খুবই স্বল্পখরচে দুই দিনে ঘুরে আসুন বিলাইছড়ির মুপ্পোছড়া,ন’কাটা ছড়া ও ধূপপানি ঝর্না।

ঢাকা-কাপ্তাই এর সরাসরি বাসে উঠে পড়ুন। ভাড়া ৫৫০ টাকা। চেস্টা করববেন ১০ টার ভিতরের বাস ধরার। সকাল ৮.৩০ ও ১০.৩০ এই দুই সময়ে কাপ্তাই হতে বিলাইছড়ির লোকাল বোট ছেড়ে যায়। ১০ টার বাসে আসলেলে সহজেই ধরতে পারবেন। এখানের ট্রেইল গুলো খুব সময়সাপেক্ষ ও যথেষ্ট পরিশ্রমের তাই সকাল সকাল রওনা হয়ে যাওয়াটাই ভালো।বোটে ঊঠার আগে ফিরতি টিকেট করে নেয়া ভালো। এখান থেকে ঢাকার শেষ বাস ৮.৩০ এ ছেড়ে যায়। হালকা নাস্তা করে নৌকায় উঠে পড়ুন। একেবারে যথা সময়ে নৌকা ছেড়ে যাবে।
বোটে ভাড়া নিবে ৫৫ টাকা। আর বোট রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ টাকা(দামাদামির উউপর নির্ভরশীল)।১.৫-২ ঘন্টার মতো লাগে বিলাইছড়ি যেতে।
যেতে যেতে কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য আপনি না চাইলেও আপনাকে বিমোহিত করবে এবং হালকা হিমেল হাওয়া খুব সুন্দর ঘুমের আবেশ দিবে। পথে আর্মির প্রথম চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
*এখানে বলে রাখা ভালো-সবার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে সবথেকে সুবিধা। অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি সাথে রাখুন। প্রত্যেকের জন্যই লাগবে।
বিলাইছড়ি যেয়ে সোজা হাসপাতাল ঘাটের দিকে চলে যান। এখানে হোটেল বলতে নিরিবিলি হোটেল এন্ড রিসোর্ট নামে একটি হোটেল রয়েছে।সেখানে রূম ঠিক করে নিন। ৪ জনের রুম ৫০০ টাকা,দুই জনের রুম ৩০০ টাকা(ফিক্সড)। এরপরে দুইদিনের জন্য বোট ঠিক করে নিন। তিনটা ঝর্নার জন্য বোট ভাড়া পড়বে ২৫০০ টাকা।
*আমরা যে বোট নিয়েছিলাম তা ওখানের তুলনামূলক বড় বোট ছিলো। মাঝিও খুব ভালো আর বন্ধুসুলভ। ২০ জনের মতো যাওয়া যাবে। সুবিধার্থে
রওনা হবার আগে ভাতঘর নামে ওখানেই একটা হোটেল আছে সেখানে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিন।
দুপুরে আমরা ডিম ভাজি,আলু ভর্তা,ডাল,ভাত এর অর্ডার দিয়েছিলাম। খরচ ৬৫ টাকা।
নৌকায় উঠে পড়ুন। সাথে হালকা শুকনা খাবার নিতে পারেন। ৩০ মিনিটের যাত্রার পর মুপোচ্ছড়া ট্রেইলের মাথায় চলে যাবেন। এখান থেকে গাইড নিতে হবে। এখানে গাইডের খরচ ৫০০ টাকা এটা মোটামুটি ফিক্সড। হাঁটা শুরু করে দিন। ১.৫-২ ঘন্টার মতো লাগতে পারে মুপ্পোছড়ায় পৌঁছাতে (গ্রুপের ট্রেকিং অভিজ্ঞতা ও স্পিডের উপরে নির্ভরশীল)। পথে ন’কাটা ছড়া ঘুরে যাবেন। মুপোচ্ছড়ার পৌছানোর পর দেখবেন কিভাবে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। বিস্তৃত বিশাল এক ঝর্ণা। এখানে যতক্ষন ইচ্ছা জমপেশ গোসল দিয়ে নিন।
ফিরতে ফিরতে দুপুর পার হয়ে যাবে। গিয়ে খেয়ে নিন এবং বিকেলে মাঝিকে নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখতে পারবেন। আশেপাশে অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান আছে। নৌকা ঠিক করার সময় মাঝির সাথে কথা ঠিক করে নিতে হবে সেক্ষেত্রে। এর জন্য কিছু বখশিশ বা অতিরিক্ত টাকা সে দাবী করতে পারে।
রাতের খাবারে আমরা মুরগি,আলু ভর্তা,ডাল, ভাত খেয়েছিলাম। খরচ জনপ্রতি ১১০ টাকা।
ধুপপানির ট্রেইল অনেক দীর্ঘ তাই খুব সকালে রওনা দিতে হয়। চেস্টা করবেন ভোর ৬-৬.৩০ এর মধ্যে বেরিয়ে পরতে। সকালের নাস্তার জন্য রাতেই আমরা ভুনাখিচুড়ি ও ডিমভাজির অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। জনপ্রতি ৬০ টাকা করে তারা প্যাকেট করে সকালেই দিয়েয়ে দেয়। ব্রেকফাস্ট ও সাথে শুকনা খাবার ও পানি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। হোটেলে বললে তারাই কলসিতে টিউবওয়েল এর পানি দেয় অথবা কিনে নিতে পারেন।
পথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আর্মি ক্যাম্প পড়বে। সেখানে পরিচয়দান পর্ব আবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
২ ঘন্টার মতো জার্নি শেষে ধুপপানি ট্রেইলের মাথায় পৌঁছাবেন। সেখান হতে ছোট ডিঙি নৌকায় করে ২০ মিনিটের একটা পথ পারি দিতে হয়। এখানে নোকাপ্রতি ৩০০ টাকা দিতে হবে। ৪-৫ জন করে বসা যাবে। গ্রুপ হিসেবে এখানে ধুপপানি ট্রেইল সংস্কার এর জন্য ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে এবং ৫০০ টাকা দিয়ে গাইড নিতে হবে।
এর পর শুরু দীর্ঘ পথচলার। বৃস্টি হলে পথটা যেনো আরো দীর্ঘ হয়ে যায়। দোয়া করবেন যেনো বৃস্টি না হয়। তাহলে পথ এত কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে যায় যে আপনার মনে দুই একবার সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার বোধোদয় হতে পারে! দুটি পাহাড়ে উঠা লাগবে। চলার পথে সাবধানতা অবলম্বন করুন নাহয় অসংখ্যবার ধপাস ধপাস শব্দ শোনার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। চাইলে অডোমস মেখে নিতে পারেন। এখানে যেতে যেতে বিশালাকার কিছু মশক-মশকী আপনার দৃস্টি আকর্ষণ করতে পারে। ১.৪৫-২ ঘন্টার মতো অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছাবেন। সভ্যতা থেকে অনেক দূরের এই পাড়ায় ৫-৬ টা ফ্যামিলি কীভাবে জীবনধারণ করে সেটা ভেবে ভেবে চাইলে পথের ক্লান্তিটা দূর করার কিছু চেস্টা করতে পারবেন। এখানে একটা দোকান আছে সেখানে চাইলে হালকা কিছু খেয়ে নিবেন। এর পর ২৫-৩০ মিনিটের খাঁড়া একটা ঢাল আছে। কিছুদূর নামার পরেই আপনি ধুপপানির রাজকীয় গর্জন শুনতে পারবেন। এই গর্জনরত ঝর্না আপনার বাকিটা পথচলাটায় আপনার সহচর হিসেবে থাকবে।
প্রথম দেখায় প্রেম বলতে যদি আদৌ কিছু থেকে থাকে তাহলে তার প্রকৃত স্বাদ পাবেন আপনি ধুপপানির প্রথম রুপ দর্শনে। রুপে-গুনে-সৌন্দর্য্যে এই ঝর্না নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যান এই অপার সৌন্দর্য্যে। লুফে নিন যতটা পারেন। স্মৃতিতে গেঁথে নিন অমূল্য গাঁথা।
*এখানে বলে রাখা ভালো ধুপপানি হচ্ছে এক বৌদ্ধ বিক্ষুর তীর্থ স্থান। তিনি সপ্তাহে ছয়দিন ধ্যান করেন( রবিবার বাদে)। তাই এখানে এসে চিল্লাপাল্লা ও উচ্চবাচ্য করবেন না।
_
বিকেল ৪.৩০ টায় বিলাইছড়ি থেকে কাপ্তাই এর শেষ লোকাল বোট ছেড়ে যায়। এটা ধরতে হলে ধুপপানি থেকে আগেভাগেই চলে আসুন। নতুবা আস্তেধীরে এসে রিজার্ভ বোট নিয়ে কাপ্তাই চলে যেতে পারবেন। যাওয়ার আগে হালকা খাবার-দাবার সেড়ে নিন। আমরা বোট মিস করেছিলাম দেখে রিজার্ভ এসেছিলাম কাপ্তাই। আর কাপ্তাই থেকেও বাস মিস করায় চিটাগাং পর্যন্ত সিএনজি তে এসে পরে বাস ধরা লাগছে। এ কারণে এখানে আমাদের খরচ একটু বেশি গেছে।
_
আমরা ৮ জন ছিলাম। আমাদের মাথাপিছু ২৪০০ টাকার মতো লেগেছে দুইদিন একরাতে।
_
ঘুরতে গিয়ে দয়া করে কেউ পরিবেশ নস্ট করবেন না। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবেন না। দেশটা আমাদেরই তাই এর সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বটাও আমাদের।
*ভুলত্রুটি নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।
#happy_travelling

Post Copied From:Neazul Hasan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment