সিলেট ভ্রমন

অনেকেই এই সময় সিলেট যাচ্ছেন দেখে গত বছরের পোস্টটা আজকে নোট করে দিলাম। বর্ষায় সিলেটে যাওয়ার সুবিধে হচ্ছে এপার থেকেও ভারতের ঝর্না দেখতে পারবেন; শুধু বৃষ্টি বেশি হলে পাহাড়ি ঢলে বিচানাকান্দী ভয়াবহ হয় আর কি ( বর্ষার শেষে গিয়ে যত সুন্দর পাবেন; ভরা বর্ষায় বিছানাকান্দী এত সুন্দর পাবেন না ) বর্ষাকালে বিছানাকান্দী ।

  • রাতারগুল- বিছানাকান্দি ঘুরে আসলাম এই ট্যুরে; সাথে ৭/৮ জনের গ্রুপ । এর আগে সিলেট ২বার যাওয়া হয়েছে ।
    তখন জাফলং- তামাবিল – হরিপুর গ্যাসফিল্ড- আগুনের পুকুর/পাহাড়/কালো পাহাড়(নাম খেয়াল নাই) দেখা হয়েছে । গত ৩বারের সিলেট ট্যুরের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখছি ——.
    সিলেট গেলে প্রথমেই CNG/ রিকশাওয়ালাদের মুখ থেকে যেটা শুনবেন সেটা হচ্ছে সিলেট নাকি “আরেক লন্ডন” ; এখানে সবকিছুর জন্যই নাকি আপনাকে বেশী টাকা দিতে হবে। কিন্তু আমি গত ৩বার গিয়েও একথার কোন যুক্তি খুঁজে পাইনাই !! বরং সিলেটের যে কোন কিছুর খরচ ঢাকা/ চিটাগাং থেকে সস্তা মনে হয়েছে( বিশেষ করে খাবার)। আসলে এসব বলার মানেই হলো আপনার থেকে বেশী টাকা আদায় করা। আমাদের কথা শুনে সহজেই ওরা বুঝে আমরা সিলেটী না আর তখনই ডাবল টাকা আদায় করে।
    * রিকশা থেকে শুরু করে নৌকা/প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া সবকিছুতেই আপনাকে Negotiation করতে হবে। একটু শক্ত না হলে ধরা খেতে হবে !
  • খাওয়া দাওয়াঃ
    • সিলেটের মতো এতো ভালো- কম দামে খাবার আমি দেশের কোথাও পাই নাই। পাঁচ ভাই/পানসী তে সারাদিন ৩ বেলা খেয়েও একজন ১০০০ টাকা বিল তুলতে পারবে কিনা সন্দেহ !!
    • *সকালের নাস্তা পানসীতে করতে পারেন( নেহারি-মুরগির সুপ-খিচুরি অবশ্যই খাবেন)। পানসীর পরিবেশ খুবই ভালো। সন্ধায় পানসীর জুস কর্নারের সামনে আড্ডা দিতে পারবেন। খাবারের দাম দেখে আপনি প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইবেন না এতো কমে কীভাবে হোটেল চালায় !!
    • *পাঁচ ভাই হোটেলের খাবারও ভালো । দাম পানসীর মতোই । তবে পানসীর মতো হোটেলের পরিবেশ এতোটা ভালো না । পানসীর জুস কর্নার/বসার স্পেস ভালো-একটু খোলামেলা ।
    • * সিলেটে মাছের আইটেমের দাম বেশী মনে হয়েছে ।
    • * পানসীর খাবারের দাম নীচে ছবি দিয়ে দিলাম ।
    • * আপনি পান না খেলেও সিলেটে গেলে অবশ্যই মিষ্টি পান খাবেন ।
    • * পানসী/পাঁচ ভাই জিন্দা বাজারের কাছেই। দরগাহ(মাজার) থেকে ১০ টাকা রিকশাভাড়া ।
    • *পানসী/পাঁচ ভাই ছাড়া শহরের ভিতরে/ভাইরে অন্য হোটেলে গেলে অবশ্যই খাবারের দাম ভালোভাবে জেনে নিবেন। রেল স্টেশন /বাস স্ট্যান্ডের আশেপাশের দোকানে দাম অনেক বেশি
  • যাতায়াতঃ
  • রাতারগুলঃ
    • জিন্দা বাজার/ দরগাহ গেট/আম্বারখানা টু রাতারগুল CNG ২৫০ টাকা যাওয়া, রিজার্ভ করে নিয়ে যাওয়া ভালো; রাতারগুল থেকে CNG পাওয়া যাবেনা । যাওয়া-আসা ৫০০ টাকা । এক CNG তে পাঁচ জন নেয় ওরা । আপনি রাতারগুল কতক্ষন থাকবেন সেটা জানিয়ে আরো কিছু বাড়িয়ে দিবেন ।
    • * CNG কে অবশ্যই মেইন রাতেরগুল নিয়ে যেতে বলবেন । রাতেরগুল ৩গ্রামের মাঝে; ৩ পথ দিয়েই ঢোকা যায় শুনছি । মোটরঘাট দিয়ে রাতেরগুলে ঢুকতে চাইলে ভরা বর্ষা ছাড়া রাতেরগুল যাওয়া সম্ভব না( ট্যুর বৃথা )। নৌকা ভাড়া ১০০-২০০ তেই হয়। ওরা ৭০০/১০০০ পর্যন্ত বলে !! সবই আপনার দর কষাকষি করতে হবে ভাই !!
      এক নৌকায় ৫ জন বসা যায় । আপনাকে ভয় দেখিয়ে বলতে পারে এক নৌকায় ৩ জনের বেশী হয়না; যাতে ওদের কষ্ট কম হয়; আরেকটা নৌকাও নেয়া হয় ।
    • * রাতারগুলে নির্মাণাধীন ওয়াচটাওয়ার দেখতে পাবেন। ( কোন টাকা লাগেনা ) ;
    • * নৌকা ছাড়া ঘাট/ব্রিজ কোথাও কোন টাকা লাগেনা রাতেরগুলের ভিতরে ।
    • * কোন গাইডের প্রয়োজন নাই রাতেরগুলে ।
    • * দুপুরের রোদ বেশী হয় বলে ঘাটে বাচ্চারা ছাতা ভাড়া দেয় । ছাতা দরকার হলে দর কষাকষি করে ভাড়া করবেন( না হয় নিজে নিয়ে যাবেন) । অনেক সময় নৌকার মাঝি আপনাকে ছাতা ব্যাবহার করতে দিবে । আসার সময় দেখবেন ছাতা ভাড়ার জন্য বেশী টাকা চেয়ে বসবে :3 ভিতরে গাছপালা আছে বলে ছাতা না নিলেও চলে ।
    • * রাতেরগুল দুপুরের মধ্যে দেখা শেষ হলে সেখান থেকে বিছানাকান্দি চলে যেতে পারেন।( শহর থেকে CNG ভাড়ার থেকে রাতেরগুল– বিছানাকান্দি ভাড়া কম। সিলেট-বিছানাকান্দির মাঝের রোড দিয়ে ভিতরে গেলে রাতারগুল ) মইনুল ০১৭৬৪৩০৭২৪৯ (মাঝি)
  • বিছানাকান্দিঃ
    ———————–.

    • * জিন্দা বাজার/ দরগাহ গেট/ আম্বারখানা থেকে হাদারপার CNG ৪০০ টাকা যাওয়া(৫ জন)(*২০১৪, অক্টোবরের হিসাব), আপনি যদি সিলেট শহর থেকে শুধু হাদারপার/ বিছানাকান্দি যেতে চান তাহলে রিজার্ভ করার কোন দরকারই হবেনা। সিলেট টু হাদারপার বাজার CNG সন্ধার পরও চলাচল করে । লোকাল একজন ৮০ টাকা । এক সিএনজিতে ৫*৮০=৪০০ টাকা ।
    • *হাদারপার/হাদারঘাট থেকে ২০/২৫ মিনিট মাটির রাস্তা- ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিছানাকান্দি চলে যাবেন । শীতের সময় ধুলা থাকে । মহিলা/শিশু না থাকলে ৪০০/৫০০ টাকা নৌকা ভাড়া করে যাওয়ার কোন মানে হয়না। পাহাড়ের টানে আপনি হাঁটতে হাঁটতে বিছানাকান্দি চলে যাবেন 🙂 কোন গাইডের দরকার নিই । স্থানীয় অনেক মানুষ দেখবেন পথে । ওদের বললেও দিক নির্দেশনা দিয়ে দিবে . বিছানাকান্দি বাজারের আশেপাশেই অনেক স্থানীয় মানুষ থাকে ; ওদের মতো করেই কম খরচে যাতায়াত করবেন। ৩/৪ গুন খরচ দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কি ?? পোস্টার নিচে ম্যাপ দেখলেই বুঝবেন যে নৌকা ছাড়াও রাস্তা যায়
    • * শুক্রবার বর্ডারে( ভারতের বাজার) হাট বসে। ভারতীয় কাঁঠাল/কমলা/ ফল নাকি সস্তা ( আমরা বাজার পাইনি)। হাট থেকে নেশা/মাদকদ্রব্য কিছু সস্তায় পেলেও কিনবেন না। এগুলো অনেকসময় ভেজাল থাকে আর এসব কিনে ফেরার পথে বিজিবির চেক হয়। ধরা পরলে তো বুঝেনই !! :v
    • * মূল্যবান কিছু নিয়ে ভারতের বাজারে না যাওয়াই ভালো। এক পোস্টে দেখলাম এক জনের দামি ক্যামেরা ওপাশে রেখে দিছে।
    • * বিছানাকান্দির জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত কাপড়/তোয়ালে এবং ভেজা কাপড় আনার জন্য পলিথিন নিয়ে যাবেন( পাশের দোকানে পলিথিন পেতেও পারেন) । শীতকালে পানি কমে যায় ।
    • * খুব কাছ থেকে দুই দেশের বর্ডার পিলার দেখবেন । নির্জন স্থান হলেও ভারতের অংশে না যাওয়াই ভালো । ওপারের কোন দুর্ঘটনার জন্য বিজিবি/ বাংলাদেশ দ্বায় নিবেনা সেটা তো বুঝেনই !!
    • * সন্ধার ১ ঘণ্টা আগেই বিছানাকান্দি থেকে রওনা দিন যদি হেঁটে ফিরতে চান । রাতের অন্ধকারে হাদারপার বাজার পথ চিনতে কষ্ট হবে। হাদারপার থেকে রাতেও সিএনজি পাবেন । আমরা সকালে দরগাহ গেট(মাজার) থেকে মাইক্রো ভাড়া করে রাতারগুল- বিছানাকান্দি ঘুরে সন্ধায় শহরে আসি। ২৭০০ টাকা নিয়েছিল(চেয়েছিল ৪০০০) । আপনি চেষ্টা করলে আরো কমাতে পারবেন ।
    • * প্রাইভেট গাড়ী নিয়েও যাতে পারবেন; রাস্তা একটু খারাপ । বাস নিয়ে গেলে সমস্যা হবে ।
  • ———————————————————————————
    • * চা বাগানে কর্মচারীদের থেকে চা না কেনাই ভালো। আমার দেখা মতে ওদের চাই সবথেকে বাজে । ( বলতে গেলে যা মনে হয় কারখানার ঝাড়ু দেয়া ময়লা চা পাতা বিক্রি করে )চা কিনতে হলে মাজারগেটের দুপাশে অনেক দোকান দেখবেন । ভালো চা বড় দানাদার হয় ।
    • *সিলেটে ট্রেনে আসলে শ্রীমঙ্গল-লাউয়াছরা;চা বাগান দেখতে দেখতেই আসবেন।
    • * চা বাগানে ঢুকে কখনোই নারী কর্মীদের ছবি তুলবেন না; ওদের তোলা চা পাতা ভর্তি ব্যাগ/মাথার হ্যাট না ধরাই ভালো; এতে ওরা বিরক্ত হয় । গাইডরাই কথা বলতে মানা করে দিবে ।
    • *অনুমতি ছাড়া চা বাগানে ধুকবেন না । অনেক বাগানে গাইড আছে ; ওদের কিছু টাকা দিয়ে ভিতরে ঘুরতে হয় । রাতারগুল-বিছানাকান্দির পথেই মালিনছরা চা বাগানে ঘুরতে পারেন জাফলং থেকে কয়েকশো গুন সুন্দর মনে হয়েছে বিছানাকান্দি ।
    • আর * তামাবিল ০ পয়েন্ট দেখার কিচ্ছু নাই( মানুষের কৌতূহল) | এর থেকে ভালো আপনি ওই রোড অর্ধেক পথেই লালাখাল ঘুরে আসেন 🙂 তবে তামাবিল রোড থেকে পাশেই ইন্ডিয়ার পাহাড়ের ঝরনা দেখতে পারবেন বর্ষাকালে। একটা রিসোর্টও আছে রাস্তার পাসে যেখান থেকে দূরের বর্ডারের ঝর্না দেখা যায় হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাসফিল্ড-পুকুরের মাঝে আগুন আসলে তেমন কিছু না। পুকুর থেকে বুদবুদ করে গ্যাস বের হয় । আগুন দিলে জ্বলে আরকি । কাছে আরেকটা পাহাড় আছে ওটা এমনই । আপনার যদি সময় থাকে তাহলে দেখতে পারেন । ১দিন রাতারগুল, বিছানাকান্দি ; আরেকদিন জাফলং-তামাবিল-হরিপুর
    • *জাফলং গেলে ড্রাইভারকে অবশ্যই জাফলং-এর শেষ পর্যন্ত গাড়ী নিয়ে যেতে বলবেন ; নাহয় ঘাটে নামিয়ে দিবে; ওখান থেকে আবার অতিরিক্ত নৌকাভাড়া দিয়ে জাফলং যেতে হবে .
    • *(লালাখাল দেখা হয়নাই; কোন আইডিয়া নাই । তবে জাফলং যাওয়ার মাঝ পথে সারিঘাট এ নেমে নৌকা নিয়ে যেতে হয় শুনেছি )
  • *হোটেল*———————-
  • শুক্র বার/শনিবার অনেকে মাজারে যায় বলে বুকিং না দেয়া থাকলে হোটেল পাওয়া কষ্ট ! হোটেলের ব্যবস্থা না করে বৃহস্পতিবার সিলেটে যাওয়া অনেক বড় বোকামি হবে। দরগাহগেট( মাজারের রাস্তা) ,আম্বরখানার আশেপাশে অনেক হোটেল আছে। হোটেল ডাবল রুম ৪০০-৭০০+ এর মধ্যে দেখেছিলাম তখন। আমাদের ৪টা রুমের প্রয়োজন ছিল ; যতদুর খেয়াল আছে টোটাল ভাড়া থেকে ১০০০ টাকার মতো কমাতে পেরেছিলাম। (খুব যদি বিপদে পরেন/হোটেল আগের থেকে ম্যানেজ করতে না পারেন; তাহলে রিক্সা/অটো ড্রাইভারদের বলবেন। কেমন মানের হোটেল দরকার বুঝিয়ে বললে ওরাই দেখবেন নিয়ে যাবে ) সরকারী চাকুরিজীবি/তাদের পরিবারের সদস্য হলে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, রেস্ট হাউজে থাকা যাবে ; খরচ অনেক কম কিন্তু সেটাও আগের থেকে জানিয়ে যেতে হবে।
  • ————————————————————————————–
  • সব শেষে যেই অনুরোধ । আমরা সভ্য মানুষ; সব বুঝে শুনেও বারবার অসভ্য মানুষের মতো কাজ করি (*প্রচন্ড ক্ষোভ থেকেই অসভ্য বললাম*) ।চিপাচাপা থেকে তথ্য নিয়ে বিছানাকান্দি যেতে পারি আর পরিবেশ নোংরা করলে যে কি ক্ষতি হয় এটা না বোঝার মতো অবুঝ নিশ্চয়ই কেউ না !! বিছানাকান্দি গিয়ে দেখি আগে পিকনিকে আসা মানুষের খাবারের প্যাকেট !! সাইনবোর্ডে লেখা থাকলেও কারো দৃষ্টি নাই !!
    আপনার পানির বোতল/ চিপসের প্যাকেট/সিগারেট/খাবারের প্যাকেট বিছানাকান্দি ফেলে আসবেন না । পারলে অন্যের ফেলে যাওয়া জিনিস ব্যাগে করে নিয়ে আসেন। আমি তো বলবো যদি কাউকে পরিবেশ নোংরা করতে দেখেন তাহলে কানে ধরে শিক্ষা দেন !! -_-আর ঘুরতে গিয়ে অবশ্যই স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যাবহার করুন।
Share:

Leave a Comment