হেঁটে আসুন কক্সবাজার টু টেকনাফ পুরো বীচ

গত বছর ডিসেম্বরে কক্সবাজার টু টেকনাফ পুরো বীচ হেঁটে এসেছি আমরা ২২ জন মিলে!

এই লেখাটা প্রশ্নোত্তর আকারে সাজিয়েছি, সব জরুরী তথ্য ও পরামর্শ সংযুক্ত করেছি; যারা যেতে চান তাদের কাজে দিবে আশা রাখি, এরপরেও কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন-

যাদের এমন আগ্রহ আছে তারা এটা পড়ে নিতে পারেন, কিভাবে কি করলে এই “বীচ হাইকিং” ট্যুরটা সুন্দর ভাবে দেওয়া সম্ভব সে নিয়ে আজকের লেখাঃ

* কয়দিন লাগে পুরোটা হাঁটতে?
– আমরা ৪ দিনে হেঁটেছি! আপনার সময় কম থাকলে ৩ দিনেও করতে পারেন, তবে ভাল মত উপভোগ করা যায়না । আমরা বেশ রিলাক্সে এই ট্যুরটা দিয়েছি, আমার মনে হয় ৪ দিনে করলেই বেটার! ৩ দিনে করলে শুধু হাঁটা হয়, আশেপাশের সৌন্দর্য দেখা আর বীচে একটু দাপাদাপি করা এবং মন চাইলেই একটু রেস্ট নেওয়া বা এদিক ওদিক হাঁটার সময় পাওয়া যাবেনা তখন!

* রাতে থাকবো কোথায়?
– বলা চলে এটা একটা ক্যাম্পিং ট্যুর, বীচের পাশে তাবুতে থাকবেন, এটাই বেস্ট! তবে যাদের তাবুতে থাকতে ইচ্ছে হবেনা তাদের জন্য একটা উপায় বলে দিচ্ছি! যারা ৪ দিনে শেষ করতে চান তাদেরকে ৩ টা রাত বীচের পাশে কাটাতে হবে । সেক্ষেত্রে ১ম রাত কচ্চপিয়া নামক স্থানে ‘কচ্চপিয়া প্রাইমারী স্কুল” এর রুমে কাটাতে পারেন, দ্বিতীয় রাত শামলাপুর নামক স্থানের মনাখালিতে একটা বনবিভাগের রেস্ট হাউজ আছে ওখানে আর ৩য় রাত ইনানীর কোন রিসোর্টে! প্রথম ২ রাত যেখানে কাটাতে বললাম সেখানে থাকার তেমন কোন সুবিধাই পাবেন না, বেশ কষ্ট হবে- এর চাইতে তাবুতে থাকাই শ্রেয়!

* খাওয়া-দাওয়া কোথায় করব?
– ৪ দিনই দুপুরে আপনাকে শুকনো খাবার বা কলা-রুটি-বিস্কুট খেয়ে থাকতে হবে, রাতের খাবার আর সকালের নাস্তার জন্য আমরা আগেই স্থানীয় খাবার হোটেল ঠিক করে রেখেছিলাম, ওখানে খেয়েছি! ১ম রাতে যেখানে ছিলাম অর্থাৎ কচ্চপিয়ায় কোন খাবার হোটেল নাই, স্থানীয় একজনের বাড়িতে খেয়েছি!

* কয়জনের গ্রুপ হলে বেটার?
– আমরা ২২ জন ছিলাম, চাইলে আপনার ৫-৬ জনের গ্রুপ ও যেতে পারেন, ১০-১২ জন হলে আড্ডা দেওয়ার মানুষ বাড়ে- এই আর কি! ২-৩ জনের গ্রুপ না যাওয়াই বেটার!

* নিরাপত্তি ঝুঁকি নেই তো?
– পুরোটা বীচ আমার কাছে যথেষ্ট নিরাপদ বলেই মনে হয়েছে! একটু পরপরই স্থানীয় মানুষ বা জেলেদের আনাগোনা দেখা যায়, তাছাড়া তখন মেরিন ড্রাইভ রোডের কাজ চলতেছিল, সেনাবাহিনীও চোখে পড়ে কিছুদুর পরপর! বীচ থেকে কিছুদুর পুর্ব দিকে গেলেই লোকালয় পাওয়া যায়, গ্রুপ বড় হলে এ জন্য কোন সমস্যাই না!

* খরচ কেমন?
– ৩ দিনে করুন বা ৪ দিনে করুন, এই ট্যুরে খরচ খুব বেশি হবেনা।
ঢাকা থেকে যাওয়া-আসা, খাওয়া, গাইড খরচ, জরুরি ওষুধপত্র, যাবতীয় টুকটাক খরচ- সব মিলিয়ে জনপ্রতি খরচ হয়েছে ২৯২৫ টাকা করে!

* তাবু- কম্বল এসব নিজেরাই বহন করব? নাকি কোন গাড়ি সাথে রাখব সবসময়?
– শীতকাল তাই তাবুর পাশাপাশি মোটা কাপড় আর কম্বল আমরা সবাই নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু আমরা এসব বহন করিনি, একটা গাড়িতে করে আমরা তাবু ও বাকিসব কাপড় একটা গাড়িতে করে যেই জায়গায় রাতে থাকব সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম! এটা করলে আরামসে হাঁটা যায়, ভারি ব্যাগ বহনের ঝক্কি-ঝামেলা নাই, আপনারাও এটা করতে পারেন! সবসময় গাড়ি সাথে রাখার কোন দরকার আছে বলে মনে হয়না!

* কি কি সাথে রাখতে হয়?
– সবসময় যে কয়টা জিনিষ সাথে রাখবেন তা হল খেজুর, স্যালাইন আর পানির বোতল, সাথে জরুরি ওষুধ হিসেবে ব্যাথার ওষুধ, গ্যাসের ওষুধ, মাসল রিলাক্স্যান্ট আর মুভ ক্রীম! রাতের বেলা মশার জন্য ওডোমস ক্রীমও রাখা যেতে পারে! পেট খারাপ করতে পারে আশংকা থাকলে মেট্রোনিডাজল নিবেন । এ ওষুধগুলো একজনে একটু বেশি পরিমাণে নিলেই হয়, যার দরকার পড়বে সে খাবে, সবার সব ওষুধ দরকার হয়না । আমাদের গ্রুপে আমিই সাথে রেখেছিলাম এসব ওষুধ!

* কোন সময়ে যাব?
– অবশ্যই শীতকাল, অন্য সময়ে দিনের বেলা টানা ৩/৪ দিন বীচে হাটা অসম্ভবই বলা চলে! সবচেয়ে ভাল হয় পূর্ণিমা দেখে তারিখ ঠিক করলে!

* কোন জায়গা থেকে হাটা শুরু করব?
– অবশ্যই টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসবেন, অর্থাৎ উলটোপথে শুরু করবেন । এতে সূর্য পেছনে থাকে, হাঁটতে সুবিধা হয়! ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ চলে যাবেন, ওখান থেকেই হাঁটা শুরু করবেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে!

এই তো, মোটামুটি সব দরকারী পরামর্শ উল্লেখ করেছি এই পোস্টে! এর বাইরেও কিছু জানার থাকলে নক করবেন!

পুরো ট্যুরটা অসাধারণ ছিল, সারা জীবন মনে রাখার মত একটা ট্যুর! ! এ বছর ডিসেম্বরে আবার হাঁটার ইচ্ছে আছে এই পথে, গত বছরের মতই যা খরচ তা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিব! যারা গতবার গিয়েছিলাম তাদের অনেকেই আবার যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে! নতুন কারো আগ্রহ থাকলে আমাকে ইনবক্সে জানিয়ে রাখেন, আমি যাওয়ার আগে আপনাকে নক দিব! আমার বাড়ি কক্সবাজারেই হওয়াতে এই ট্যুরটা আয়োজন করতে আমার বেশ সুবিধা হয়েছিল, এবারেও খরচ আশা রাখি টোটাল খরচ ৩০০০ ক্রস করবেনা!

আর হ্যা, নিজেরা বন্ধুরা মিলে যেতে চাইলেও যেতে পারেন, অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সমুদ্র সৈকতের পুরোটা হেঁটে দেখার! এ ব্যাপারে কোন তথ্য দরকার হলে নক করতে পারেন!

এই ট্যুরে যাওয়ার আগে টিওবি ভাই-ব্রাদারদের অনেক হেল্প পেয়েছি, এখন আমার দায়িত্ব নতুন যারা যেতে চায় তাদের তথ্য দিয়ে হেল্প করার!

Share:

Leave a Comment