবাজার সমুদ্র আর ডানপাশে থাকে উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের ঢালি সাজানো মাঠ আর সুপারির বাগান।

ভাড়া টোটাল:
২০/৩০+ ৬০+ ৫০+ ২০/৩০+ ২৫০= ৪০০/৪২০
স্পিড বোটের হিসেবে ভাড়া ধরা হয়েছে। বোটদ গেলে ৩৫ টাকা কম খরচ হতে পারে।

গিয়েছিলাম কিভাবে এবং কি কি করেছিলাম: রোড নাম্বার ওয়ান অনুযায়ী গিয়েছিলাম এবং এসেছিলাম রোড নাম্বার টু অনুযায়ী। সকাল সাতটায় বাসা থেকে রওয়ানা দেই। টমটমে করে সাড়ে সাতটায় টার্মিনালে যাই সাড়ে সাতটায়। টার্মিনাল থেকে ৭ টা ৪৫ মিনিটে “পালকি” বাসে উঠি। এবং বাস টেকনাফে এসে পৌঁছায় প্রায় ১২ টায়। সেখান থেকে গাড়ি পাল্টিয়ে সব মিলিয়ে বন্ধুর বাসায় যেতে একটা লেগে যায়। একটু নাস্তা করেই আমি আর বন্ধু মিলে চলে যাই ওদের নিজেদের নৌকায় বোটে চড়তে। এজন্য প্রায় অনেক পথ পাড়ি দিতে হয় পানির মধ্যে। কিন্তু তাদের মাঝি খানিক পরেই ভাটা নামবে বলে বোট বের করেনি। কারণ ভাটা নামলে বোট আর পাড়ে আনা যাবে না। বোটে ঘুরতে যেতে পারিনি তাই আমরা পানিতেই এদিক সেদিক ঘুরতে তিনটার কাছাকাছি বেজে যায়। তার আগের রাতে মাছ ধরে কয়েকটা নৌকা তীরে এসে ভীড় করে সেখানে। তাদের মাছ ধরে সেগুলা ভাগ করা, বিক্রি করা, আর কিছু অংশ নিজের জন্য নিয়ে আসা এসব দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। কারণ বন্ধুর বন্ধুদের নৌকাও সেখানে ছিল। মাছও পেয়েছিল মাশা আল্লাহ্‌। সেখান থেকে দুপুর তিনটার দিকে বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হতেই ঘড়ির কাটা ৪ টা ছুঁই ছুঁই। বাসার চেয়ারের উঠোনে বসতেই দুজনের চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করেছে। সেভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বের হলাম ৫ টার দিকে। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম জেটি ঘাটের দিকে। সে সময় তোলা কিছু ছবিও আছে। পাবেন সেহুলা। জায়গাটা বেশ সুন্দর, আড্ডা দেওয়ার জন্য। সেখানে আড্ডা দিয়ে মাগরিবের পরে ফিরে এলাম এলাকার বাজার। মানুষের যেন রাজ্যের কথামালা জমা আছে মনে, সেসবের ফুলঝুরি চলে মাগরিবের পরে। এলাকার সবচেয়ে সুন্দর মসজিদটা আশে পাশে। রাত হয়ে যাওয়ার এর সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ হয়ে উঠে নি। সেখান থেকে নয়টার পর বাসায় ফিরলাম। রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুম দিলাম একটা।

পরের দিন সকাল সকাল উঠে কাকড়া ধরতে যাওয়ার কথা ছিল। ঘুম থেকে দেরিতে উঠায় সেটা আর হয় নি। আফসোসটা থেকেই গেল। যাই হোক, সকালে খেয়ে দেয়ে বন্ধুর এক বন্ধুর দোকানে ঘন্টাখানেক আড্ডা দিলাম। তারপর বের হয়ে গেলাম বোট দিয়ে নাফ নদী ঘুরতে। ১ম দিনের বোটে চড়ার খায়েশটা মিটানোর সুযোগ পেয়েই গেলাম। আমরা পাঁচজন মিলে গেলাম। বোটটা খুব একটা বড় না। একটু নড়বড়ে। তাই ভয়টা আমার একটু বেশিই লেগেছিল। কারণ হাজার হলেও পানিই তো। ১ ঘন্টা যাওয়া আসা মিলে নাফ নদীতে ঘুরেছি। নদীতে সেই এক ঘন্টা যে কত রোমাঞ্চকর সেটা কেবল আমিই জানি। সেখান থেকে এসে আমি এবং আমার বন্ধু শাওয়ার সেরে প্রায় ২ টা ৪০ এর পর রওয়ানা দেই বাসায় ফেরার উদ্দ্যেশ্যে। রোড নাম্বার টুতেই আমরা ফিরি। কক্সবাজারে বন্ধুর কাজ ছিল বিধায় একসাথে আসার সুযোগ হয়েছিল।

যেখানে সএকএখানে ময়লা ফেলবেন না। ময়লা ডার্স্টবিনে ফেলুন। সুন্দর থাকুন, ভাল থাকুন।

Source: Amir KhosruTravelers of Bangladesh (ToB)

 

Share:

Leave a Comment