ইলিশের বাড়িতে একদিন

কয়েকদিন আগে ঘুরে এলাম চাঁদপুর থেকে। যাওয়ার আগের দিন হঠাৎ করে কাজিন বললো চাঁদপুর যাবে। ভরা বর্ষায় নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখতেই মূলত তার চাঁদপুর যাওয়ার ইচ্ছাটা জাগে। তো যেই ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন চলে গেলাম সদরঘাটের লালকুঠির লঞ্চ টার্মিনালে। লালকুঠি টার্মিনাল থেকেই মূলত চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলো ছাড়ে। আমরা গিয়েছিলাম বোগদাদীয়া-৭ লঞ্চে। এইটা ঢাকা থেকে ছাড়ে ঠিক সকাল ৮:৩৫ এ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় প্রতি ঘন্টায় ই চাঁদপুরের লঞ্চ পাওয়া যায়।

ডেকের ভাড়া ১০০ টাকা করে। আর ২য় শ্রেনীর চেয়ার ১৫০ টাকা। ১ম শ্রেনীর এসি চেয়ার পাওয়া যায় ৩০০ টাকায়। আর কেবিন এর দাম বিভিন্ন ক্লাস ভেদে বিভিন্ন রকম। লঞ্চ ছাড়ার পর একে একে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টায় চলে গেলাম চাঁদপুর। সেদিন আকাশ আংশিক মেঘলা ছিলো আবার মাঝে মাঝে রোদও ছিলো তাই নদীর পরিবেশ ছিলো দেখার মতো। আপনাদের কাছে অনুরোধ যেহেতু বর্ষাকাল চলছে সেহেতু সবাই আবহাওয়া বুঝে নৌ ভ্রমণ করবেন। যেহেতু আমাদের মূল টার্গেট ছিলো নদী ভ্রমণের তাই চাঁদপুর গিয়ে কোথায় যাবো সেটার কোনো প্লান করিনি। চাঁদপুর ঘাটে পৌছানোর পর চলে গেলাম বড় স্টেশনে। ঘাটের সামনে অনেক অটো ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা পাবেন বড় স্টেশনে যাওয়ার জন্য। অটোতে জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে যেতে পারবেন বড় স্টেশনে।

এই বড় স্টেশনের সামনেই পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা। তাই সেখানের নদীর স্রোত থাকে উত্তাল। বড় স্টেশনের পাশেই ইলিশ মাছের আড়ৎ। চাইলে সেখানে ঢু মেরে আসতে পারেন।ইলিশ কেনার ইচ্ছা হলে যেতে পারেন। বড় স্টেশনে নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়ে দুপুরের খাবার খেতে চলে গেলাম হোটেলে। বড় স্টেশনের গেটের কাছেই একটা হোটেল থেকে ইলিশ ভাজা, ডাল ও ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। ইলিশ ভাজা প্রতি পিস ১০০ টাকা। মোটামুটি ১৫০ টাকার মধ্যেই ১ জন ভরপেট খেতে পারবেন আশা করি। খাবারের মান আহামরি ছিলোনা তবে খারাপও ছিলোনা। খাবারের পর সেখান থেকে গেলাম কালিবাড়ি গোলচক্কর। ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। সেখান থেকে কোর্ট রেল স্টেশনের রাস্তা দিয়ে একটু তাকালেই দেখা যাবে সাধনা ঔষধালয় এর একটি বিল্ডিং। বিল্ডিং এর পাশের গলি দিয়ে ঢুকলেই দেখা মিলবে চাঁদপুরের নামকরা ওয়ান মিনিট আইসক্রিম এর দোকান।

যদি না চিনেন তাহলে ওইখানের লোকজন দের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। আইসক্রিম এর দাম ৪০ টাকা। দোকানে পাবেন আরো অনেক মিষ্টান্ন। ইচ্ছে হলে ট্রাই করে দেখতে পারেন। সেখানে খাওয়াদাওয়ার পর আবার চলে গেলাম বড় স্টেশনে। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর রওনা দিলাম লঞ্চঘাটে। গিয়ে আবারো সেই বোগদাদীয়া-৭ লঞ্চে উঠলাম। চাঁদপুর থেকে লঞ্চটি ছাড়ে ঠিক বিকাল ৫ টায়। আসার সময় দেখলাম জেলেরা নদীতে জাল বিছিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অত:পর সূর্যাস্তের মুহূর্ত ছিলো অসাধারণ। এভাবেই আবার ফিরে এলাম যান্ত্রিক শহর ঢাকায় ঠিক রাত সাড়ে ৮ টায়। পোস্টে যেই ভিডিওটা দেওয়া হয়েছে সেখানে নদীর দৃশ্য হাইলাইট করা হয়েছে বেশি। যেহেতু বর্ষাকাল তাই নদী ভ্রমণে আবহাওয়ার দিকে নজর রাখবেন।

বিঃদ্রঃ যেখানেই যান পরিবেশ যাতে নিজের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। আমরা সকলেই পারি আমাদের পরিবেশ ঠিক রাখতে। সকলের ভ্রমণ হোক আনন্দময়।

Source: Md Mehrab Hossain<Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment