কাপ্তাই-বিলাইছড়ি (৩৪ কিমি) কায়াক অভিযান।
জলপথে বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই লেকে ২৪ থেকে ২৫শে নভেম্বর সফলভাবে শেষ হল কাপ্তাই- কাপ্তাই কায়াক ক্লাব (৩৪ কিমি) কায়াক অভিযান।
অভিযানে ৯ টা কায়াকে ১৬ জন অভিযাত্রী অংশগ্রহণ করেছে। আর সাপোর্ট বোটে অভিযাত্রীদের উৎসাহ ও সাপোর্ট দিতে ক্যামেরা হাতে ছিল আরো ৬ জন। ঢাকা থেকে এসেছে ১০ জন।
অভিযানটির মুল আয়োজক( Kaptai Kayak Club) কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের নিজস্ব ছয়টি রিক্রিয়েশনাল কায়াক ছাড়াও এতে অংশ নেয় ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি ইনফ্ল্যাটাবেল কায়াক।
২৩ তারিখ বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩ জন অভিযাত্রী কাপ্তাই কায়াক ক্লাবে এসে ঝড়ো হয়। কায়াকিং এক্সপিডিশনের হোস্ট ইউসুফ রানার নেতৃত্ব ৬ টা কায়াক কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের ঘাট থেকে ৭ কিমি দূরে এক্সপিডিশন শুরুর মুল পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কাপ্তাইয়ের বিলাসবহুল হাউজ বোটে রাতে ক্যাম্পিং এর আয়োজন করা হয়। ১৫ জন বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পিং এ যোগ দিলে ও বাকি ৯ জন শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে এসে পৌছাইছে। রাতে ক্যাম্পিং এ ভুতের আড্ডাটা মজার ছিল। যদিও অনেকে ভুতের ভয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাই গেছে।
২৪শে নভেম্বর শুক্রবার কাপ্তাইয়ের নতুন বাজার হাউজ বোট থেকে সকাল ৭:৩০ মিনিটে বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে অভিযাত্রীরা কায়াকিং শুরু করেন। দুপুর ১১:৩০ মিনিটে অভিযাত্রীরা গাছকাটাছড়া আর্মি ক্যাম্পে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন ও একটা গ্রুপ ছবি আর্মি ক্যাম্পে জমা দেন। ২ পাশে পাহাড় পরিবেষ্টিত হ্রদে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা কায়াকিং করে ১৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বেলা ১টার দিকে তারা গন্তব্যস্থল বিলাইছড়িতে পৌঁছান।
বিলাইছড়িতে দুপুরের খাবার শেষ করে সবাই হেটে বিলাইছড়ি উপজেলার আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। হালকা চা নাস্তা খেয়ে বোটের ছাদে বসে চাঁদ দেখতে দেখতে আড্ডা জমে উঠল। কেউ বা ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেকে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত ৯ টায় স্থানীয় হোটেলে খাওয়া – দাওয়া শেষে যে সবাই টেন্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কয়েক জনের বাথরুমের সমস্যা থাকায় নিরিবিলি বোডিং রুম নিল ২ টা।
সকাল ৬ টা থেকে অভিযাত্রীরা একে অপরকে ডাকাডাকি শুরু করে দিল। আমার কয়েকজন অলস অভিযাত্রী তাবুর ভিতরে বসে সকালে কুয়ায়াশাচ্ছন্ন হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে গেল, কেউ বা ছবি বা সেলফী খিচাতে ব্যস্ত। যথাসময়ে সকাল ৮:০০ এ নাস্তা শেষে অভিযাত্রীরা শুকনো খাবার নিয়ে যে যার মত করে কায়াকে উঠে বসল। আগের দিনেত মত ৮:৩০ কাপ্তাইয়ের গন্তব্যে কায়াকিং শুরু হল। ১ম দিনের ছেয়ে ২য় দিন অভিযাত্রীদের অনেক সতেজ ও প্রাণবন্ত দেখা যায়। সবার মাঝে ১ম হওয়ার একটা নীরব অভিপ্রায় লক্ষ্য করা যায়। কে কার আগে যাবে এই লক্ষ্য নিয়ে সেদিন সবার মাঝে উত্তেজনা কাজ করে। ইমরুল ভাই আর আমার কায়াকে জিপিএস এ কায়াকিং স্পিড এভারেজ ৭.১৫ দেখাল। টান টান উত্তেজনায় সেদিন অভিযাত্রীরা বেলা ১২ টার দিকে পুনরায় কাপ্তাই ফিরে আসেন। পথিমধ্য গাছকাটা আর্মি ক্যাম্প সহ ২ টা বিরতি ছিল।
এক্সপিডিশনের মুল লক্ষ্য ছিল নদীমাতৃক বাংলাদেশে কায়াকিং একটিভিটি বাড়ানো, কায়াকিং এর প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করা, শুধু বিনোদনের জন্য কায়াকিং না করে কায়াকিং কে একটা স্পোর্টস হিসেবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা। তাছাড়া এই দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক পুরনো কায়াকার বা নৌ পথে এডভেঞ্চার পছন্দ করে এরকম যারা আছে সব পরিচিত মুখদের এক করা।
খুব শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন নৌপথে নিয়মিত এই ধরণের অভিযান পরিচালনা করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি কাপ্তাই কায়াক ক্লাব এর পক্ষ থেকে। এই উদ্দেশে অচিরেই বেশ কিছু অভিযান উপযোগী সিঙেল রেসিং কায়াক নিয়ে আসতেছি।
তাছাড়া কাপ্তাই কায়াক ক্লাব মেম্বারশিফ শুরু করতে যাচ্ছি ২০১৭ থেকে। অভিযানে কায়াক ক্লাব মেম্বারদের নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে রাখা হবে সারা বছর। এর মাধ্যমে আমরা কায়াক ক্লাবকে একটা বড় এডভেঞ্চার কমিউনিটি তে পরিনত করতে চাই।
আপকামিং এক্সপিডিশন :
কাপ্তাই – রাঙামাটি
কাপ্তাই – পতেঙ্গা
Post Copied From:Mohammad Yousuf Rana>Travelers of Bangladesh (ToB)