সুন্দরবন ট্যুর এর ট্রাভেল এজেন্সিগুলো নিয়ে কিছু ধারনা

ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ে আমার কিছু মিশ্র অভিজ্ঞতা হল এই ট্যুর এ।
আমি প্রথমে ঢাকায় একটা ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলি প্রথমে। সেখানে প্যাকেজ এর দাম বলা হয় ৮৫০০ টাকা পার পারসন। আমরা ছিলাম ৩ জন। মা, বাবা আর আমি। আমাদের কে প্রথমে বলা হয় ডিসকোভার লঞ্চে ৪ জন এর রুম দেয়া হবে এটাচড বাথ সহ। এখানেই কথা শেষ, পেমেন্টও ক্লিয়ার করে দেয়া হয়। এখান থেকে আমাদেরকে খুলনার একজনের নাম আর ফোন নাম্বার দেয়া হয়। বলা হয় খুলনায় গেলে উনিই সব ম্যানেজ করে দিবে।

খুলনায় পৌঁছে আমরা ওই লোকের সাথে যোগাযোগ করি। উনি বলেন আমাদেরকে ডিসকোভার লঞ্চে না দিয়ে বনবিলাস লঞ্চে দেয়া হয়েছে ৩ জনের রুমে। কারন হিসেবে বলা হয় ডিসকোভারে ব্যাচেলর বেশি আর বনবিলাসে ফ্যামিলি। আর আমরা যেহেতু ফ্যামিলি, তাই আমাদেরকে বনবিলাসে দেয়া হয়। ভালো, আমরা আর কোন আপত্তি জানাই নি। আমরা তখন রুম সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয় একটা কাপল বেড, মাঝে স্পেস তারপর একটা সিঙ্গেল বেড। তবে এটাচড বাথ নেই, কমন বাথ ব্যাবহার করতে হবে, এবার আমরা আপত্তি জানাই, তারা বলে যে ডিসকোভার লঞ্চে বেড ট্রেন এর কেবিন এর মত বাথ সিস্টেম এর। কিন্তু বনবিলাসে হোটেল এর মত। ট্রেন এর মত উপর নিচে না। তাই আমাদের একটু কনসিডার করতে হবে। আমরা এটাও কনসিডার করলাম ( আসলে আমার বাবা আর কোন ঝামেলায় যেতে চান নাই, তাই আমিও আর কিছু বলি নাই)।

লঞ্চে উঠার পর আরেক কাহিনী। গিয়ে দেখি ওই লঞ্চে আমাদেরকে যে ধরনের রুমের কথা এতক্ষন বলা হল এমন কোন রুম এর অস্তিত্বই নাই। রুমগুলো সেই ট্রেন এর কেবিন এর মত বাথ সিস্টেম এরই। তার উপর রুমটা প্রচণ্ড ন্যারো। এবার তো মেজাজ আরও খারাপ। এবার লঞ্চ এর ক্যাপ্টেন আর লঞ্চ মালিক এসে আমাদের ভুগিচুগি বুঝ দিতে লাগলেন, আমরা নাকি বুঝতে ভুল করেছি, আমরা যে লোকের সাথে কথা বলেছি তার নাকি শর্ট টাইম মেমরি লস হয়, সে নাকি ভুল বলেছে, এটাচড বাথ সহ রুম এর মূল্য নাকি ১২০০০ টাকা, তাদের অন্য সব রুম নাকি বিক্রি হয়ে গেছে, আমরা অন্য আরেকটা রুম চাইলে বলা হয় ৩ জনের আর কোন রুম নাই, সব ২ জনের, এরপর আমরা ২ জনের একটা রুম চাইলে বলা হয় আমরা নাকি লাখ টাকা দিলেও তারা রুম দিতে পারবে না, তারা নাকি এক কথার মানুষ, যাকে যে রুম এর কথা বলে তাই নাকি দেয়া হয়, তাই অন্য রুম দেয়া যাবে না। এরকম আরও অনেক কিছু। মেজাজ তো এই সময় যে কারোরই খারাপ হবার কথা। এর মধ্যে আবার লঞ্চ মালিক লঞ্চ থেকে চলে যায়, আমরা কিছু বললে লঞ্চের ক্যাপ্টেন বলে লঞ্চ মালিক জানে সব। এবভাবেই আমাদের সব কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়।

এরপর আমাদের লঞ্চের গাইড যিনি উনি আসেন, উনিই একমাত্র ভদ্র অথরিটি ততক্ষন পর্যন্ত। উনি এসে আমাদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। আর আশ্বস্ত করেন যে উনাদের সার্ভিসে আমরা অসন্তুষ্ট হব না। উনার আশ্বাসে ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও আমরা পরে ওই রুমেই উঠি।

এখানে আমার কিছু উপলব্ধি আপনাদের সাথে শেয়ার করি,
লঞ্চ মালিক আর ট্রাভেল এজেন্সি গুলা আসলে ট্যুর পরিচালনা করে না, এরা হল মধ্যস্ততাকারী। এরাই যত রকম ফন্দি ফিকির করা যায়, করে। এদের মুখের কথার কোন দাম নাই, ২ মিনিট এর মধ্যেই এরা বলা কথা ঘুরায় ফেলতে সক্ষম। তাই এদের সাথে আপনারা কথা বললে সব কিছু লিখিত নিয়ে আসবেন। হ্যাঁ, সব ট্রাভেল এজেন্সিই যে এরকম তা হয়তো নয়, তবে আপনার টাকা, আপনার ট্যুর তো, তাই সাবধান হওয়া ভালো, নাহলে পরে একমোডেশন নিয়ে আমাদের মত ঝামেলায় পরতে পারেন। এজন্য আমার মতে, আপনারা এইসব ট্রাভেল এজেন্সিগুলার কাছ থেকে একমোডেশন সংক্রান্ত সব তথ্য লিখিত নিয়ে আসবেন। এটাই সেফ।

এতটুকু পর্যন্তই আসলে ক্ষোভ। এরপরে আসলে ট্যুর গাইড, লঞ্চ এর সার্ভিস বয় দের ব্যাবহার আমাদের হতাশ করে নি। আমাদের গাইড যিনি ছিলেন তার কথাবার্তা অনেক মার্জিত ছিল, উনি অনেক হেল্পফুলও ছিলেন, কারো কোন কোশ্চেনে আমি উনাকে বিরক্ত হতে দেখি নি, বরং উনি খুব ই উৎসাহ নিয়ে আমাদের অনেক হেল্প করেছেন। উনাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। বত্ব, উনার নাম ছিল আলম সাহেব। এছাড়া আমাদের গার্ড যিনি ছিলেন উনিও অনেক রসিক মানুষ, আর খুবই মিশুক। আবুল কালাম নাম উনার। উনাকেও ধন্যবাদ। আর লঞ্চের সার্ভিস বয় রাও ভীষণ হেল্পফুল ছিল। তাই, উনাদের এরকম আন্তরিক ব্যাবহারে, পছন্দসই রুম না পাওয়ার পরেও বলতে পারি যে, ওভারঅল ট্যুর টা ভালোই হয়েছে।

খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে একটু বলি,
খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনোরকম সমস্যাই হয় নাই। সকালে নাস্তা ৯ টা থেকে ৯.৩০ এর মধ্যে, এরপর ১১ টায় হালকা স্নাক্স, ১.৩০ থেকে ২ টা এর মধ্যে লাঞ্চ, এরপর সন্ধ্যায় নাস্তা ৫.৩০ থেকে ৬.০০ এর মধ্যে, এরপর ডিনার ৯.৩০ থেকে ১০.০০ এর মধ্যে। সেলফ সার্ভিস ছিল খাওয়া দাওয়া। বুফে ছিল না, তবে কেউ মেইন কোর্স এক্সট্রা চাইলে সাথে সাথেই দেয়া হয়েছে, তাই খাওয়াটা শেষ পর্যন্ত বুফের মতই হয়েছে।

আপনার সাথে যদি কোন শুকনা খাবার নাও থাকে তাও কোন অসুবিধা হবে না আপনার। তবুও জলপথ তো, আমার মতে নিজের সাথে কিছু খাবার রাখা ভাল।

এবার আসি কিছু সিরিয়াস সচেতনতামূলক কথাবার্তায়।
ভাই, সুন্দরবন টা আমাদেরই, তাই না ??
কেন প্লাস্টিকের বোতল, নুডুলস, চিপসের প্যাকেট, জুতা, ব্যাগ, নেট এর ব্যাগ ফেলে নোংরা করছেন জায়গাটা ??
আমাদের সাথেই ২ জন ফরেনার ছিল, একজন জার্মানির, অন্যজন কোরিয়ার। এরা যখন ফিরে গিয়ে বলবে বাংলাদেশ নোংরা, মানুষজন সুন্দরবন এর মত জায়গাকেও নোংরা বানিয়ে ফেলেছে, তখন সেটা কি আমাদের জন্য খুব গর্বের ব্যাপার হবে ??
যারা যেখানে সেখানে ড্রিংকস এর বোতল, চিপস এর প্যাকেট ফেলেন তারা একটু ভাববেন দয়া করে।

Post Copied From:Soumit Saha‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment