সেন্টমার্টিন ভ্রমন কাহিনী

অনেক দিনের ইচ্ছা সেন্টমার্টিন যাবো, কাউকে পাচ্ছিলাম না সফর সঙ্গী হিসেবে । তারপর Sohan ভাইয়ের উদ্যোগে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে । আজ বলবো St. Martin সফরের কাহিনী ।
সেন্টমার্টিন সফর তার উপর তাবুতে রাত্রি যাপন এ যেন স্বপ্নের মাঝে বিভিন্ন রং এর রং তুলির আঁচর ।।
যাবো ০৯•১১•১৭ তারিখ, সময় যেন আসতে চায় না। ও বলে নেই মোটামুটি শিওর যাচ্ছি ট্রলারে, তাই YouTube এ সেন্টমার্টিনে ট্রলার যাত্রার কিছু ভিডিও দেখে নিলাম। ভিডিও দেখে মোটামুটি ভয়ই পেয়েছিলাম । তারপর ও ভয়ের পরে জয় এ কথা ভেবেই রওনা দিলাম শ্যামলী আরামবাগ কাউন্টারের উদ্দেশ্যে । মাঝে বলে নেই আমার বন্ধুরা কেউই চাচ্ছিলো না আমি এতো রিস্ক নিয়ে যাই, আমি যাবোই বলাতে তার ফলশ্রুতিতে আমার বাসায় কল দিয়েছিল সালারা। তারপর আম্মুর জিজ্ঞাসা কই যাচ্ছিস? ? আমি বলে দিলাম যেখানে শুনেছ ঐ খানেই যাচ্ছি । এই বলে বেরিয়ে পড়লাম । ৭টার বাস একটু আগেই চলে এসেছি, ভাইদের সাথে ও পরিচয় হলাম । আমার বন্ধু সুদূর বসুন্ধরা আবাসিক থেকে ক্লাস শেষ করে মাএ ৪০ মিনিটে চলে আসে আমাকে সিঅফ করতে(একেই বলে ভালোবাসা )। সারা রাস্তা পাশের সিটের ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম টেকনাফ । আমরা ঢাকা থেকে গিয়েছিলাম ২০ জন । আমাদের টিম লিডার সোহান ভাই টেকনাফেই ছিলেন ।
৬:৪০ বাজে,তখন ও অনেক সময় হাতে । ভাটা চলছে ,ট্রলার ছাড়বে ১ টায় । নাস্তা সেরে আমরা নিজেদের মতো করে ২ টা টিম এ বিভক্ত হয়ে আসে পাশে ঘুরতে বের হলাম । একদল গেল মেরিন ড্রাইভ এর দিকে আর আমরা গেলাম শাহ পরীর দ্বীপ এর দিকে। পথিমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের বিজিবি চেক পোস্ট আমাদের থামিয়ে দিল , আর নাকি যাওয়া যাবে না । তার পর আর কি করার কিছু ভাই রোহিঙ্গা শিবিরে ঘুরে আসলো। তারপর সবাই ব্যাক করলাম টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে । আরো ৭ জন এর মতো আমাদের সাথে জয়েন দিলো। আমাদের এখন মেম্বার ৩০ জন এর মতো । আমরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম টেকনাফেই। শুক্রবার নামাজের পর ট্রলারে আমাদের যাত্রা শুরু । সমুদ্র পথে দেখলাম কিছু রোহিঙ্গাদের ট্রলার ডুকছে বাংলাদেশে। সেন্টমার্টিন পৌঁছালাম সূর্যাস্তের সময় । তাবু সেট করলাম । রান্না বান্নার জন্য আমরা বাজার নিয়ে গিয়েছিলাম টেকনাফ থেকেই । রাতে মুনতাসিম ভাইয়ের হাতের হাঁস খিচুড়ি আহহহহ ।।।।
একটা খারাপ লাগা ছিল যে পূণিমার চাঁদটা নেই বলে। কিন্তু কিছু পরই আকাশ ভরা তারার মেলা বসেছিল । যা নিমিষেই চাঁদের অভাব টা পুরণ করে দিয়েছে ।
তারপর আমরা কয়েকজন নামলাম সাগরে। কিছুক্ষণ লাফালাফি যাপাযাপি করলাম। সকল ভ্রমন ক্লান্তি যেন নিমিশেই চলে গেল।
তাবুতে ফিরলাম অনেক relax লাগছে, সমুদ্রের গর্জন বাতাস আর আকাশের সঙ্গী তারা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ও উঠেছি সমুদ্রের গর্জনে, এ এক দারুণ অনুভূতি।
নাস্তা করে লাইফ বোডে করে ছেঁড়া দ্বীপ গেলাম ,ঘুরলাম ফিরলাম । ব্যাক করার সময়ে কিছু ভাই হেঁটেই সেন্টমার্টিন ব্যাক করেছিল । ডাব খেলাম অনেক ,আসলেই ডাবের পানিটা বড় স্বাদের পানি খেয়ে শেষ করা যায় না। ঐদিন খাবার প্রস্তুতের দায়িত্ব resort এর লোকদেরই দেয়া হয়েছিল। কিছু সময় সাগরে হ্যান্ড ফুটবল খেলে দুপুরের খাবার সেরে যে যার যার মতো করো ঘুরে নিলাম । খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে বসলো গানের আসোর, আমরা কখনো বা এক সাথে কখনো বা একাই যে যার মতো গলা ছেড়ে গাইলাম। ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড হিসেবে ছিল সমুদ্রের গর্জন, সমুদ্রের পাড় ছিল আমাদের গানের মন্চ আর আমাদের দর্শক ছিল আকাশের লক্ষ-কোটি তারা, তারা জ্বল জ্বল করে জানান দিচ্ছিল যে তারা শুনছে। গান-আড্ডা শেষ হতে হতে প্রায় ১:৩০ এর মতো বেজে গেল। তখন ও আমি সহ আমার দুই বন্ধুর ঘুম আসছে না। আমরা জেটির দিকে হাঁটা ধরলাম। জেটিতে গিয়ে আমরা আরো এক নতুন সৌন্দর্যের আবিষ্কার করলাম, আকাশে অর্ধেক চাঁদ আর তাকে পাহারা দিচ্ছে লক্ষ-সহশ্যাধিক তারা। সব মিলিয়ে কেমন জানি এক মায়া-জাল তৈরি করেছিল ওরা। ওখানে লোকাল কিছু মানুষ ছিপ দিয়ে মাছ ধরছিল, ওদের এক জনের থেকে ছিপটা নিয়ে আমরা ও কিছু সময় বসে ছিলাম যদিও মাছ পাইনি,মাছ ধরা ধর্য্যের বেপার তা আমি জানি কিন্তু ঘুমের কাছে ধর্য্যের হার হলে যা হয় আর কি। ফিরে গেলাম আমাদের ক্যাম্পে এ পাশ থেকে ও পাশ হতেই ঘুম আর নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরলো আমার ছোট তাবুতে।
পরদিন কোরাল ফ্রাই আর ইচ্ছে মতো ডাব খেয়ে ১১ টায় ট্রলারে করে রওয়ানা দিলাম টেকনাফের উদ্দেশ্যে । দুপুরের খাবার খেয়ে লেগুনায় করে রওনা দিলাম মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার । পৌঁছালাম বিকেলে । কলাতলী বীচে আসার পর মনে হচ্ছিল স্বর্গ রাজ্য ঘুরে এখন এলাম নরকে। এতো মানুষের ভীড়ে সমুদ্র খানাই যেন দেখা ভার।
যেখানে সেন্টমার্টিন পুরো বীচ ছিল শুধু আমাদের ।।
৯:৩০ টায় ঢাকার বাস এ উঠে পড়লাম তারপর সকালে ঢাকায় ।
ঢাকা-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-টেকনাফ-মেরিন ড্রাইভ- কক্সবাজার -ঢাকা
সব খরচ গুলি সংক্ষেপে :
ঢাকা টু টেকনাফ বাস- ৯০০টাকা
টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন ট্রলারে যাওয়া আসা – ৫০০টাকা (আমাদের থেকে বেশি নিছে যাওয়া আসার ট্রলারে জেনুইন ভাড়া নাকি ১৫০ করে ৩০০ টাকা)
শিপ করে যেতে পারেন ৫৫০ থেকে শুরু করে ১০০০/১৫০০ টাকার মধ্যে(যাওয়া-আসা)
ছেঁড়া দ্বীপে রিজার্ভ বোটে যাওয়াআসা – ১৫০ টাকা

টেকনাফে ৩ বেলা, সেন্টমার্টিনে ৫ বেলা, বাসে যাওয়া আসার মাঝে ২ বেলা খাবারের খরচ – ১১৫০ টাকা( একটি কমন রুম ও বাবুর্চির বিল সহ)
টেকনাফ টু কক্সবাজার – ২০০ টাকা
কক্সবাজার টু ঢাকা – ৮০০ টাকা
আরো কিছু খুচরা খরচ – ২০০ টাকা

Post Copied From:Golpo Raj Mehu>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment