একদিনে ঘুরাঘুরির

অনেকেই একদিনে ঘুরাঘুরির ব্যাপারে জানতে চান। একদিনে অনেক জায়গাতেই যাওয়া যায়। এই যেমন নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সোনারগাঁও, নরসিংদী, গাজীপুর, মাওয়া ঘাট, পদ্মা রিসোর্ট, মানিকগঞ্জ জমিদার বাড়ি, গোলাপ গ্রাম। অনেকেই আবার ঘুরাঘুরির জন্য সুদূর সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী সাজেস্ট করে বসেন। এগুলা মারাত্মক ভুল গাইড। এগুলাকে ট্যুর বলে না, জাস্ট চুরির মত দৌড়ের উপর থাকা। মানুষ ট্যুর দেয় রিল্যাক্সের জন্য। কিন্তু সেটাই যদি না পাওয়া যায় তাইলে কিসের ট্যুর।

আমি যেহেতু কুমিল্লার তাই একদিনে কুমিল্লা ভ্রমণের ফিরিস্তি দিব। সকাল ৮ টায় সায়েদাবাদ থেকে এশিয়া লাইন/এশিয়া ট্রান্সপোর্টে (যেটা আগে ছাড়ে) চড়ে বসুন। ভাড়া নিবে ২০০ টাকা। কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট এসে নামবেন। সাড়ে ১০ টার আগেই পৌঁছে যাবেন। তবে আপনি যদি এসিতে আসতে চান তাইলে সায়েদাবাদ থেকে এশিয়া এয়ার কন্ডিশন অথবা কমলাপুর থেকে রয়েল কোচে আসতে পারেন। রয়েল অনেক কমফোর্টেবল বাট স্লো। ক্যান্টনম্যান্ট নেমে উত্তর দিকে ১০ মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত যোদ্ধাদের সমাধি ক্ষেত্র ওয়ার সিমেট্রি। বেশ নিরিবিলি পরিবেশটা আপনার ভাল লাগবে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই ঘুরে দেখতে পারবেন।

এরপর আবার ক্যান্টনম্যান্ট ফিরে আসুন। রাস্তায় দাঁড়ালেই কুমিল্লা শহরগামী অনেক বাস যেমন পাপিয়া, কুমিল্লা হোমনা, সুগন্ধা, বিরতিহীন পাবেন। যে কোন একটায় উঠে পরুন। শাসনগাছা নামবেন। ভাড়া নিবে ১০ টাকা। এরপর অটোতে করে চলে যান কুমিল্লা জজ কোর্টের সামনে। সর্বোচ্চ ১৫ টাকা নিবে। সেখান থেকে কুমিল্লা পার্ক ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যাবেন ধর্মসাগরের উত্তর পাড়। চোখ জুড়ায়ে দেখুন ঐতিহাসিক ধর্মসাগর। আপনি চাইলে ধর্মসাগরের ভিতরে বোট রাইড করতে পারেন। ধর্মসাগর দেখতে দেখতে একবারে চলে আসুন দক্ষিণ মাথায়। এরপর একটু সামনে হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন কান্দিরপাড়।

যদি রসমালাই নিতে চান তাইলে কান্দিরপাড় থেকে পূর্বদিকে হাটা দিন। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মাতৃভান্ডার দেখায়া দিবে। রসমালাই কিনে কান্দিরপাড় থেকে সিএনজিতে উঠুন পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের। ২০ টাকা নিবে ভাড়া। বিশ্বরোড পৌছাতে পৌছাতে ততক্ষণে লাঞ্চ টাইম হয়ে যাবে। লাঞ্চ করতে পারেন দেশের প্রথম ৩ স্টার হোটেল নুরজাহানে। তবে খাবার ব্যয়বহুল। হোটেলের বাহিরের প্লেসটা আপনার ভাল লাগবে। পুরাই একটা মিনি পার্ক। খাবার অর্ডার করে বাইরে বসে খেতে পারেন। চেয়ার টেবিল বসানোই আছে। তখন মনে হবে আপনি বনভোজনে বসে খাচ্ছেন। আর যদি আপনার বাজেট কম তাইলে বিশ্বরোডে আরও অনেক হোটেল পাবেন। ঐগুলাতেও খেতে পারেন। আপনি যদি আমার মত লেটে লাঞ্চ করার লোক হন তাইলে লালমাই পাহাড় দেখে ফিরার সময় লাঞ্চ করতে পারেন বিশ্বরোডেই। বিশ্বরোড থেকে সিএনজিতে চলে যান লালমাই বাজারে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০ টাকা। লালমাই বাজার থেকে অটোতে চলে যান চন্ডিমুড়া পাহাড়ে। লাল মাটি ঘেরা পাহাড়ের পরিবেশ আপনাকে অন্য রকম অনুভূতি দিবে। ঘণ্টা খানেক চারপাশটা ঘুরে দেখেন। তবে সাবধান পাহাড়ের বেশি ভিতরে যাবেন না। ছিনতাইয়ের শিকার হতে পারেন। লালমাই পাহাড় দেখে আবার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে ফিরে আসেন।

সেখান থেকে মাইক্রোতে করে চলে আসুন কোটবাড়ি বিশ্বরোড। ভাড়া নিবে ১৫ টাকা। এরপর সিনজিতে করে সোজা কোটবাড়ি বাজার। ১০ টাকা নিবে প্রতিজনে। সিএনজি থেকে নেমেই দেখতে পারেন তাক লাগানো বার্ডের গেট। তবে বার্ডের ভিতরে ঢুকতে দিবে না কারও রেফারেন্স ছাড়া। অবশ্য জাতীয় দিবসগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। বার্ডের গেট দেখে সোজা পশ্চিম দিকে হাটা দিন। সাইনবোর্ডই আপনাকে জানিয়ে দিবে ইটাখোলা মুড়ার কথা। সেখানে একটা প্রাচীন বিহার আছে। সাথে ধ্যানমগ্ন এক মূর্তি। ২০/২৫ মিনিটে সব দেখা শেষ করে আবার কোটবাড়ি বাজারে ফিরে আসুন। এরপর অটো/সিনজিতে উঠে পরুন। ড্রাইভারকে বললেই শালবন বিহারের গেটে নামায়া দিবে। ভাড়া নিবে ১০ টাকা।

এরপর টিকেট কেটে ঢুকে পরুন প্রাচীন ঐতিহ্যে ঘেরা শালবন বিহারে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি। বিহারের চারপাশের কৃত্রিম পরিবেশটাও আপনাকে নাড়িয়ে দিবে। ঘণ্টা দেড়েক এখানে কাটাতে পারেন। এরপর দেখতে পারেন ময়নামতি মিউজিয়াম। প্রবেশ ফি ১০ টাকা। তবে এটার ভিতরে এখন তেমন কিছুই নাই। শালবন বিহার থেকে বেরিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে যে বন দেখতে পাবেন ঐটাই শালবন । শালবনে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। বৈকালিক স্ন্যাকস করতে পারেন কাশবন রিসোর্টে। আশা করি সাড়ে ৫ টার আগেই আপনার সব দেখা হয়ে যাবে। এরপর শালবন বিহারের গেট থেকে সিনজিতে উঠে পরুন। কোটবাড়ি বিশ্বরোড নামবেন। ২০ টাকা নিবে।

এরপর অপেক্ষা করতে থাকেন এশিয়া ট্রান্সপোর্টের। বাস আসলে হাত দেখালেই থামাবে। উঠে পড়ুন। ২০০ টাকা নিবে। আর আপনি যদি এসিতে আসতে চান তাইলে কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে মাইক্রো দিয়ে ক্যান্টনম্যান্ট চলে আসুন। ভাড়া নিবে ২০ টাকা। ক্যান্টনম্যান্ট থেকে এশিয়া এয়ার কন্ডিশন/রয়েল কোচে উঠতে পারবেন। আশা করি রাত ৮ টার আগেই আপনি ঢাকা পৌঁছে যাবেন।
কোন সমস্যা হলে বলতে পারেন।

Post Copied From:Masud Sarker Rana‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment