চট্রগ্রাম শহর ও এর আশপাশের সৈকত সমুহ

#সমুদ্র সৈকত এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট :-

চট্রগ্রামের শহরের খুব কাছে যেমন সমুদ্র সৈকত আছে তেমনি একটু দুরেও কিছু সমুদ্র সৈকত আছে। নিচে একে একে বিস্তারিত লিখা হলো।

(ক) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত :-  এটি চট্রগ্রামের একেবারে দক্ষিন – পশ্চিমে অবস্থিত।মূল শহর থেকে মাত্র ১২+  কি:মি: দুরে অবস্থিত। সরকারি ভাবে পাথর দিয়ে বেড়িবাধ বানানো , যেখানে পর্যটকরা বসতে পারেন।এছাড়া ভাটার সময় পানি অনেক দুরে চলে যায় তখন কক্সসবাজারের মত বালুতে নামা যায় এবং চাইলে আপনি ছাতা সহ চেয়ার অথবা বেডে বসতে পারেন। চাইলে গোসলও করতে পারেন।এ সৈকতের মুল অকর্ষণ সুর্যাস্থ দেখা এবং দুরে জাহাজের চলাচল দেখা। স্পিডবোর্টে করে কাছ থেকে বিশাল বিশাল জাহাজ দেখা এবং বিচ বাইক বর্তমানে এ সৈকতের নতুন আকর্ষণ।

#কাছের অন্যান্য জায়গা সমুহ :-

১. বাটারফ্লাই গার্ডেন:- সৈকতের খুব কাছেই পাবেন বাটারফ্লাই গার্ডেন। যেখানে পাবেন নানারকম বাটারফ্লাই/প্রজাপতি আর সুন্দর একটি বাগান।সৈকতের ঢুকার আগে যে মূল রাম্তা পরে সেটার দক্ষিন দিকে কিছুদর হাটার পর প্রথম মোড়ে হাতের বামদিকের রাম্তাটিই বাটারফ্লাই গার্ডেনে নিয়ে যাবে আপনাকে।পতেঙ্গা সৈকতের রাস্তা থেকে চাইলে একটি রিক্সাও নিতে পারেন।  বাগানের টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন। টিকিট ১০০-১২০ টাকা।
২. নেভাল :- নেভাল চট্রগ্রামের বিকাল অথবা পড়ন্ত সন্ধ্যা কাটানোর একটি দারুণ জায়গা। এটি আসলো নদীর পাড়ে একটি রাস্তা যেখান থেকে আপনি নদী এবং বিশাল বিশাল জাহাজ দেখতে পারবেন। জাহাজ গুলু খুব কাছেই থাকে। আর বসে থাকার জন্য নদীর পাড়ের রাস্তার পাশের সুন্দর দেয়ালতো আছেই। খাবার দাবারের প্রচুর হকার আছে। কিন্তু এখানের “কাকড়া” ভাজা সবচেয়ে বেশি চলে।বাটার ফ্লাই গার্ডেনর সামনের রাস্তাদিয়ে ১ মিনিট হাটলেই নেভাল।
৩. এয়ারপোর্ট :- নেভাল দিয়ে পশ্চিম দিকে কদ্দুর হাটার পরই আপনি এয়ারপোর্টের রাস্তাটি দেখবেন।

#কিভাবে শহর থেকে পতেঙ্গা সৈকত যাবেন :- শহর থেকে অর্থাত জিইসি , আগ্রাবাদ খেকে আপনি চাইলে বাসে যেতে পারেন। লোকল বাস সবসময় পাওয়া যায়। ১০ নং সহ অনেক বাস এই রুটে চলে। মাঝে মাঝে বাস সৈকত পর্যন্ত না যেয়ে কাঠগড় পর্যন্ত যায়। কাঠগড় থেকে ৩-৪ মিনিটে আপনি অন্য বাসে বিচে যেতে পারেন। জিইসি , আগ্যাবাদ দিয়ে বিআরটিসির লাল বাস গুলাও চলে। ভাড়া একই ১৫-২০টাকা জনপ্রতি। এছাড়া আপনি সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারেন। ভাড়া দরাদরি করলে ১৮০-২৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। কর্ণেল হাট বা হালি শহর রুটে ১১ নং বাস সি-বিচ পর্যন্ত যায়। ভাড়া একই।

#কোথায় থাকবেন / ক্যাম্পিং সম্ভব? :- নেভি কলোনি/সেইলর কলনিতে কিছু ডরমেটরি আছে নাবিকরা থাকার জন্য সেখানে থাকতে পারেন। এছড়া নগরীর ভেতরে জুবলী রোড , স্টেশান রোড জিইসি এবং আগ্রাবাদে বেশ কিছু হোটেল আছে। ক্যাম্পিং সম্ভবনা সি বিচ এরিয়াতে। সিকিউরিটি সমস্য হতে পারে। তবে ছোট গ্রুপ হলে সন্ধ্যায় ক্যাম্প করা যেতে পারে।

(খ) কাট্রলী সমুদ্র সৈকত এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট :- এটি মুলত দক্ষিন কাট্রলীতে পড়েছে। জহুর আহমেদ চোধূরী স্টেডিয়ামের ঠিক পেছনে। অসাধারণ একটা জায়গা। এটি সম্পুর্ণ বালুর সৈকত নই বটে কিন্তু খুবই সুন্দর আর পাশেই মোটামুটি একটি ম্যানগ্রোভ গাছের বন আছে। আমার কাছে সৈকত থেকে বনটাই সুন্দর লাগে।সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোই মানুষে ভরতি হয়ে যায় , আর ছেলেরা ফুটবল , ক্রিকেট খেলে। বনের ভেতরে তেমন কেউ যায়না। আর বনের ভেতরে ছোট ছোট কিছু সৈকতও আছে। ভোরবেলা এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়।

#কাছের অন্যান্য জায়গা সমুহ :-

(ক) মাছের ঘের :-  কাট্রলী বিচের সামনের রাস্তার উত্তরদিকে নিরিবিলি রেস্টুরেন্টের একটু পরেই কিছু মাছের ঘের আছে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রজেক্ট। ঘুরতে চাইলে এমনিতেই ঘুরা যায় কেউ কিছু বলবেনা। আর আপনি যদি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে পছন্দ করেন তবে ২-৩ দিনের জন্য কোন একটা সিট ভাড়া করতে পারেন। ৩০০০-৮০০০ টাকায় সিট পাবেন। প্রচুর মাছ আছে এখানে। আমি নিজে একবার সিট নিয়ে মোট প্রায় ৪৫ কেজি মাছ ধরেছি ৪ দিনে। রাতে জেনারেটর আর থাকার ব্যাবস্থা আছে। মাছ ধরা যায়। পরিবেশটাও অসাধারণ। তাবু খাটানোর মত জায়গা আছে এখানে।

(খ) রেস্টুরেন্ট :- কাট্রলী বিচ থেকে রাস্তা ধরে উত্তর দিকে হাটলে প্রচুর রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। প্রথমেয় পড়বে নিরিবিলি। বাজে একটা জায়গা। আরো প্রায় ১০-১৫ মিনিট হাটলে হাতের ডান দিকে আপনি পাবেন “ক্যাফে ব্যাবলিয়ন” অসাধারণ একটি রেস্টুরেন্ট। বসার জন্য আউডোর ব্যাবস্থাটাও সুন্দর। এছাড়া আরো পরে পাবেন বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট। হাটর জন্য পুরো রাস্তাটায় সুন্দর। আপনার একপাশে থাকবে মাছের ঘের , ম্যাসগ্রোভ ফরেস্ট আর সমুদ্র। অন্য পাশে বিশাল একটি হাইওয়ের পাশে সবুজ মাঠের পর মাঠ। ভালই লাগবে।

(গ) বাবুল দত্তের বাড়ী :- সুন্দর একটি বাড়ী। দত্তের স্ত্রির মৃত্যুর পর উনি পুরো বাড়িটাকে তার স্ত্রির সৃতিতে ভরিয়ে তুলেছেন। পুরো বাড়িটা যেন একটি বাঙলা তাজমহল। মন্দির , স্ত্রির মুর্তি , আর অনেক ভাস্কর্জে ভর্তি। ক্যাফে ব্যাবলিয়নের পরের ব্রিজের নিচে দিয়ে বের হয়ে অল্প একটু হাটলে রেল গেট এর একটু পরেই তার বিক্ষাত বাড়ী। সবাই চেনে। প্রশ্ন করলেই দেখিয়ে দেবে।

#কাট্রলী বিচে যেভাবে যাবেন :- প্রথমে চট্রগ্রামের অলংকার মোড়ে যেতে হবে। এরপর একটি রিকসা নেবেন বলবেন দৈইজ্জার কুল বা বেড়ি বাধ যাবেন , নিয়ে যাবে। ২৫-৩০ টাকা ভাড়া।এছাড়া সিটিগেইট এরিয়ার একটু পরের বাদামতলীর মোড় থেকে যে কোন রিকসাকে বলবেন বাংলাবাজার যাবেন।বাংলাবাজার থেকে হেটে বেড়িবাধ আসলেই দেখবেন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। পুরো এরিয়াটিই সুন্দর।ইটের ভাটাই ইট তৈরি দেখবেন। বনে ঢুকে সুনশান নিরবতায় বনে ঘুরতে পারবেন।দক্ষিনে কাট্রলী ফরেস্ট আর উত্তরে সাংঘু গ্যাস ফিল্ড।আর পথে অনেক রেস্টুরেন্ট।

(গ) আনোয়ারা পারকি বিচ :- এটি চট্রগ্রাম থেকে একটু দুরে।খুবই সুন্দর একটি বিচ এবং বন আছে।বালুর সুন্দর বিচ বন আর সৈকতকে আলাদা করে রেখেছে।ছিমছাম আর টুরিস্টদের সংক্ষ্যা কম। দুরে জাহাজ দেখা যায় আর সমুদ্র এবং কর্নফুলী নদি দুটোই দেখা যায় এক বিচ থেকে।

#কাছের অন্যান্য জায়গা সমুহ :-

তেমন বিশেষ কিছু দেখার নেই পটিয়া প্রিতিলতা ওয়াদ্দার বাড়ি , ডাকঘর আর বেশকিছু মন্দির এবং মসজিদ আছে।

#যেভাবে আনোয়ারা পারকি বিচ যাবেন :- পারকি বিচ চট্রগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৯ কি:মি দুরে। এটি আনোয়ারার মুল বাজার থেকে প্রায় ৭-৮ কি:মি দুরে।গহিরা নামে একটা স্থানর ভেতরে পরেছে। লোকাল গাড়ি সরামরি পাওয়া কষ্ট। চট্রগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে বাসে পটিয়া হয়েও যাওয়া যায় আর নই সরাসরি সিএজি নিয়ে যেতে পারেন। সিএনজি ৩০০-৩৫০টাকা নেবে। আর নইতো ১৫ নম্বর ঘাট থেকে বোটে যেতে পারেন। সাধারণ বোট ৫০০ টাকার মতো নেবে। এক বোটে ১২-১৫ জন বসা যায়।

(ঘ) কুমিরা ঘাট :- কুমিরা ঘাট আসোলে একটি জেটি ঘাট সন্দিপে যাওয়ার জন্য। পাশেই একটি ছোট চরমত আছে।ঘাটটা বিশাল আর জাহাজ কাটা শিল্পদেখা যায়।

কাছের স্থান বলতে ভাটিয়ারী লেক , সিতাকুন্ড ইত্যাদি।

যেভাবে যাবেন:- ঢাকা চট্রগ্রাম রোডের কুমিরাতে অবস্থিত। আর শহর থেকে ৪ নম্বর বাস যাই মাঝে মাঝে। বাসে ২০ টাকার মত নেই। আর বাস না গেলে ভাটিয়ারী নেমে লোকাল সিএজিই ভরসা।

Share:

Leave a Comment