চট্টগ্রাম টু কাপ্তাই & বিস্তারিত
আমরা গিয়েছিলাম বহদ্দারহাট থেকে। জায়গা ফিক্সড করেছিলাম শেখ রাসেল পার্ক, নেভী ক্যাম্প আর জুম রেস্টুরেন্ট ফর কায়াকিং।
.
সকাল ৮ টায় আমরা ছয় জন বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে পৌছাই। সেখান থেকে ডিরেক্ট কিছু বাস লিচু বাগান আর কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কাপ্তাই লেকের দিকে গেলে অবশ্যই কাপ্তাইয়ের বাসে উঠবেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৬৫ টাকা।
.
#শেখ_রাসেল_পার্কঃ আমরা কাপ্তাই যাওয়ার আগে রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল পার্কে নেমে যাই। নামার পর সেখানে জনপ্রতি মাত্র ২৩ টাকার বিনিময়ে ৬ টা টিকেট নিই। ভেতরের সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে মোটামুটি সুন্দর বলা যায়। ঢালু পথ বেয়ে উপরে উঠার সময় ওদের গাইড ম্যাপটা দেখে নিবেন অবশ্যই। সেখানে আছে কৃত্রিম দ্বীপ, কৃত্রিম লেক, কৃত্রিম গুহা। সময় সল্পতার কারণে আমরা কৃত্রিম গুহা দেখতে পারিনি…
.
#নেভীক্যাম্পঃ শেখ রাসেল পার্ক থেকে বের হয়ে আমরা নেভী ক্যাম্পের দিকে যাব স্থির করলাম। শেখ রাসেল পার্কের বাইরে কিছু সিএনজি থাকে। নেভী পিকনিক স্পট বললে নিয়ে যাবে। রিজার্ভ ভাড়া ২০০ নিবে। নেভী ক্যাম্পে প্রবেশের পর সেখানকার কর্মরত নেভী সৈনিকেরা আপনাকে সালাম দিয়ে সম্মানিত করে টিকেট নিতে বলবে তাদের কাউন্টার থেকে। টিকেট মাত্র ২০ টাকা। আমরা ছয়টা টিকেট নিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরির জন্য অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। তবে বৃষ্টি পড়লে লেকের পানি ঘোলাটে থাকবে, যা দেখতে আপনি মোটেই ভাল বোধ করবেননা। ওখানে কিছু প্যাডেল বোটও আছে। প্রতি ঘন্টায় ৩০০ করে নেয়। আমরা কায়াকিং করব চিন্তা করে প্যাডেল বোটটা ব্যবহার করিনি। প্যাডেল বোট গুলো যেখানে আছে সেই ঘাট দিয়ে আমরা ঘাটের বিপরীত পাড়ে পৌছায় (মাঝখানে রাস্তা আছে)। তারপর সিড়ি বেয়ে আরও উপরে চলে যাই। রৌদ্র পরিবেশে পুরো লেক আপনি সেখান থেকে দেখতে পাবেন। একেক জলবায়ুতে লেককে একেক রকম দেখায় সাধারণত। শীতে গেলে এক রকম, গ্রীষ্মকালে গেলে এক রকম আর বর্ষা মৌসুমে গেলে আরেক রকম। শীতে গেলে লেকের পানি সমুদ্রের পানির মত নীল হয়ে যায়, গ্রীষ্মে গেলে পানি গুলো সবুজ আভা ধারণ করে আর বর্ষায় গেলে পানি গুলো ঘোলাটে কাদাযুক্ত হয়ে যায়। শীতকালে গেলেই বেষ্ট মজাটা পাবেন… আমরা সেখানে কিছু ফটোশ্যূট করলাম। তারপর খাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত স্থির করলাম।
.
#নয়াবাজারঃ ক্যাম্প থেকে যারা খাবারের জন্য যাবেন তারা অবশ্যই নয়াবাজারে যাবেন। ক্যাম্পের রাস্তায় কিছুক্ষণ দাড়ালেই খালি সিএনজি পেয়ে যাবেন। সিএনজি ভাড়া রিজার্ভ ১০০ টাকা। আমরা ৬ জন হওয়াতে ১২০ টাকা নিয়েছিল। নয়াবাজারে সিএনজি স্টেশনে নামার পর অনেক গুলো খাবারের হোটেল দেখবেন। মোটামুটি সুস্বাদু খাবার এখানেই পাবেন। আমরা খেয়েছিলাম “নোয়াখালী ভাত ঘর” দোকানে। তবে ভাত ছিল সিদ্ধ চালের। তরকারী প্রায় আইটেম পাওয়া যায়। আমরা খেয়ে ছিলাম কাঁচকি মাছ আর শুঁটকি বুনো। প্রতি প্লেট ৪০ টাকা। এমন কাঁচকি মাছ আর শুঁটকি বুনো আমি খুব কমই খেয়েছি। পেট পুরে আমরা মোট ৬ জন খেলাম। বিল আসল মাত্র ৩৯০ টাকা।
.
#জুম_রেস্টুরেন্টঃ আমরা নয়াবাজার থেকে দুপুরের খাবার শেষে এবার জুম রেস্টুরেন্টের দিকে যাব স্থির করলাম। সেখান থেকেও সিএনজি নিতে পারেন, ভাড়া রিজার্ভ তাও ১০০ টাকা। তবে আমরা একটি চলন্ত বাস পেয়ে যাই, সেটা করে জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে আমরা জুম রেস্টুরেন্টে নামি। জুম রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সচরাচর জনপ্রতি ২০ টাকা এন্ট্রি ফি নেয়। তবে সেটা আমাদের থেকে ওরা চায়নি…
.
#কায়াকিংঃ যেটার জন্য মূলত এই ট্যূরটা দিয়েছি এখন সেটা নিতে যাচ্ছিলাম। জুম রেস্টুরেন্ট কাউন্টারে গিয়ে বললাম আমাদের ৩ টা কায়াকিং বোট দেয়ার জন্য। উনি বললেন ঘন্টায় ২০০ টাকা। অথচ আমি শুনে এসেছি এগুলো ঘন্টায় ৩০০ টাকা নেয়। ১০০ টাকা কমে গেল? ওদের পাশে আরও একটি কায়াকিং বোটের ঘাট আছে দেখলাম। পাশেরটা অন্য পাবলিকদের তত্ত্বাবধানে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,”পাশের ঘাটে মনে হয় ৩০০ করে নেয়, আপনারা কম নিচ্ছেন কেন?” ভাবলাম বোট গুলোর মধ্যে হয়তো পার্থক্য আছে। তাই দুই ঘাটেরই বোট গুলো চেক করে দেখলাম বোট সব গুলোর সাইজ এক রকম বরং ২০০ টাকার গুলোর জ্যাকেট আর বোট গুলো আরও নতুন দেখাচ্ছিল। আমরা ৬ জনের জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে ৩ টা বোট নিয়। সাথে আমাদের ৩ বোটের ৩ জনের নাম,ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা এন্ট্রি করে নিল ওরা। মোবাইল, মানি ব্যাগ, ক্যামেরা একটা পলিথিনে বেধে ওদের রেস্টুরেন্টে জমা দিলাম আমরা। আমরা নিচে চলে গেলাম, নিচে সেখানে একজন বোট মাষ্টার আছেন। উনি আপনাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিবেন। তারপর লাইফ জ্যাকেট পড়িয়ে দিবেন। আপনার সাতার জানা সত্ত্বেও ভুলেও লাইফ জ্যাকেট না পড়ার সিদ্ধান্ত নিবেননা কারণ (আল্লাহ্ না করুক) লাইফ জ্যাকেট পড়া অবস্থায় আপনি সাতরালে আপনার শক্তি কম খরচ হবে আর ওটা ছাড়া সাতরালে আপনি ১০ মিনিটেই এনার্জিলেস হবেন এবং ডুবে যাবেন। কাজেই লাইফ জ্যাকেট পড়ে থাকলে অন্তত ডুবার সম্ভাবনা নাই।
.
#কায়াকিং_চালনার_কৌশলঃ নামার আগে এই কৌশলটা বোট মাষ্টার আমাদের জানাতে ভুলে গিয়েছিল। যার কারণে আমরা কেবল এদিক ওদিক ঘোরপাক খাচ্ছিলাম। মনে রাখবেন বৈটা যদি বাম দিকে চালান তাহলে নৌকা ডান দিকে ঘুরবে, আর ডান দিকে চালালে নৌকা বাম দিকে ঘুরবে। কিন্তু নৌকাকে যদি সোজা সাপ্টা বরাবর নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনি চালাবেন বাম দিকে, আর আপনার পেছনের জন চালাবে ডান দিকে। বাম আর ডান দিকে লব্ধি একই হওয়াতে নৌকা অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ও বলা হয়নি, ছোট ছোট নৌকা গুলোতে দুইজন করে বসা যাবে। আর যদি নদীর মাঝখানে ছবি তুলতে চান তাহলে অবশ্যই সেলফি স্টিক নিয়ে যাবেন, এতে আপনি বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি নিতে বেশ ভাল বোধ করবেন, ডিএসএলার না নেওয়াই ভাল। টাইম শেষ হয়ে গেলে ওরা আপনাকে কাউন্টার থেকে ফোন দিবে, তবে আমরা ফিরতে ফিরতে আরো ২০ মিনিট দেরি করে ফেলি, কিন্তু এরজন্য কোনো এক্সট্রা চার্জ দাবি করেনি তারা। মোটামুটি জুম প্যানোরমা রেস্টুরেন্ট থেকে এই সার্ভিসটা পেয়ে আমরা খুব ভাল বোধ করলাম। সময় তখন বিকেল ৫ টা…
.
#বাড়ি_ফেরাঃ আমরা জুম রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ি। এখানে আপনি চলন্ত বাসেও উঠে ডিরেক্ট সিটিতে এসে পৌছাতে পারেন তবে এক্ষেত্রে সিট না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হয় যদি সিএনজি করে লিচু বাগান বাস স্টেশনে চলে আসতে পারেন। আমরা তাই করেছিলাম। জুম রেস্টুরেন্ট থেকে রিজার্ভ ১২০ টাকা (৫ জন ১০০) দিয়ে লিচু বাগান বাস ষ্ট্যান্ডে পৌছাই। সেখানে হালকা নাশতা সেরে আমরা শহরে উদ্দেশ্যে বাসে উঠি। লিচু বাগান থেকে বাস ভাড়া জনপ্রতি ৪৫ টাকা নিবে। রাস্তাঘাট কিছুটা বিঘ্নিত অবস্থায় আছে বলে আমরা প্রায় আড়াই ঘন্টা পর রাত ৮ টায় বহদ্দারহাট টার্মিনালে পৌছায়।
#খরচাদিঃ খরচ খুব একটা বেশি পড়েনি আমাদের। আমরা ৬ জন মোট ৩০০০ হাজার টাকা বাজেট করেছিলাম, জনপ্রতি ৫০০ করে। কিন্তু হিসেব করে দেখলাম আমাদের মাত্র ৪৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে।
.
#সতর্কতাঃ নেভি ক্যাম্পে প্যাডেল বোট বা জুম রেস্টুরেন্টে কায়াকিং বোট যেটাই রাইডিং করেননা কেন অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন, কথিত নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলবেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন রাখা আমার আপনার নাগরিক দায়িত্ব, তাই যেখানে সেখানে ময়লা করবেননা…
Post Copied From:Soeb Kayes>Travelers of Bangladesh (ToB)