শোন_নাফাখুমের_গল্প

বান্দরবনের গহীনে যে একবার যাবে, সেই এর সৌন্দর্য্যের ভালোবাসায় পড়বেই পড়বে।
নাফাখুম আমার এক ধরনের ড্রীম ট্যুরই ছিলো বলা চলে। ঘুরঞ্চি পাগল আমি বান্দরবনের গহীনে একটাও ট্যুর দিতে পারলাম না এইটাই ছিলো আপ্সুস।
অবশেষে প্লান করে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
আমরা ৮ জন আমার রেগুলার ট্যুর পার্টনার নাবিল,তাউসিফ, অপু ভাই কে সাথে নিয়ে।আরো সাথে ছিলো আমার বেস্ট এভবেঞ্চার ট্যুর পার্টনার তুষ্টি,যে মেয়েটার ভয় ডর একদমই কম।আরো ছিলো ইভা আপু,সীমা আপু,শাওকাত ভাই।

যাওয়ার জন্যে বাস টিকেট রেডি হঠাত শুনি ১৭ নভেম্বর প্রতি মন্ত্রী থানছি আর রেমাক্রিতে অবস্থান করার কারনে সকল টুরিস্টদের থানছির পরে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া নিষেধ, কিন্তু পাগল মন কোন বাধাই মানে না, তাই যাওয়ার জন্যে খোঁজখবর নিয়ে বিকল্প পথ বের করে ফেলি।

এই ধরনের স্পটে ট্যুর কস্ট কমানোর জন্যে মিনিমাম ১৫ জন লোক নিয়ে গেলে ভালো,কিন্তু আমাদের টীমে আমরা ৮ জন তাই চিন্তা করি চাদের গাড়ী শেয়ারের জন্যে আরো কাউকে নেওয়া যায় কিনা,পেয়েও গেলাম ৯ জনের একটা টীম।
আল্লাহ্‌ নাম নিয়ে রওনা দেই।বাসের মধ্যে গানে গানে রাত পার করে দেই।সকালে নাস্তা সেরেই চাদের গাড়ীতে উঠে পড়ি। কেউ নিচে বসে থাকতে চায় না,সবাই ছাদের উপরে হেলে দুলে যেতে চায়। যাওয়ার পথে আমাদের বারে বারে মেঘের সাথে আলিংগন মন টাকে ভরিয়ে তোলে।
চারদিকে মেঘ আর মেঘ,কোন কোন সময় আমদের ঢেকে ফেলে,মেঘের সাথে খেলতে খেলতে আর রোলার কোস্টারের মজা নিতে নিতে আমরা পৌছিয়ে যাই থানছি, সেইখান থেকে নৌকা নিয়ে শুরু হয় আরেক ধরনের এডভেঞ্চার, দুপুরের খাবার আমরা নৌকায় সেরে ফেলি,তিন্দু নদীতে নৌকোর স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে যাওয়া,আর রেমাক্রির বড় পাথরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে যাই রেমাক্রি বাজার,সেইখান থেকে নাফাখুম যেতে নাকি লাগে ৩ ঘন্টা, তখন বাজে ৪ টা,স্বীর্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমরা ট্রেকিং করে নাফাকুম যাবো এইখানেই রাতে থাকবো,যেতে পথে সন্ধ্যা হলেও যাবো,এইটাই আমাদের এডভেঞ্চার কে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। যাত্রা পথে সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগুতে থাকি,তারপর সূ্র্য ঢুবার সাথেই সাথে পুরো রাস্তাই আধার কালোতে ঢেকে যায়,শুরু হয় নতুন এডবেঞ্জারের পথ চলা,বহুত প্যারা নিয়ে এগুতে হয়,এর মধ্যে বেশী প্যারা টা নেয় তুষ্টি, চলতি পথে ওর ডিজিটাল মিউজিক আঊ আঊ চিতকার পুরো রাস্তা কম্পিত হতে থাকে, কখনো জোক তার হাতে বসে কামড়িয়ে জোকস করে থাকে, কখনো সে অন্ধকারে পা পিছলিয়ে পড়ে যায়,কখনো টর্চ এর আলো পায়ের সামনে ধরল্র দেখা যায় নিরবে কোন একটা সাপ হেটে চলে যায়,ইহা দেখার পর কি হয়েছিলো তা নাই বললাম,অনেক রকম দৃশ্য চোখে ধরা পরে,আবার অন্ধকারে গাইড আগে চলে যাওয়ায় আমরা রাস্তাও ভুল করে ফেলি।
এতকিছুর পরও ছিলো সবার মধ্যে আনন্দ, এই গুলোকেই তাদের কাছে মনেই হলো না কোন প্যারা। ৩ ঘন্টা ট্রেকিং এর পর পৌছাই কাংক্ষিত জায়গায় নাফাকুম ঝর্নায়। ঝর্নার শব্দ শুনতে পেরে সকল ক্লান্তি কে তুচ্ছ মনে হয়।কিন্তু অই মূহুর্তে আমাদের ফ্রেশ হওয়া দরকার এই জায়গায় ওয়াশ রুম কই পবো,তাই গাইড আমাদের নিয়ে যায় নাফাখুমের আপস্ট্রিমের লেকে,রাতের আধারে ঝুপঝাপ গোসল সেরে ফেলি।তারাতাড়ি খেয়ে দেয়ে ঘুমাই নাফাখুমের ওপরের এক পাড়ায়। এইদিকে আরেকটা ঘটনা ঘটে তুষ্টির পেটে কামড়ে থাকা জোকটি রক্ত খেয়ে টুইটুম্বর হয়ে যায়,অইটা দেখে তুষ্টি যে চিতকার দেয়,জোক ভয়ে পড়ে যায়।
কিন্তু ব্লিডিং আর থামে না,সবাই মোটামোটি আতংকিত হয়ে পড়ি, ব্লিডিং কেমনে থামাবো,অনেক কষ্টে ওড়না দিয়ে বেধে রক্ত পড়া বন্ধ করি।
রাতে ডিনার শেষে বারবিকিউ করে খেয়ে দেয়ে ঘুম,শান্তির পরশ নিয়ে ঘুম দিয়ে খুব সকালেই উঠি,দেখি পাহাড়ের মনোরম সেই ভোর,অনেক তৃপ্তিময়।
তারপর নাস্তা করে ঝর্নার আশপাশে ফোটসেশন করে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্য রওনা দেই,দিনের আলোতে ট্রেকিং এর রুট পরখ করতে করতে এগুতে থাকি,যাত্রা পথে আবার সেই প্যারা নিয়ে তুষ্টি এগুতে থাকে, আছাড় খাওয়া তার নিত্যে সংগী হয়ে গেছে,আর সে সেইটা হাসি মুখে বরন করে নিচ্ছে।ফাইনালি আমরা পৌছাই রেমাক্রি ফলসে,অসাধারণ ফলস,দাপাদাপি করে বেরিয়ে পরি থানছি, থনছিতে লাঞ্চ করেই রওনা দেই নিলগিরির দিকে।শেষ মূহুর্তে সূ্র্য ডুবার ভিউটা দেখতে পাই নিলগিরি পাহাড়ে আহারে আহারে।
তারপর আমরা নাফাখুমের মিশন কমপ্লিট করে বের হয়ে পড়ি ঢাকার উদ্দেশ্য।
আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুই ভালো ভাবে শেষ হয়।

কিভাবে যাবেন-
ঢাকা টু বান্দরবন, জনপ্রতি আপ ডাউন- ১২৪০ টাকা
বান্দরবন টু থানছি, চাদের গাড়ি ৮ জন শেয়ারিং ১২৫০ টাকা।
থানছি টু রেমাক্রি, বোটে করে ৮ জন শেয়ারিং ১২৫০ টাকা
রেমাক্রি টু নাফাকুম, ৩ ঘন্টা পায়ে হেটে,
খাওয়া দাওয়া, থাকা ও অন্যান্য খরচ সহ আরো যুক্ত হবে।

আমাদের ৮ জনের জন প্রতি খরচ হয়েছিলো ৪৫০০ টাকা

১৫ জনের টীম হলে খরচ আরো কমতে পারতো।

Post Copied From:Farhad Dewan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment